মুক্ত নাবিকদের পরিবারে ঈদের আনন্দ, খুশির কান্না

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকায় এবারের ঈদের দিনটি উৎকণ্ঠা নিয়েই কেটেছিল এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকদের পরিবারগুলোর। তবে শনিবার দিবাগত রাতে তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় এসব পরিবারে ফিরে এসেছে ঈদের আনন্দ। এখন অপেক্ষা তাদের স্বচক্ষে দেখার।

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকরা

নাবিকদের মুক্তি খবরে খুশির কান্নায় ভাসছেন তাদের পরিবার-স্বজনরা। তারা জানান, জলদস্যুদের হাতে আটক হওয়ার খবরে তাদের পরিবারে ঈদের আনন্দ বলতে কিছুই ছিল না। কিন্তু কেএসআরএম গ্রুপের প্রচেষ্টায় তারা মুক্তি পাওয়ায় পরিবারে এখন ঈদের আনন্দ বিরাজ করছে।

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে ওয়েলার পদে কর্মরত মো. শামসুদ্দিন মা শাকেরা খাতুন ছেলে মুক্তির অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শামসুদ্দিনের বোন জামাই বদরুল হক জানান, নাবিকরা সবাই সুস্থ আছেন। তারা এখন দুবাইয়ের পথে রয়েছেন। সেখানে পৌঁছাতে জাহাজটির আরও পাঁচদিন সময় লাগবে। এরপর সেখান থেকে তারা বিমানে দেশে ফিরবেন।

এমভি আবদুল্লাহ

জাহাজটির নাবিক হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ নুর উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, নাবিকদের আটকের খবরে এবারে আমাদের ঈদ বলে কিছু ছিল না। গত ৩২টি দিন আমাদের কীভাবে কেটেছে বলতে পারব না। তাদের মুক্তির খবর পাওয়ায় আমাদের সত্যিকারের ঈদের দিন আজ। জাহাজটির মালিকপক্ষ আমাদের হারিয়ে যাওয়া ঈদের আনন্দ দ্রুত ফিরিয়ে দিয়েছে।

এমভি আবদুল্লাহর নাবিক আইনুল হকের জিম্মি হওয়ার খবরে তা মা লুৎফে আরা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ছেলের মুক্তির খবরে তিনি স্বস্তি খুঁজে পেয়েছেন।

জাহাজটির ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসেনের বাবা হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, ছেলেদের আটক হওয়ার পর থেকে সব সময় দুশ্চিন্তা হতো। শেষ পর্যন্ত তারা মুক্ত হয়েছে। আমাদের জন্য এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে?

গত ৪ মার্চ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ১৯ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল জাহাজটির। তবে এর আগেই গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুরা জাহাজটি আটক করে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যায়। জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিককেও জাহাজেই আটকে রাখা হয়।

অনেক দেনদরবারের পর শনিবার দিবাগত রাতে মুক্তি পান এই ২৩ নাবিক। মুক্তিপণের অর্থ বুঝে পাওয়ার পর বাংলাদেশ সময় রাত তিনটা আট মিনিটে জলদস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যায়। এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধজাহাজের পাহারায় জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল ত্যাগ করে। জাহাজটি এখন দুবাই যাবে। সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া এসব নাবিক বিমানযোগে চট্টগ্রামে পৌঁছবেন। সেখানে কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তারা স্বজনদের কাছে ফিরে যেতে পারবেন।

কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের জাহাজটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের নাবিকদের সবাই সুস্থ ও অক্ষত রয়েছেন।