সম্পর্কে টানাপোড়েন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করল কানাডা

খালিস্তান বিতর্ক নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ভারতের সঙ্গে বহুল প্রতীক্ষিত ‘বাণিজ্য মিশন’ নামের বাণিজ্যচুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। আগামী অক্টোবরে দুই দেশের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। তবে কারণ উল্লেখ না করেই শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এ ঘোষণা দেন কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী ম্যারি নাগের মুখপাত্র শান্তি কসেন্টিনো। খবর আল জাজিরা।

জি২০ সম্মেলনে মোদি ও ট্রুডো

শান্তি কসেন্টিনো বলেন, ভারতে আসন্ন বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করছি আমরা। কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রীর ভারত সফরও মুলতবি করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

গত মে মাসে কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী ম্যারি নাগ এবং ভারতের পীযূষ গোয়াল এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, ২০২৩ সাল শেষ হওয়ার আগেই স্বাক্ষরিত হবে বহু আকাঙ্ক্ষিত ‘বাণিজ্য মিশন’। এটি বাস্তবায়িত হলে দুই দেশের পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে রীতিমতো উল্লম্ফন ঘটবে বলে তারা আশা প্রকাশ করা হয়েছিল।

কানাডায় খালিস্তান আন্দোলন

মূলত জি-২০ সম্মেলনের সময় কানাডায় খালিস্তানপন্থী ও সমর্থকদের কার্যকলাপ এবং ভারতের কূটনৈতিক মিশনের বিরোধিতা নিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার জেরেই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি আপাতত স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা আসলো। ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ‘কানাডায় রাজনৈতিক ইস্যুতে’ তারাই আগে বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা স্থগিতের কথা জানিয়েছে।

জি-২০ সম্মেলন থেকেই এ সম্পর্কে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। সে সময় অনেক রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হলেও জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়নি। তখন থেকে দুই দেশের সম্পর্কের শীতলতা নিয়ে গুঞ্জন উঠতে থাকে। শুক্রবার তারই প্রতিক্রিয়া দেখা গেল।

উত্তর আামেরিকার দেশ কানাডায় এখন ১৩ লাখের বেশি শিখ বসবাস করে, যাদের অধিকাংশই ভারতীয় বংশোদ্ভূত। বর্তমানে তারা কানাডার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বেশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠেছে। এমনকি ট্রুডোর মন্ত্রিসভাতেও জায়গা করে নিয়েছে শিখ সম্প্রদায়ের লোকেরা। ২০১৭ সালে ভারতের পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, কানাডার প্রশাসন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছে। এরপর ধীরে ধীরে কানাডায় ‘খালিস্তান আন্দোলন’ শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু মোদি সরকারের অনুরোধ সত্ত্বেও কানাডার সরকার তাদের প্রতিহত করেনি। এ কারণে দুই দেশের সম্পর্ক খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। দিল্লিতে সদ্য শেষ হওয়া জি-২০ সম্মেলনের এক ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শিখ ইস্যুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সমালোচনা করেন।

এদিকে দিল্লিতে ট্রুডোর বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ার পর তিনি অতিরিক্ত ৩৬ ঘণ্টা ভারতে অবস্থান করেছিলেন। তবে এই দীর্ঘ সময়েও মোদি-ট্রুডোর মধ্যে কোনো বৈঠক হয়নি। এমনকি ট্রুডোকে বিদায় জানানোর সময়ও মোদির দেখা মেলেনি। একজন মন্ত্রী ট্রুডোকে বিদায় জানান। পুরো বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবেই দেখছে কানাডা।