বাংলাদেশি নাবিকদের মুক্তির প্রতীক্ষা দীর্ঘায়িত

সোমালি জলদস্যুদের হাতে আটক ২৩ বাংলাদেশি নাবিকসহ জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ গত দুইদিন ধরে সোমালিয়া উপকূলে একই অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে। জাহাজের মালিক সংস্থা জানিয়েছে, জলদস্যুরা এখনও কোনো যোগাযোগ করেনি, ফলে জাহাজের নাবিকদের মুক্তির প্রতীক্ষা আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। খবর প্রথম আলো।

এমভি আব্দুল্লাহ

জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপ জানিয়েছে, জাহাজটি শুক্রবার সোমালি উপকূলের কাছাকাছি এসেছে এবং শনিবার থেকে একই জায়গায় রয়েছে। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি যে জাহাজের নাবিকরা সুস্থ আছেন। জাহাজ এক জায়গায় আছে। তবে জলদস্যুদের সঙ্গে আমাদের এখনও কোনো যোগাযোগ হয়নি, যদিও আমরা প্রস্তুত আছি।’

১৩ বছর আগে সোমালি জলদস্যুরা বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি জাহান মনি জব্দ করে। ওই জাহাজের ক্যাপ্টেন ফরিদ আহমেদ বলেন, জলদস্যুরা সাধারণত জাহাজ দখলে নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই যোগাযোগ করে। তাদের যোগাযোগের জন্য প্রতিনিধি থাকে। তারা সাধারণত স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে।

মঙ্গলবার ভারত মহাসাগর থেকে জলদস্যুরা এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি ছিনতাই করে নেয় এবং বৃহস্পতিবার জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যায়। এরপর দুই দফা জাহাজটির অবস্থান পরিবর্তন করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটি নোঙ্গর করা হয়। পরে শুক্রবার জলদস্যুরা জাহাজটিকে আরও দূরে সরিয়ে নেয় এবং উপকূল থেকে ৪০-৪৫ নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙ্গর করে।

বলা হচ্ছে, জলদস্যুরা যোগাযোগ না করা পর্যন্ত জাহাজ উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না। তবে জাহাজ মালিকের পক্ষ বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

রুয়েন উদ্ধার হলো, এমভি আব্দুল্লাহ কেন উদ্ধার হবে না?

এদিকে, আটক হওয়া বাংলাদেশের জাহাজটি নিয়ে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা আপডেট প্রকাশ করেনি। তবে ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে জানিয়েছে যে, ৪০ ঘণ্টার সমন্বিত অভিযান চালিয়ে সোমালি জলদস্যুদের কাছ থেকে মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রুয়েন উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী এবং ১৭ জন নাবিককে সফলভাবে সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া জাহাজের ৩৫ জলদস্যুও আত্মসমর্পণ করেছে বলে ভারতীয় নৌবাহিনী জানিয়েছে।

এর আগে, গত ১৪ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স তাদের ওয়েবসাইটে বলেছিল, সোমালিয় জলদস্যুরা গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর মাল্টার জাহাজ এমভি রুয়েন দখল করে নেয় এবং তারা বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটি দখল করতে এমভি রুয়েন ব্যবহার করতে পারে।

ভারতীয় নৌবাহিনী গত শুক্রবার ও শনিবার এক্স-এ প্রকাশিত ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার ও যুদ্ধজাহাজের সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করে নৌবাহিনী। অবশেষে, ৪০ ঘণ্টা পর তারা সফলভাবে অভিযান শেষ করে।

তবে নৌবিষয়ক অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেনরা মনে করেন, এমভি আব্দুল্লাহ উদ্ধারে এ ধরনের অভিযান বিপজ্জনক হবে। তাদের মতে, এমভি রুয়েন সোমালি উপকূল থেকে অনেক দূরে ছিল এবং জাহাজে বিভিন্ন দেশের নাবিকদের জিম্মি করা হয়েছিল। এছাড়া জাহাজ মালিকের সঙ্গে আলোচনা সম্ভবত সফল হয়নি। এ অবস্থায় ঝুঁকি থাকলেও অভিযান পরিচালনার বিকল্প ছিল না।

অন্যদিকে, জব্দ হওয়া এমভি আব্দুল্লাহের মালিক বাংলাদেশি এবং জিম্মি নাবিকরাও বাংলাদেশি। মালিকপক্ষ নাবিকদের জীবন বাঁচানোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সে কারণেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সের একটি জাহাজ জলদস্যুরা যখন এমভি আব্দুল্লাহ জব্দ করছিল তখন তাড়া করলেও কোনো উদ্ধার অভিযান চালায়নি। মালিকপক্ষ কোনো উদ্ধার অভিযানের অনুমতি দেয়নি কারণ এতে নাবিকদের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, এমভি আব্দুল্লাহ বর্তমানে সোমালিয়ার উপকূলের কাছাকাছি নোঙ্গর করা আছে। কোনো দেশ অন্য দেশের সামুদ্রিক সীমানার ভেতরে হামলা চালাতে পারে না। এছাড়া এ ধরনের অভিযান চালালে জলদস্যুরা জিম্মিদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। তাই জিম্মিদের জীবনের ঝুঁকি এড়াতে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর বিকল্প নেই।