যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঙ্গরাজ্য হাওয়াইয়ের মাউই কাউন্টিতে ভয়াবহ দাবানলে এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন নিহত হয়েছে। তবে দাবানলের পরে উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলোর অবস্থা এতটাই নাজুক যে, সেগুলো ওঠাতে গেলেই ভেঙে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত মাত্র দুটি মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সাম্প্রতিক এই দাবানলকে দেশটির এক শতাব্দীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। খবর নিউইয়র্ক পোস্ট।

পুড়ে যাওয়া হাওয়াই

মাউই পুলিশ প্রধান জন পেলেটিয়ার সেখানকার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেন, হতাহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। উদ্ধারকৃত মৃতদেহগুলোর অবস্থা এতটাই নাজুক যে, উদ্ধারকর্মীরা সেগুলো ওঠাতে গেলেই  ভেঙে যাচ্ছে এবং মাটিতে মিশে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি মরদেহগুলো শনাক্ত করতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের তাদের প্রিয়জনের ডিএনএ নমুনা সরবরাহ করার আহ্বান জানান।

পুলিশের হিসেব মতে, এখনও ১৩০২ জন নিখোঁজ রয়েছে। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মাউইর লাহাইনা শহরটি পর্যটকদের কাছে বেশ প্রিয় ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক এই দাবানলে ঐতিহাসিক এই শহরের প্রায় সব অবকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। মাউই দ্বীপের পশ্চিমাংশে এখনও বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক হয়নি। ফলে সেখানে কঠিন সময় কাটাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

দাবানলের পর বিধ্বস্ত হাওয়াই

হাওয়াইয়ের গভর্নর জোশ গ্রিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মনে হচ্ছে মাউইতে ভয়াবহ এক বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে। পশ্চিম মাউইতে কমপক্ষে ২২০০টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে এবং ২ হাজার ১০০ একরের (৮৫০ হেক্টর) বেশি পুড়ে গেছে। এতে মোট ৬০০ কোটি ডলারের সম্পদ নষ্ট হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই এলাকাকে পুনর্নিমাণ করতে অনেক বছর সময় লেগে যাবে।

গত মঙ্গলবার হাওয়াইয়ের পশ্চিম উপকূলে হঠাৎ করেই দাবানল ছড়িয়ে পড়ে এবং দ্রুত সেটি সমুদ্র তীরবর্তী শহর লাহাইনাকে গ্রাস করে। আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছিল হ্যারিকেন। হারিকেনের প্রচণ্ড বাতাস যুক্ত হয়ে দাবানলটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। দাবানলটি এত দ্রুত পুরো এলাকা দখল করে নেয় যে, মানুষজন বিভিন্ন রাস্তায় আটকে পড়ে। অনেকে পালানোর জন্য কোনো উপায় না পেয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা দাবানলের এই ভয়াবহতার জন্য প্রশাসনকেই দায়ী করছেন। তারা বলছেন, দাবানলের ভয়াবহতাকে অবহেলা করা এবং সময়মত সতর্কবার্তা না দেওয়ার কারণেই এত বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাওয়াই কর্তৃপক্ষ বলছে, স্থানীয়দের এই অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হবে।