শ্রীলঙ্কায় তিন শতাধিক পণ্যে আমদানি বিধিনিষেধ শিথিল

শ্রীলঙ্কা সরকার সে দেশে তিন শতাধিক পণ্য আমদানিতে আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। গতবছর বৈদেশিক রিজার্ভ সংকটের জেরে এসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে গতকাল এসব বিধিনিষেধ শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। বিষয়টি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিচ্ছে।

আমদানি সহজীকরণ শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিচ্ছে

জানা গেছে, ইলেকট্রনিকস, সী ফুড, স্যানিটারি ওয়্যার, রেডিও রিসিভার, রেলগাড়ির বগি, মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টসহ তিনশ’র বেশি আইটেম (এইচএস কোড) আমদানিতে আরোপিত সীমা ও বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। গতবছর শ্রীলঙ্কার নজিরবিহীন রিজার্ভ সংকটের সময় বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের জন্য প্রায় ৩ হাজার ২০০ পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়।

গত ১ জানুয়ারি বিধিনিষেধভুক্ত পণ্যের তালিকা সংশোধন করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এবার তালিকাটি আরেক দফা সংশোধনের মাধ্যমে বেশকিছু বহুল ব্যবহৃত পণ্যকে আমদানিতে বিধিনিষেধের আওতামুক্ত করা হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শেহান সেমাসিংহে আজ এক টুইটে বলেছেন, আমদানি বিধিনিষেধ শিথিলের বিষয়টি এ মর্মে জোরালো বার্তা দেবে যে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি এখন বাণিজ্যের জন্য উম্মুক্ত এবং দেশটি এখন ট্র্যাকে ফিরেছে। নতুন এ পদক্ষেপ অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করবে, মূল্যস্ফীতির প্রভাব কমাবে এবং বাজারে স্থিতিশীলতা আনবে।

তিনি বলেন, আমদানি বাড়লে ভোক্তারা কম দামের বিকল্প খুঁজে নিতে পারবে এবং বাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল হবে। আমরা আশা করছি পণ্যমূল্য নির্ধারণের এ সুফল যথাশীঘ্রসম্ভব ভোক্তাদের কাছে স্থানান্তর হবে। তবে আমাদেরকে বৈদেশিক রিজার্ভ, মুদ্রা বিনিময় হার ও স্থানীয় শিল্পের ওপর প্রভাব কমানোর বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। সরকার আশা করছে সব আমদানিকারক অর্থনীতির টেকসই প্রবৃদ্ধির স্বার্থে দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করবেন।

গত বছরের প্রথমার্ধে তলানিতে ঠেকার পর শেষদিকে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। গত ৯ মাসে দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ২৯০ কোটি ডলার বেইলআউট ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে। এতে করে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমেছে।

রেমিট্যান্স অন্তঃপ্রবাহ ও পর্যটন খাতের আয়ে ভর করে মে মাসে দেশটির রিজার্ভ ২৬ শতাংশ বেড়ে ৩৫০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ১৭ মাসে সর্বোচ্চ। চলতি বছর শ্রীলঙ্কার মুদ্রার মান ২৪ শতাংশ বেড়েছে বলে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে জানা যায়।

শ্রীলঙ্কার অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, অর্থনীতি স্থিতিশীল হতে থাকায় ২৮৬টি এইচএস কোডে আমদানি বিধিনিষেধ শুক্রবার মধ্যরাত থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। যানবাহন সহ ৯২৮টি আইটেম আমদানিতে বিধিনিষেধ বহাল থাকবে।

চলতি সপ্তাহ থেকে জরুরি ৬০টি ওষুধের দাম ১৬ শতাংশ কমাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে দেশটির ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতি জরুরি ওষুধ তালিকার মধ্যে ১৬০টি আইটেমের মজুত শেষ হবার কথা জানায়। সেখান থেকে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তরণ হয়েছে।

অর্থনৈতিক সংকট কিছুটা লাঘব হলেও আইএমএফের ঋণের পরের কিস্তি পেতে শ্রীলঙ্কাকে সেপ্টেম্বরের আগেই সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনা শেষ করতে হবে। এজন্য বেশকিছু সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে।

চলতি বছর শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ৩ শতাংশ সংকোচন হবে বলে আইএমএফ মনে করছে। গত বছর দেশটির অর্থনীতির সংকোচন ছিল ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। শ্রীলঙ্কা সরকার আশা করছে, আগামী বছর নাগাদ অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরবে।