প্রধানমন্ত্রী: বিএনপি ও তার মিত্ররা দেশকে অন্ধকারে ফিরিয়ে নিতে চায়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা দেশকে অন্ধকারে ফিরিয়ে নিতে চায়। সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা শাখার আয়োজনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশ, স্বল্পোন্নত ও সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলে দেওয়ার জন্য তাঁর জন্ম। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরেই সেই পরিবর্তন এনে দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সমালোচনা করে বলেন, ‘কেন তারা এটি চায়? তাদের অভিপ্রায় কী? ২০০৮ সালের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। সে নির্বাচনে তারা পেয়েছিল ৩০টি আসন, আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩৩টি আসন।’ তিনি বিএনপিকে সেই ইতিহাস স্মরণ করার তাগিদ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দরিদ্ররা খাবার ও আশ্রয় পায়। বঙ্গবন্ধুর এই দেশে কারো ঠিকানা, ঘরবাড়ি, জমি বিনা থাকবে না। সরকার এ লক্ষ্য পূরণের জন্যই বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘দেশের গরিব ও সাধারণ মানুষ ভালো থাকুক, বিএনপি নেতারা তা সহ্য করতে পারে না।’

বিএনপি ও তাদের মিত্রদের দ্বারা এই সরকারকে উৎখাত করা সম্ভব হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় দেশের মানুষের পাশে থাকে বলেই নির্বাচনে বারংবার মানুষ দলকে ভোট দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে, বিএনপি রমজান মাসে গরিব-দুঃখীদের মাঝে ইফতার বিতরণ না করে বরং ইফতার পার্টির আয়োজন করে সরকারের সমালোচনা করছে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলছে। অপরদিকে ইফতার পার্টি না আয়োজন করে আওয়ামী লীগ, এর সহযোগী সংগঠন ও দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সারাদেশে গরিবদের কাছে ইফতার সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, বিএনপি ও তাদের মিত্ররা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে চায় কেন? আমরা কী অপরাধ করেছি? বাংলাদেশকে স্বাধীন করাই কি অপরাধ? জনগণের পাশে দাঁড়ানো কিংবা বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের চেষ্টা করা কি অপরাধ?’

শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের নামে বিএনপির সমালোচনাকে তীব্র নিন্দা জানান এবং বলেন, যে দল একজন অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর (জিয়াউর রহমান) দ্বারা গঠিত এবং কোন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি, তারা গণতন্ত্রের ভাষা বুঝবে কী করে?

প্রধানমন্ত্রী আবারও তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন যে, জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত 'সোনার বাংলা' হিসেবে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশে পরিণত করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী তার দলের নেতাকর্মীদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী', 'কারাগারের রোজনামচা' এবং 'আমার দেখা নয়াচীন' গ্রন্থগুলি পাঠের আহ্বান জানান। এছাড়া পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের বিষয়ে অধ্যয়নের পরামর্শ দেন, যাতে বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম, আদর্শ ও দেশ স্বাধীনতার সংগ্রামের গভীরতা উপলব্ধি করা যায়। এছাড়া তিনি দলীয় সদস্যদের ‘মুজিব: দ্যা মেকিং অফ আ নেশন’ চলচ্চিত্রটি দেখার জন্য বলেন।

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদ হতে চাইলে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে চাইলে বঙ্গবন্ধুর লেখা গ্রন্থ ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টগুলো পড়তে হবে।’

আলোচনা অনুষ্ঠানে আরও অংশগ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যগণ, উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন, এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ড. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকগণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দিপু মনি প্রমুখ।