মহান স্বাধীনতা দিবস আজ

আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। পাকিস্তানি পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে ১৯৭১ সালের এইদিনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) জনগণ। রক্তক্ষয়ী এ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন ৩০ লাখের বেশি মানুষ। ৯ মাসের যুদ্ধে এত বেশি মানুষ নিহতের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তাই তো কণ্ঠে বাজে শোকের বিউগল- ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা- আমরা তোমাদের ভুলব না। দুঃসহ বেদনার কন্টক পথ বেয়ে, শোষণের নাগপাশ ছিঁড়লে যারা- আমরা তোমাদের ভুলব না।’

স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনা সেই স্বাধীনতা দিবসের ৫৩তম বার্ষিকী আজ। লাল-সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশ আজ পা রাখলো ৫৪ বছরে। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করছে জাতি। জাতীয় দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ ধরে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) ঐতিহাসিক ভাষণে মুক্তি-সংগ্রামের যে দিকনির্দেশনা দেন, তাতে বাঙালি জাতির মননে জাগে স্বাধীনতার বীজমন্ত্র।

পাকিস্তানি ক্ষমতাসীন শোষক শ্রেণি বাঙালীর সেই স্বাধীনতাস্পন্দন টের পেয়েই ২৫ মার্চ কালরাতে এ দেশের নিরীহ মানুষের ওপর লেলিয়ে দেয় হানাদার বাহিনী। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ওই রাতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বর্বর হত্যাকাণ্ড শুরু করে।

মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে। তবে তার আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। তাই ২৬ মার্চ জাতির জন্য অনন্য একটি দিন।

ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মূল্যবান দলিলটি লিপিবদ্ধ রয়েছে এভাবে- ‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি, যে যেখানে আছেন, যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।’

স্বাধীনতা দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী: রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে স্বাধীনতার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার পথে জাতি এগিয়ে যাক- মহান স্বাধীনতা দিবসে এটিই আমার প্রত্যাশা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশে ও প্রবাসে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। পাশাপাশি এ মাহেন্দ্রক্ষণে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণের শপথ নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানাই।