জেলেনস্কি: ক্ষেপণাস্ত্র ঘাটতির কারণে রুশ হামলা ঠেকানো যাচ্ছে না

ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আবারও অস্ত্র-শস্ত্র ঘাটতির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র ঘাটতির কারণে গত সপ্তাহে রাশিয়ার চালানো একটি বড় হামলা ঠেকানো যায়নি। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) মার্কিন সংবাদমাধ্যম পিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। খবর রয়টার্স ও আল জাজিরা।

রুশ হামলায় বিধ্বস্ত ট্রাইপিলস্কা

এর আগেও ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ক্ষেপণাস্ত্রসহ নানা ঘাটতি নিয়ে একাধিক সতর্কবার্তা দেয় কিয়েভ প্রশাসন। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া দেশটির জ্বালানি ব্যবস্থায় হামলা জোরদার করার পর তারা সেই হামলা ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে।

অস্ত্র ঘাটতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়া ইউক্রেনকে আরও দুর্বল করতে এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরে চালানো হামলার জবাব দিতে গিয়ে মস্কো এখন কিয়েভের বড় বড় জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলার দিকে জোর দিয়েছে। গত সপ্তাহেও রুশ হামলায় রাজধানী কিয়েভ অঞ্চলের একটি বৃহত্তম বিদ্যুৎকেন্দ্র ট্রাইপিলস্কা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বিধ্বস্ত হয়।

বিধ্বস্ত ট্রাইপিলস্কা

জেলেনস্কি বলেন, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাটতির কারণে ট্রাইপিলস্কা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে চালানো হামলা পুরোপুরি প্রতিহত করা যায়নি। হামলায় রাশিয়া ১১টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। ইউক্রেন রাশিয়ার সাতটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে, কিন্তু বাকি চারটির কারণে ট্রাইপিলস্কা ধ্বংস হয়ে যায়। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র শেষ হয়ে গিয়েছিল। ট্রাইপিলস্কা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে রক্ষার মতো পর্যাপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের ছিল না।

সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, রাশিয়া যদি এমন গতিতে তাদের হামলা অব্যাহত রাখে তাহলে অচিরেই ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র পুরোপুরি ফুরিয়ে যাবে। ফলে রাশিয়াকে ঠেকিয়ে রাখা আর সম্ভব হবে না।

উল্লেখ্য, ১১ এপ্রিল রুশ হামলায় ধ্বংস হওয়া ট্রাইপিলস্কা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ছিল কিয়েভের কাছাকাছি এলাকায় থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে বৃহত্তম। এর উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ায় আপাতত অন্যান্য কেন্দ্র ও আমদানির মাধ্যমে কিয়েভের জ্বালানি ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে।

দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতে রাশিয়া এখন ইউক্রেনের জ্বালানি ব্যবস্থায় হামলা চালাতে শুরু করেছে। তারা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের সমন্বয়ে গ্যাস ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালাচ্ছে। তাদের এই হামলার ফলে কিছুদিনের মধ্যেই ইউক্রেন সাত গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা হারিয়েছে। এর বড় প্রভাব পড়ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত কিয়েভসহ অন্যান্য এলাকায় বাস্তুচ্যুত হওয়া সাধারণ নাগরিকদের ওপর।

ইউক্রেন অনেক আগে থেকেই পশ্চিমা মিত্রদের কাছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আসছিল। তারা জানায়, পুরো দেশকে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষার জন্য অন্তত ২৫টি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দরকার। সম্প্রতি এ ধরনের ব্যবস্থার মাধ্যমে ইরানের হামলা প্রায় পুরোপুরি ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করে ইসরায়েল। এরপর থেকে ইউক্রেনের দাবির মাত্রাটি আরও বেগবান হয়।