মর্মান্তিক, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার একটি বাড়িতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ভোরে উপজেলার পূর্ব গোয়ালবাড়ি গ্রামের মোখলেছ মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আরেক শিশু গুরুতর দগ্ধ হয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ফাইল ছবি

জানা গেছে, পূর্ব গোয়ালবাড়ি সড়কের এক পাশে টিনের চালা ও বেড়ার একটি ঘরে পরিবার নিয়ে থাকতেন ফয়জুর রহমান। নিজের জমি না থাকায় রহমত আলী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির পতিত জমিতে তিনি ঘর তৈরি করেছিলেন। ওই ঘরের উপর দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের লাইন টানানো রয়েছে।

ফয়জুর রহমানের ঘরের পাশে থাকা ভাঙারপার জামে মসজিদের শিক্ষক আনোয়ার আশরাফ সিদ্দিকী জানান, সকাল পৌনে ছয়টার দিকে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। ফজরের নামাজের সময় তিনি বিদ্যুৎ লাইনের একটি খুঁটিতে আগুন জ্বলতে দেখেন। পরে তিনি এবং অন্য মুসল্লিরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করান।

এরপর তারা ফয়জুরের বাড়িতে গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ অবস্থায় দেখতে পান। তারা ফয়জুর ও তার পরিবারের সদস্যদের ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়াশব্দ মিলছিল না। পরে তারা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে একসঙ্গে কয়েকজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখতে পান। ঘরের ভেতর বিদ্যুতের তার, মিটার পুড়ে ছাই হয়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া খাটের লেপ-তোশকও পুড়ে গেছে।

পরে উপস্থিত লোকজন ফায়ার সার্ভিস, সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগ ও জুড়ী থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানালে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে পাঁচজনের মরদেহ বের করে আনেন। মৃতরা হলেন ফয়জুর রহমান (৫০), তার স্ত্রী শিরি বেগম (৪৫), মেয়ে সামিয়া বেগম (১৫) ও সাবিনা আক্তার (৯) এবং ছেলে সায়েম উদ্দিন (৭)। এছাড়া দগ্ধ অবস্থায় ফয়জুর রহমানের আরেক মেয়ে সোনিয়া বেগমকে (১২) সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সারোআর আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের পাঁচ সদস্য মারা গেছেন। স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে পবিসের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম মিজানুর রহমানও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি দাবি করেন, সাধারণত কোনো ঘরের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন টানা হয় না। এখানে লাইন স্থাপনের পর তার নিচে ঘরটি তৈরি করা হয়েছিল। তারপরও লাইনটি সরিয়ে নেওয়া হবে। দগ্ধ শিশুর চিকিৎসার বিষয়েও তারা সার্বিক সহযোগিতা করবেন।

জুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং প্রমুখও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।