উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ১৫০টি উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা সোমবার রাতে শেষ হওয়ার পরই দলটি এ সিদ্ধান্ত নেয়।

বিএনপির দলীয় পতাকা

বর্তমান সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ (জাতীয় সংসদ) নির্বাচন বর্জনের ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারণী স্থায়ী কমিটি।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। এতে বলা হয়, বিএনপি নির্বাচনী প্রহসনে অংশ নিতে চায় না এবং সে কারণেই ৮ মে থেকে শুরু হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এরই মধ্যে বিএনপির তৃণমূল নেতারা এ নির্বাচন নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিলেন। এতদিন দলটি এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এরই মধ্যে প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলা পরিষদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির প্রায় ৪৫ নেতা।

দলের অবস্থানের বাইরে যারা এই নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন তাদের ব্যাপারে বিএনপি কতটা কঠোর হতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য। মনোনয়ন প্রত্যাহারের তারিখ ২২ এপ্রিল। দলের এই বার্তা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী তৃণমূল নেতাদের কতটা প্রভাবিত করবে তা অন্য প্রশ্ন।

ঘটনাচক্রে প্রথমে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে জামায়াতে ইসলামী। ঈদের পরপরই নিজেদের পরিবর্তিত সিদ্ধান্তের কথা মাঠ পর্যায়ের নেতাদের জানায় দলটি। এর আগে উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপে অংশ নিতে জামায়াতের অন্তত ২২ নেতা মনোনয়নপত্র জমা দেন। দলের নেতারা বলছেন, তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, দলে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশনা পাঠানো হবে।

উপজেলা নির্বাচন বয়কটের পক্ষে বিএনপির যুক্তি হলো, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনও হবে নিয়ন্ত্রিত। তারা এই নির্বাচনে যোগ দিলে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে। দলটি বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়টি তাদের দলের দীর্ঘদিনের সিদ্ধান্ত। তাদের এই সিদ্ধান্ত মেনে চলার সিদ্ধান্ত আছে।

উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৪৫ জন বিএনপি নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে মনে করছে না বিএনপি। গয়েশ্বর রায় বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তেমন আগ্রহ নেই বলে তারা লক্ষ্য করেছেন।

গয়েশ্বর রায় বলেন, দীর্ঘদিনের সরকারবিরোধী আন্দোলন ও ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে তাদের দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী মামলায় জর্জরিত। ২৭ হাজার কর্মীকে জেলে পাঠানো হয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা আর মামলা ও দমন-পীড়নের মুখে পড়তে নারাজ। উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে এসব পরিস্থিতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

তবে যারা নির্বাচনী দৌড়ে নেমেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে তারা দলের শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন। এটা তাদের হতাশ করেছে।

গাজীপুর সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি এজাদুর রহমান এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দল এখন নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে গত দুদিন ধরে উপজেলার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদের আগ্রহের কারণেই আমি প্রার্থী হয়েছি।’

এ বিষয়ে দলের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিষয়ে এজাদুর রহমান বলেন, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই থাকতে চান। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্য মনে করছেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঝুঁকি নেবেন এমন নেতা খুব একটা নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, দলের নির্দেশনা পেলেও এবারের নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএনপি আসলে কতটা কঠোর হবে সে বিষয়ে ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন।