সেনাপ্রধান: এক বন্ধুরাষ্ট্রকে তুষ্ট করতে অপর রাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুতা নয়

‘এক বন্ধুরাষ্ট্রকে তুষ্ট করতে অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুতা করা যাবে না,’ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইএসএস) আয়োজিত প্রতিরক্ষা কূটনীতি বিষয়ক সেমিনারে এ কথা বলেন সেনাবাহিনী প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ

মায়ানমারের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ব্যাপারে জানতে চাইলে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘হ্যাঁ, আমাদের সামরিক নেতাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে এবং আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি। মায়ানমারের কয়েকজন সামরিক নেতার ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই তাদের সঙ্গে কাজ করতে গেলে আমরাও ঝুঁকিতে পড়তে পারি; কারণ সবাই আমাদের বন্ধু। এক বন্ধুকে খুশি করতে আরেক বন্ধুকে বিরক্ত করা যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাই আমাদের গতিশীলতা এবং বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। আমি নিশ্চিত করতে চাই যে আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’

সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, সরকারের সকল সংস্থা দেশের স্বার্থে কাজ করছে সে বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই। সবচেয়ে বড় কাজ সুযোগ খুঁজে বের করা এবং অনুকূল পরিবেশে কাজ করা। এককভাবে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়। বড় চ্যালেঞ্জ হল সবার সাথে কিভাবে সহযোগিতা করা যায়।

এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশের ও কৌশলগত স্বার্থে সামরিক কৌশল প্রয়োজন। এই ভিত্তিতেই আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের অবস্থান নির্ধারণ করি। বিচ্ছিন্নভাবে এটি অর্জনের কোনো উপায় নেই। তাই কখনো কখনো আমরা ভাবি কে নেতৃত্ব দেবে, কে নিয়ন্ত্রণ করবে। এটা সমস্যা তৈরি করতে পারে।’

সরকারি কাজ সমন্বয়ের জন্য একটি সংস্থা গঠনের গুরুত্ব দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা অনেক কিছু শুরু করেছি কিন্তু শেষ করতে পারিনি কারণ পরে তা আমাদের হাতে ছিল না। যখনই আমি ব্যবসায়িক খাতে সম্ভাবনা দেখেছি, পরে তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চলে গেছে। তাই আমি এখানে যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা সমর্থন করি এবং মনে করি একটি সংস্থা প্রয়োজন যেন আমাদের উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হয় এবং ভবিষ্যতের উদ্যোগগুলো আমরা নির্ধারণ করতে পারি।’

ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, পরিস্থিতি যে কোনো সময় বদলে যেতে পারে, কিন্তু ক্ষমতা হঠাৎ করে পরিবর্তন হয় না। আজকের বন্ধু আগামীকাল বন্ধু নাও থাকতে পারে। জাতীয় স্বার্থ ও মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। পররাষ্ট্রনীতির মূল মন্ত্র হল ‘সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়’।

পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য অর্জনে সেনাবাহিনী সবকিছু করছে। তিনি বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান কাজ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং আমরা এটি কখনই ভুলি না। আমরা সবসময় প্রস্তুত।’

সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে চিফ অফ জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘প্রতিরক্ষা কূটনীতি সম্পর্কে অনেকের মধ্যেই ভুল ধারণা থাকতে পারে, তবে আমাদের কূটনীতিকরা এর প্রয়োজনীয়তা খুব ভালোভাবে বোঝেন।’

বিআইআসএসের চেয়ারম্যান এফ এম গাউসুল আজম বলেন, প্রতিরক্ষা কূটনীতি পররাষ্ট্রনীতির বৃহত্তর মাত্রায় কাজ করে।