স্টয়নিসের তাণ্ডব: চেন্নাইকে ডোবালেন মোস্তাফিজ

দারুণ একটা শুরু। প্রথম ওভারে চার রানে এক উইকেট। কিন্তু ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি মোস্তাফিজুর রহমান। পরের তিন ওভারে তিনি হজম করলেন যথাক্রমে ১৩, ১৫ ও ১৯ রান। শেষ ওভারে ১৬ রান আগলে রাখার চ্যালেঞ্জ ছিল ফিজের। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে তিন বলেই ১৯রান দিয়ে বসলেন তিনি। সঙ্গে বাড়তি একটি ‘নো’ বলও করেছেন।

সেঞ্চুরির পর মার্কাস স্টয়নিসের উদযাপন। পাশে বিবর্ণ মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: বিসিসিআই

লখনৌ সুপার জায়ান্টসকে এমন থ্রিলার জয় এনে দেন মার্কাস স্টয়নিস। তার ঝোড়ো ব্যাটিংয়েই তিন ওভারে ৪৭ রানের কঠিন সমীকরণ মিলিয়ে ফেলে লখনৌ। ম্যাচের ১৮তম ওভারে ১৫ ও ২০তম ওভারে ১৯ রান দিয়েছেন ফিজ। তার অমন লাগামহীন বোলিং শেষ পর্যন্ত ডুবিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংসকে। লখনৌ জিতেছে ছয় উইকেটে।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে চার উইকেটে ২১০ রানের পাহাড় গড়ে চেন্নাই। জবাবে চার উইকেট হারিয়ে ম্যাচের তিন বল হাতে রেখে দুর্দান্ত জয় তুলে নেয় লখনৌ (২১৩/৪)। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) এটাই লখনৌর সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। আসরে আট ম্যাচে এটা লখনৌর আট ম্যাচে পঞ্চম জয়। চেন্নাইয়ের চতুর্থ হার। সাত জয়ে শীর্ষে আছে রাজস্থান রয়্যালস।

রান তাড়ায় শুরুটা বাজে ছিল লখনৌর। পঞ্চম ওভারে ৩৩ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বসে তারা। কোনো রান না করেই সাজঘরের পথ ধরেন ওপেনার কুইন্টন ডি কক। আরেক ওপেনার ও অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে গায়কোয়াড়ের ক্যাচে পরিণত করেন মোস্তাফিজ। প্রথম ওভারে চার রান খরচায় প্রতিপক্ষ অধিনায়কের উইকেট নেন তিনি। এরপর আর খুঁজেই পাওয়া গেল না ফিজকে।

লখনৌর শুরুর জোড়া ধাক্কা সামাল দেন স্টয়নিস। ব্যাট হাতে তোলেন ঝড়। তাকে খানিকটা সঙ্গ দিয়ে বিদায় নেন দেবদুত পাডিক্কাল। ১৯ বলে ১৩ রানে আউট হন তিনি। নতুন ব্যাটার হিসেবে নিকোলাস পুরান এসেই তাণ্ডব শুরু করেন। ১৫ বলে তিন চার ও দুই ছয়ে ৩৪ রানের কার্যকর ইনিংস খেলেন ক্যারিবীয় উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। শেষ দিকে ছয় বলে ১৭ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন দীপক হুদা।

তবে আসল ঝড়টা উঠেছে স্টয়নিসের ব্যাটে। ৬৩ বলে ১২৪ রানের অপরাজিত টর্নেডো ইনিংস খেলেন তিনি। ১৩ চার ও ছয় ছক্কায় ইনিংস সাজান স্টয়নিস। অবধারিতভাবেই তার হাতে উঠেছে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। চেন্নাইয়ের পক্ষে ৩৫ রানে দুই উইকেট নেন মাথিশা পাথিরানা। ৫১ রানে একটি শিকার ফিজের। অন্য উইকেটটি দীপক চাহারের।

এর আগে ব্যাটিংয়ে নামা চেন্নাইয়ের শুরুটাও ভালো ছিলনা। প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার আজিঙ্কা রাহানে। রাঁচিন রবিন্দ্রর জায়গা ব্যাট করতে নেমে তিনি করতে পারলেন স্রেফ তিন রান। দলীয় ফিফটি ছোঁয়ার আগ মুহূর্তে চেন্নাই হারায় ডারিল মিচেলের উইকেট। ১০ বলে ১১ রানে ফেরেন তিনি। ১৯ বলে ১৬ রান করেন রবিন্দ্র জাদেজা।

একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যান ওপেনার গায়কোয়াড়। ৬০ বলে ১০৮ রানে অপরাজিত থাকেন চেন্নাই অধিনায়ক। গায়কোয়াড়ে ইনিংসে ছিল ১২টি চার ও তিনটি ছক্কার মার। ইনিসের শুরুর দিকে স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া এই ওপেনার সুযোগের দারুণ সদ্ব্যবহার করেছেন। কিন্তু বিফলেই গেল গায়কোয়াড়ের শতকটা।

ইনিংসে শেষ দিকে দ্রুতগতিতে রান তোলার কাজে সহায়তা করেন শিভাম দুবে। ২৭ বলে ৬৬ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন তিনি। ইনিংসে সাতটি ছক্কা ও তিনটি চার মেরেছেন দুবে। শেষ ওভারে দুর্ভাগ্যক্রমে রান আউটে কাঁটা পড়েছেন তিনি। দুবের অমন ব্যাটিংয়ের সুবাদে দুশো ছাড়ায় চেন্নাই। লখনৌর পক্ষে একটি করে উইকেট নেন ম্যাট হেনরি, মহসিন খান ও ইয়াশ ঠাকুর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চেন্নাই সুপার কিংস: ২১০/৪ (২০ ওভার)।
লখনৌ সুপার জায়ান্টস: ২১৩/৪ (১৯.৩ ওভার)।
ফল: লখনৌ সুপার জায়ান্টস ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: মার্কাস স্টয়নিস (লখনৌ সুপার জায়ান্টস)।