আপনি পড়ছেন

দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জেরে প্রায় পুরো বিশ্বই দুই বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মোটামুটি নিশ্চিত করেই বলা যায়, কোন দেশ কোন পক্ষ নিয়েছে। তবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তার কৌশলী নেতৃত্বে এখনও নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছেন। এখনও উভয় পক্ষের কাছে তিনি সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরিচিত। খবর আল জাজিরা।

erdogan putin zelenskyএরদোয়ান

সম্প্রতি মার্কিন চ্যানেল পিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তার কৌশলী অবস্থান বজায় রেখে বলেন, তার কাছে রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্ব সমানভাবে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত। এ সময় তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি চান যত দ্রুত এই সংঘাত শেষ করতে। আমি তার কথা বিশ্বাস করি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এরদোয়ানকে দেখতে সাদাসিধে একজন ব্যক্তি মনে হতে পারে। কিন্তু তিনি একই সঙ্গে যুদ্ধরত রাশিয়া, ইউক্রেন, পশ্চিমা বিশ্ব এমনকি চীনের সঙ্গেও তার সতর্ক ভারসাম্য বজায় রেখেছেন। এর ফলে সবার কাছে যেমন তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তেমনি সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে তুরস্ককে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হচ্ছে। এ সুযোগে এরদোয়ান তার দেশের জন্য প্রচুর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা আদায় করে নিচ্ছেন। এ বছরের শুরুর দিকে তুরস্কে ভূমিকম্পে পুরো বিশ্বের এগিয়ে আসাটা এরদোয়ানের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ কূটনীতিরই একটি বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

কিয়েভভিত্তিক বিশ্লেষক আলেক্সি কুশচ বলেন, চলমান ভূ-রাজনৈতিক সংঘর্ষের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট- পশ্চিম বিশ্ব, রাশিয়া ও চীনের ব্যাপারে ভারসাম্য বজায় রেখে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন এরদোয়ান। এর ফলে তিনি সবদিক থেকে সর্বাধিক সুবিধা আদায় করে নিচ্ছেন। পশ্চিমা বিশ্ব থেকে বাজার, প্রযুক্তিসহ আধুনিক অর্থনীতির সুবিধা, রাশিয়া থেকে সস্তায় কাঁচামাল, জ্বালানি ও প্রাকৃতিক গ্যাস হাব এবং চীন থেকে বিনিয়োগ আদায় করে নিচ্ছেন তিনি।

তাকে একজন দক্ষ বাজার ব্যবসায়ীর সঙ্গে তুলনা করে কিয়েভভিত্তিক আইটি বিশ্লেষক ভ্যালেনটিন আলেকসাশেঙ্কো বলেন, কারো সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি হাসেন, তার পরিবারের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যা চান, তা হলো আপনার কাছে থাকা অর্থ এবং অন্য ক্রেতার কাছে আপনার সুপারিশ। এরদোয়ানও এভাবেই নিজের কূটনীতি পরিচালনা করে আসছেন। এবং তাকে ছাড়া অন্যদের আসলেই কোনো উপায় নেই, বিকল্প নেই।

ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি তেমনই। এরদোয়ানের সঙ্গে রাশিয়ার মিত্রতা থাকলেও কিয়েভ থেকে এরদোয়ানের দূরে সরে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ সম্প্রতি এরদোয়ান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে একজন ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছেন, ইস্তাম্বুলে একটি লাল-গালিচা সংবর্ধনা দিয়েছেন। এছাড়া ইউক্রেনের যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি এবং কৃষ্ণ সাগরের মাধ্যমে ইউক্রেনীয় গম পাঠানোর জন্য ‘শস্য চুক্তি’ সই ও তার সম্প্রসারণে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।

এরদোয়ানের জামাতার কোম্পানির উৎপাদিত বায়রাক্তার ড্রোনগুলো রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে এতটাই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছিল যে, ইউক্রেনীয়রা পরবর্তীতে সময়ে, তাদের রেডিও স্টেশন, মোবাইল ফোন এমনকি খাবারের নামও পাল্টে বায়রাক্তারের নামে রাখে।

রাশিয়াও মনে করে তার বক্তব্য আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম এরদোয়ান। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি একাধিকবার পুতিনের সঙ্গে দেখা করেছেন, আলোচনা করেছেন, যা অন্য কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি। আবার রাশিয়ার প্রতিবেশী কিছু দেশ তার পক্ষে থাকলেও বিশ্বমঞ্চে তাদের আওয়াজ পৌঁছানোর সক্ষমতা কম। ফলে মাঝে মধ্যে এরদোয়ানের ওপর ক্ষিপ্ত হলেও তুরস্কের কোনো বিকল্প নেই মস্কোর কাছে।

একই অবস্থা যুদ্ধরত প্রতিটি পক্ষের জন্য। এরদোয়ানের মতো শক্তিশালী কোনো মাধ্যম এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি, যার কথা সবাই শুনবে। এরদোয়ান এ সবই করেন নিজেদের দেশের স্বার্থ ঊর্ধ্বে রেখে। এ জন্য কখনো তিনি কোনো পক্ষের সঙ্গে আপস করেন, কখনো বিরোধিতা করেন।

ইস্তাম্বুলের আইসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সেদা ডেমিরালপ বলেন, তুরস্কের ভোটারদের এরদোয়ান এ বিষয়টি ভালোভাবেই বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন, যার প্রতিফলন দেখা গেছে গত নির্বাচনে। তার ভোটাররা নিশ্চিত হয়েছেন, কোনো পক্ষ না নিয়ে বরং একটি স্বাধীন অবস্থানই তুরস্কের স্বার্থকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত করে। এরদোয়ান এখন এমন এক অবস্থানে রয়েছেন, যেখানে যত হতাশই হোন না কেন, ব্রাসেলস, ওয়াশিংটন ও মস্কোর বারবার এরদোয়ানের কাছে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.