জেলেনস্কির অবর্তমানে কী হবে ইউক্রেনের, যা জানাচ্ছে পলিটিকো

চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বেশ কয়েকবার ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপর হামলা হয়েছে। প্রতিবারই হামলা ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে জেলেনস্কি যদি কোনো হামলায় নিহত হন, তাহলে ক্ষমতা কার কাছে যাবে, কিভাবে দেশ পরিচালিত হবে? এ বিষয়ে এরইমধ্যে পরিকল্পনা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে দ্য পলিটিকো।

ভলোদিমির জেলেনস্কির

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া হামলা শুরু করলে অনেকেই মনে করেছিলেন কমেডি শো থেকে আসা জেলেনস্কি পালিয়ে যাবেন এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাশিয়া ইউক্রেন দখল করে নেবে। কিন্তু সবার সে ধারণা মিথ্যে করে দিয়ে পাল্টা প্রতিরোধে নামেন জেলেনস্কি। সেই সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বকে তার পক্ষে আনতে সক্ষম হয়েছেন।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে জনমত সংগ্রহের ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন জেলেনস্কি। সে কারণেই রাশিয়া বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে তাকে রুশ হামলার শীর্ষ টার্গেট বলে মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় যদি রুশ হামলায় জেলেনস্কি নিহত হন, তাহলে সেটি দেশটির জন্য বড় একটি ধাক্কা হিসেবেই বিবেচিত হবে।

ইউক্রেনের পার্লামেন্ট

জেলেনস্কির শীর্ষস্থানীয় উপদেষ্টা মিখাইল পোডোলিয়াক জানিয়েছেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে চেচেন ও ওয়াগনার ভাড়াটে সৈন্যরাসহ রাশিয়ান বিভিন্ন দল বেশ কয়েকবার তার ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের সব হামলাই ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। মার্কিন সিনেটরদের সাথে একটি জুম মিটিংয়ে জেলেনস্কি বলেছিলেন, এটাই হয়ত তার সর্বশেষ সাক্ষাৎ। শীঘ্রই তিনি হামলার শিকার হয়ে নিহত হতে পারেন।

ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট যদি কোনোভাবে নিহত হন, তাহলে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব চলে যাবে ইউক্রেনের পার্লামেন্ট ভারখোভনা রাদার চেয়ারম্যান বা স্পিকারের হাতে। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত স্পিকারের নেতৃত্বে সেখানে একটি সম্মিলিত সরকার থাকবে।

আটলান্টিক কাউন্সিলের ইউরেশিয়া কেন্দ্রের অন্যতম সিনিয়র ফেলো অ্যাড্রিয়ান কারাতনিটস্কি বলেন, ইউক্রেনে একটি ‘শক্তিশালী দল’ রয়েছে। কোনোভাবে প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হলে তারা একটি ‘সম্মিলিত সরকার’ পরিচালনা করবে।

গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন পার্লামেন্টের স্পিকার হিসেবে রুসলান স্টেফানচুক। তার সঙ্গে আরও রয়েছেন সাবেক চলচ্চিত্র প্রযোজক আন্দ্রেই ইয়ারমাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভ। দেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে সে কমিটিতে থাকবেন ভ্যালেরি জালুঝনিইও।

অ্যাড্রিয়ান কারাতনিটস্কি বলেন, বর্তমানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংহতি এবং জাতীয় ঐক্যের একটি বিন্দুতে অবস্থান করছে ইউক্রেন। তাই জেলেনস্কির সঙ্গে যদি ভয়ানক কিছু ঘটেও যায়, তাহলে নেতৃত্বশূন্য হবে না দেশটি। দেশটিতে একটি সুসমন্বিত প্রশাসনিক, সামরিক ও কূটনৈতিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।

তিনি বলেন, জেলেনস্কির সঙ্গে কিছু হবেই, এমনটা আমি বলছি না। তবে আমি মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঐক্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আর ইউক্রেনে সেটা রয়েছে।