তুরস্কে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার করার দাবি

তুরস্কে সাপ্তাহিক ছুটির দিন পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও দীর্ঘদিনের ধারাবাহিকতায় তুরস্কে সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি শনিবার ও রোববার। রোববারের ছুটি শুক্রবারে নিয়ে আসার দাবি তুলেছেন সে দেশের মুসলমানরা। খবর আল জাজিরা মুবাশ্বির।

তুরস্কের আয়া সোফিয়া মসজিদ

এর আগেও নানা সময়ে তুরস্কের সাপ্তাহিক ছুটির দিন পরিবর্তনের দাবি উঠেছিল। গত শুক্রবার (৪ আগস্ট) দেশটির ধর্মবিষয়ক প্রধান ড. আলি আরবাশ জুমার বয়ানে এ নামাজে সবার অংশগ্রহণের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আসুন, আমরা কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী বন্ধুসহ সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্য জুমার নামাজে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করি। জুমার নামাজ আদায়ের সুযোগ রেখেই আমরা কর্মঘণ্টা ও স্কুলের ক্লাসের সময়সূচি তৈরি করি।

তার এ আহ্বানের পর থেকেই মূলত শুক্রবারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঘোষণার দাবি জোরদার হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা চলছে। অবশ্য তুরস্কের বিরোধী দল পিপলস লিবারেশন পার্টি (ডিএইচকেপি) এ দাবির বিরোধিতা করছে। বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হলে তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষতা লঙ্ঘন হবে বলে মন্তব্য করেছে তারা।

তুরস্কে জুমার নামাজ

আগে তুরস্কে শুক্রবারকেই সাপ্তাহিক ছুটির দিন বিবেচনা করা হতো। তবে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ ও পশ্চিমা রীতি অনুকরণের অংশ হিসেবে ১৯৩৫ সালের ২৭ এপ্রিল সরকারি ছুটি পরিবর্তনের একটি আইন পাস করা হয়। সে আইন অনুসারে তুরস্কে শুক্রবারের বদলে রোববার সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার প্রেক্ষিতে আয়া সোফিয়ার সাবেক ইমাম বুইয়ানুকালিন বলেন, তুরস্কের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী মুসলিম সম্প্রদায়ের। অথচ সেখানে শনিবার ও রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিন, যা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সম্মানিত দিন। মুসলিমদের পবিত্র দিন শুক্রবারের দিকে নজর দেওয়া হয়নি। এখন বিষয়টি বিবেচনা করার সময় এসেছে। উলিফিয়া নামে একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, এখন সময় এসেছে শুক্রবারকে ছুটির দিন ঘোষণা করার।

এদিকে শুক্রবারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঘোষণার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া দেশটির বিরোধী দল পিপলস লিবারেশন পার্টি (ডিএইচকেপি) দেশটির ধর্মবিষয়ক প্রধানের (ড. আলি আরবাশ) বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে। তার বিরুদ্ধে সংবিধান অবমাননা ও পদের অপব্যবহারের অভিযোগ এনেছে ডিএইচকেপি । দলটির আইনজীবী আয়েশা উকুর মন্তব্য করেন, আমাদের দেশ ধীরে ধীরে ফ্যাসিবাদী মধ্যযুগীয় ধর্মতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্সি অব রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স কর্তৃক প্রকাশিত শুক্রবারের খুতবা সাধারণ মানুষের জীবনে ধর্মীয় হস্তক্ষেপের শামিল। আমরা সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা করে যাব।

এছাড়া তুরস্কের ফেডারেশন অব উইম্যানস অ্যাসোসিয়েশনও সাপ্তাহিক ছুটির দিন পরিবর্তনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা তুরস্কের ধর্মীয় অধিদপ্তর কর্তৃক জুমার নামাজের সময় অনুসারে কর্মঘণ্টা ও ক্লাসের রুটিন সাজানোর দাবিকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা পরিপন্থী অভিমত’ বলে আখ্যায়িত করেছে।