ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমাদের সমর্থন কমছে?

রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইউক্রেনকে গত দেড় বছর ধরে সমর্থন দিয়ে আসছে। তবে সময় যত অতিবাহিত হচ্ছে, ইউক্রেনের বন্ধুর সংখ্যা কমে আসছে, হ্রাস পাচ্ছে কিয়েভকে দেওয়া সহায়তার পরিমাণও। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন দেশের নির্বাচনী রাজনীতিই এর পেছনে নেপথ্য কারণ হিসেবে কাজ করছে।

কমছে ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা

সম্প্রতি স্লোভাকিয়ায় রাশিয়াপন্থী দলের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে এ ইস্যুটি উঠে এসেছে। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দল স্মার পার্টি নির্বাচনের সময় ইশতেহারে বলেছিল, তারা জয়লাভ করতে পারলে ইউক্রেনকে একটি বুলেটও দেবে না। এ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তারাই জয়লাভ করেছে। অথচ গত দেড় বছর ধরে দেশটির সরকার কিয়েভকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সহায়তা প্রদান করে আসছিল।

প্রতিবেশী পোল্যান্ডেও নির্বাচন আসন্ন। নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আইন ও বিচার পার্টি ইউক্রেন থেকে শস্য আমদানি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গরীব কৃষকদের রক্ষা করতেই তারা এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করেছে। এ নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে বাদানুবাদ হলেও পোল্যান্ড সরকার তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি। এর পেছনে নির্বাচন নিয়ে চিন্তাই কাজ করছে বলে ধারণা করছেন রাজনীতি বিষয়ক বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রে আগামী বছর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সে নির্বাচনেও অবধারিতভাবে ইউক্রেনের বিষয়টি উঠে আসবে। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যেখানে অবারিতভাবে ইউক্রেনকে সহায়তা দিয়ে আসছেন, রিপাবলিকানরা কিন্তু মোটেও সে রকম নয়। তারা এর আগেও অনেকবার ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে। এই দলটি ক্ষমতায় আসলে হয়ত ইউক্রেনকে দেওয়া সহায়তা পুরোপুরি বন্ধ হবে না। কিন্তু পরিমাণ যে অনেক কমে যাবে, তা নিয়ে কারোই সন্দেহ নেই। ফলে আগামী নির্বাচনের ইশতেহারে নিশ্চিতভাবেই ইউক্রেন ফ্যাক্ট উঠে আসবে।

এদিকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি প্রথমবারের মতো সশরীরে ভাষণ দেন। তবে তার ভাষণে আগের মতো আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি। এতেও দেশটির বন্ধু ও সহায়তাকারী দেশগুলোর মনোভাব আঁচ করা গেছে।

সম্প্রতি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে ক্লান্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। তিনি স্বীকার করেন, এই যুদ্ধ পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে তিনি মন্তব্য করেন, এই মুহূর্তে আমরা যদি নড়বড়ে হয়ে যাই তবে এটি পুরো বিশ্বের জন্য আরও কঠিন এবং বেদনাদায়ক প্রমাণিত হবে।

অবশ্য ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বিষয়টিকে কেবল ইউক্রেনের স্বার্থ বলে মেনে নিতে সম্মত নন। তিনি বলেন, বর্তমান ইউক্রেন যে ঝুঁকির মধ্যে আছে, তা মূলত ইউক্রেনের চেয়ে অনেক বড় একটি ইস্যু। এটি বিশ্বের স্থিতিশীলতার প্রশ্ন। ফলে বিশ্বের এদিক থেকে নজর ফিরিয়ে নেওয়ার উপায় নেই।