অথচ হৃদয়ের ভাবনায় নেই এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাওহীদ হৃদয়ের শুরুটা হয়েছে স্বপ্নের মতো। অভিষেকের পর থেকে ধারাবাহিক পারফর্ম করে চলছেন তিনি। দারুণ ফর্মে থাকলেও জাতীয় দলে নিজেকে অটো-চয়েস ভাবতে নারাজ এই তরুণ ব্যাটার। হৃদয়ের ভাবনা জুড়ে বর্তমান। এখনই ভাবতে চান না এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ নিয়ে। জানিয়েছেন হৃদয় নিজেই।

তরুণ ব্যাটার তাওহীদ হৃদয়

যুব ক্রিকেটে দ্যুতি ছড়িয়েছেন তাওহীদ হৃদয়। এরপর এইচপি ও ‘এ’ দলের হয়ে খেলেছেন। সবশেষ বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে নির্বাচকদের নজরে আসেন হৃদয়। চলতি বছরের মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে ৯২ রানের ইনিংস খেলে রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি হৃদয়কে। সাদা বলের ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করে চলছেন, হয়ে উঠেছেন দলের অপরিহার্য এক সদস্য।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার সিরিজ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন হৃদয়। সিলেটে প্রথম ম্যাচে ম্যাচ উইনিং ৪৭ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। সিলেটে সিরিজ জয়ের মিশন শেষ করে ১০ দিনের বিশ্রাম পেয়েছেন হৃদয়সহ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। ছুটি কাটাতে দেশের বাড়ি বগুড়ায় যাবেন হৃদয়। এর আগে মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) মিরপুরে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন হৃদয়। সেখানে জানিয়েছেন বেশকিছু কথা।

সাম্প্রতিক সময়ে হৃদয় যেমন ধারাবাহিক পারফর্ম করছেন তেমনি দুর্দান্ত ক্রিকেট উপহার দিচ্ছে বাংলাদেশ। হঠাৎ কিভাবে এত পবিবর্তন? উত্তরে হৃদয় জানান, তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশলেই দেখা মিলেছে নতুন বাংলাদেশের, ‘এখন যারা রয়েছে তারা খুব ভালো টিম মেট। দলের প্রয়োজনে সবাই অবদান রাখার চেষ্টা করে। আমি মনে করি, সামনে ইনশাআল্লাহ আরও ভালো করবে বাংলাদেশ।’

টি-টোয়েন্টিতে টানা তিন সিরিজ জয়। এ যাত্রায় ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজেদের সেরা ফর্মে ফেরার পেছনের গল্পটি কেমন সেটি জানাতে গিয়ে হৃদয় বলেন, ‘পরিবর্তন তো এসেছেই। আমরা চেষ্টা করছি ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার। ধীরে ধরে আমরা মানিয়েও নিচ্ছি।’

দলের এমন ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের মতো হৃদয়ও পারফরম্যান্স করে চলছেন নিয়মিত। আপাতত জাতীয় দলে নিয়মিত হলেও নিজেকে অটো-চয়েজ মানতে চান না তিনি। হৃদয়ের মতে, পারফর্ম করতে হবে, দলের জয়ে অবদান রাখতে হবে। তবে নিজেকে নিয়ে লম্বা কোনো চিন্তা করতে চান না তিনি।

হৃদয়ের ভাষায়, ‘লম্বা চিন্তা করতে ভালো লাগে না, সবসময় বর্তমানে থাকার চেষ্টা করি। বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশেই অটো-চয়েজ বলে কিছু নেই। দলে থাকাটা নির্ভর করে পারফরম্যান্সের ওপর, অটো-চয়েজ বলতে কিছু নেই। দলে থাকতে হলে বোলার - ব্যাটার যার যে রোল সেটি পালন করতে হবে, দলের প্রয়োজনে অবদান রাখতে হবে।’

পারফরম্যান্স বিবেচনায় তাওহীদ হৃদয় এখন দলের নির্ভরযোগ্য নাম। নিয়মিত রান করলেও হৃদয় মনে করেন দলের জয়ে যদি না আসে তাহলে সেই রানের কোনো মূল্য নেই। হৃদয়ের কাছে করেন দলের জয়টাই মূখ্য, ‘না (রান করা সহজ না)। আসলে রান করলে সহজ মনে হয়, না করলে কঠিন। এটাই স্বাভাবিক। ওয়ানডেতে ফিফটি করলেও ফলাফল আমাদের পক্ষে আসেনি, আমার মতে এই ফিফটির কোন দাম নেই।’

বর্তমানে মিডল অর্ডারে ভরসার নাম হয়ে উঠেছেন হৃদয়। অভিষেকের পর ৯ ওয়ানডেতে ৪৮.২৮ গড়ে ৩৩৮ ও টি-টোয়েন্টিতে ৮ ম্যাচে ২৬ গড়ে ১৫৬ রান করেছেন হৃদয়। তবে হৃদয় মনে করেন দলে জয়ে অবদান রাখতে পারাটাই বেশি আনন্দের। আলাদা ভালো লাগা কাজ করে, ‘একজন ব্যাটার হিসেবে আমার ভূমিকাই হলো দলের হয়ে অবদান রাখা। আমার অবদানে যদি দল জেতে তাহলে ভালো লাগে। শুধু আমার না, প্রতিটি খেলোয়াড়েরই ভালো লাগে৷ আর যদি ম্যাচ শেষ করে আসতে পারি তাহলে আরও ভালো লাগে।’

১০ দিনের ছুটি শেষে এশিয়া কাপের কন্ডিশনিং ক্যাম্পে ফিরবেন তাওহীদ হৃদয়। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ নিয়ে হৃদয়ের ভাবনা জানতে চাওয়া হলে হৃয়দ জানান এসব নিয়ে কোনো চিন্তা করছেন না তিনি। তবে সুযোগ পেলে সেরাটা দিতে চেষ্টা করবেন, ‘এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ নিয়ে এখনও চিন্তা করিনি। আমার আসলে লম্বা চিন্তা করতে ভালো লাগে না। বর্তমান নিয়ে থাকতে চাই। যদি এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে সুযোগ হয়, তাহলে আমি কেন, সব খেলোয়াড়ই চাইবে সেরাটা দিয়ে দলে অবদান রাখতে।’