আপনি পড়ছেন

"তাজউদ্দীন পরিবারকে আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র চলছে" -এ রকম একটা কথা ২০১৮ সালে বলেছিলেন, তাজউদ্দীনপুত্র সোহেল তাজ। রাজনীতি যখন দখলের মাঠ, কামড়াকামড়ির খোলা ময়দান, তখন রাজনীতি ছেড়ে অরাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলতে চাইলে রাজনীতি থেকে বিচ্যুত হবেনই। নাকি?

tajuddin ahmadতাজউদ্দীন আহমদ

রাজনীতি এক নিষ্ঠুর খেলা। সে খেলার মাঠে দৌঁড়াতে গিয়ে কম নিষ্ঠুরতার মুখোমুখি হতে হয়নি বঙ্গবন্ধুকেও। আমরা দেখেছি, 'রাজনীতি' নামের এ নিষ্ঠুর খেলায় প্রজ্ঞাবান নেতা তাজউদ্দীন আহমদ এবং তার নীতি আদর্শের উত্তরাধিকাররা বাংলাদেশের রাজনীতিতে খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারেননি। ফলে, খেলায় সেদিনও যে রেজাল্ট দেখেছিল দর্শক নামের জনতা, আজও তারা সেই নির্বোধ দর্শকই রয়ে গেল। পাশাপাশি এ কথাও আমাদেরকে বলতে হবে যে, তারই পরিণতিতে খেলার মাঠ থেকে দূরে সরে যান তাজউদ্দীন সাহেব। সেই যে গেলেন আর ফিরতে পারেননি। ফিরতে পারেননি দেশ নিয়ে গভীর চিন্তার প্রজ্ঞাবান এক দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। ফিরতে পারেননি তাজউদ্দীন আহমদের রাজনৈতিক নীতি-আদর্শের অনুসারীরাও।

"যখন তুমি কোন ভদ্রলোকের সঙ্গে খেলবে তখন তোমাকে ভদ্রলোকের মতোই খেলতে হবে। আর যখন তুমি কোনো বদমাশের সঙ্গে খেলবে, তখন তোমাকে এর চেয়েও বড় বদমাশ সাজতে হবে। তা না হলে তুমি নিশ্চিত হারবে"

উপরে উল্লেখিত এমন একটি কথা নাকি বলেছিনেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অ্যান্থনী মাসকারেনহাসের লেখা 'বাংলাদেশ : এ লিগ্যাসি অব ব্লাড' বইয়ে তার উল্লেখ আছে বলে জেনেছি।

তাহলে এ কথাটা আমরা এভাবেও বলতে পারি, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সূত্রমতেই খন্দকার মোশতাকদের কাছে পরাজিত হয়েছিল তখনকার স্বাভাবিক রাজনীতি। তারই পরিণতিতে খেলার মাঠ থেকে দূরে সরে যান তাজউদ্দীন সাহেব। সেই যে গেলেন আরতো ফিরতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ফিরেছিলেন বটে, জেলখানায় ইতিহাসের বর্বর এক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে। ফিরেছিলেন নিথর-নীরব লাশ হয়ে।

সে রাজনীতির ধারাবাহিকতা '৭৫ পরবর্তী সময়েও আমরা দেখেছি। এমনকি তার 'বডিবিল্ডার বা ব্যায়ামবিদ' পুত্রও উপরে উল্লিখিত বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বাণীটিরই ফলে যাওয়া উত্তরসূরি। ফলে, শারীরিকভাবে ফিট ব্যায়ামবিদ হলেও রাজনীতির খেলার মাঠে তিনি আনফিট হয়েই রয়ে গেলেন। তাই টিভি টক শো'র হোস্ট বা অ্যাংকর হয়ে লোকের দরজায় টোকা দিতে দিতে তাকে আমরা দেখেছি। কিন্তু মানুষকে পরিচ্ছন্ন রাজনীতির আহবান জানিয়েও তিনি মাঠে আনতে পারেননি। বরং তিনি নিজেই ছিটকে গেছেন।

এবারের ঈদে কোনো এক টিভিতে তাজউদ্দীন আহমদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে করা একটি অনুষ্ঠান দেখেছিলাম। সে অনুষ্ঠানে সোহেল তাজের রাজনীতিতে ইন এবং আউটের প্রহেলিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তাকে আবেগপ্রবণ হয়ে উঠতে দেখেছি। তিনি কাঁদছিলেন, দর্শকরা এমনটাই দেখেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সোহেজ তাজরা চোখের জলে দাম পরিশোধ করেন। এই হলো সরল সত্যি। যাই বলেন, এটাই নিয়তি বা পরিণতি। এটাই বাংলাদেশে তাজউদ্দীন রাজনীতির ডিলেমা।

তাজউদ্দীন আহমদের রাজনৈতিক দলটি টানা তিন মেয়াদ ক্ষমতায়। বলা যায়, দলটির ক্ষমতার সবচাইতে রমরমা সময় গেছে বা যাচ্ছে। কিন্তু এই সময়ে এসেও তাজউদ্দীনের প্রজ্ঞা ও পরিশ্রমী রাজনীতির সুকীর্তি নিয়ে তার অনুসারীদের দুটি কথা বলতে গেলে, অনেককে তিনবার ঢোক গিলতে হয়, এমনটাই অনেকে বলে থাকেন।

তারপরও আমরা বলতে পারি যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, যতদিন স্বাধীনতাযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর কথা উচ্চারিত হবে, যতদিন মানুষের জন্য নির্মোহ রাজনীতিকরা জন্মাবেন, ততদিন সে রাজনীতির অগ্রপথিক হিসাবে আপনার নামও উচ্চ্চারিত হবে প্রিয় তাজউদ্দীন আহমদ।

শুভ জন্মদিন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। আজকের এই দিনে আপনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা...

মোজাব্বীর হাসান
ক্রিয়েটিভ লিড, বণিক বার্তা

প্রিয় পাঠক, ভিন্নমতে প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু, রচনারীতি ও ভাবনার দায় একান্ত লেখকের। এ বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর