বন্ধু চল বলটা দে, রাখব হাত তোর কাঁধে…

ধনঞ্জয়া ডি সিলভার উইকেটটা ফেলে মোস্তাফিজ উদযাপনে মাতলেন স্বভাবসূলভ ভঙিমায়। শততম টেস্ট জেতার আশায় আরো একধাপ এগোলো বাংলাদেশ। একে একে সতীর্থরা এসে অভিনন্দনে ভাসালেন তাকে। চোখেমুখে এক অপার্থিব ঝিলিক নিয়ে উল্লাস করতে লাগলেন মোস্তাফিজ।

এর মধ্যেই খানিকটা দূর থেকে দৌড়ে এলেন মিরাজ। মোস্তাফিজের আনন্দ যেনো এবার পেরিয়ে গেলো সব সীমা। দুই হাত প্রসারিত করে লাফিয়ে উঠলেন এই পেসার। পেতে চাইলেন বন্ধুর ছোঁয়া। মিরাজও ছড়িয়ে দিলেন দুই হাত।

দুই জনের ছড়িয়ে দেয়া চারটি হাতের মাঝখানে যেনো এঁটে গেলো পৃথিবীর সমস্ত আনন্দ। একদিকে শততম টেস্ট খেলার উত্তেজনা। আরেক দিকে প্রাণের বন্ধুর সঙ্গে টেস্ট খেলতে পারার স্বর্গীয় অনভূতি। মোস্তাফিজ- মিরাজের ছড়িয়ে দেয়া চারটি হাত যেনো হয়ে উঠলো সে সবের মূর্ত রূপ।

মুহূর্ত কয়েক পর চারটি হাতের তালু এসে মিললো এক মোহনায়। যেনো তা তৈরি করে দিলো অদৃশ্য এক ঢেউ। যা পলকে আন্দোলিত করলো বাতাসকে। ছড়িয়ে পড়লো বায়ুমণ্ডলে। আরো একবার টেস্ট ক্রিকেট দেখলো দুই বন্ধুর অনন্য উদযাপন।

প্রায়ই বাংলাদেশ দল পেতে উঠছে এমন উল্লাসে, যার কেন্দ্রে কেবলই মোস্তাফিজ।

বাংলাদেশ দলে তামিম- সাকিব যা, কোনো দিন নিশ্চয় মোস্তাফিজ- মিরাজ তা হয়ে উঠবেন। খেলার ধরনে হয়তো বন্ধুজুটি সাকিব- তামিমের সঙ্গে মিল নেই মোস্তাফিজ- মিরাজের। কিন্তু বন্ধুজুটি হিসেবে তারা যে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভরসার অন্য নাম হয়ে উঠবেন তার আভাস তো ইতোমধ্যেই পেয়ে গেছে বিশ্ব।

যুগে যুগে শত রূপে টেস্ট ক্রিকেট বন্ধুদের জুটি কম দেখেনি। কদিন আগেই গত হওয়া সাঙ্গা- জয়ার উদাহরণটা তো এখনো তাজা। দুজন মিলে শ্রীলঙ্কার হয়ে রচনা করেছেন অবিস্মরণীয় সব কীর্তি। ব্যক্তিগত অর্জনেও তারা নিজেদের নিয়ে গেছেন ঈর্ষণীয় উচ্চতায়।

সেই সাঙ্গা- জয়ার দেশেই বাংলাদেশ পেয়ে গেলো নতুন বন্ধুজুটি। বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই যারা স্বপ্ন বুনেছেন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উত্তপ্ত ময়দানে বাংলাদেশের নাম আরো উজ্জ্বল করার কাজটা এবার একসঙ্গে শুরু করে দিলেন তারা।

মোস্তাফিজের মতো মিরাজও হয়ে উঠছেন বাংলাদেশ দলের আরেক উল্লাসের কেন্দ্র।

সুযোগ এসেছিলো নিউজিল্যান্ড সিরিজেই। কিন্তু সাদা পোশাকে সেখানে দেখা যায়নি এ দুজনকে। এবার গেলো। দীর্ঘ ইনজুরির ধকলে সৃষ্ট মানসিক বিষাদ এবং হারিয়ে ফেলা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়ে শ্রীলঙ্কায় সাদা পোশাকে নেমে গেছেন মোস্তাফিজ। তার ফেরার আগে দলে জায়গা পাকা করে ফেলেছেন মিরাজও।

শ্রীলঙ্কা থেকেই শুরু হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন বন্ধুজুটির অধ্যায়। পরিস্থিতি যা বলছে, তাতে এ আশা করাই যায় যে, তামিম- সাকিব যে রকম প্রভাববিস্তারি ছিলেন, মোস্তাফিজ- মিরাজ হয়ে জুটি হয়ে উঠবেন তার চেয়েও বড় কিছু। তাদের হাত ধরে ধরা দিবে আরো বড় বড় অর্জন।

শ্রীলঙ্কায় উড়ে যাওয়ার আগে মোস্তাফিজের সঙ্গে টেস্ট খেলার আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছিলেন মিরাজ। মোস্তাফিজও প্রকাশ করেছিলেন বন্ধুর সঙ্গে টেস্ট খেলার আকুলতা।

এ দুজনর আকাঙ্ক্ষা- আকুলতা পূরণ হয়ে যায় গলেই। কলম্বোতেও মাঠে নামেন দুই বন্ধু। যেটা আবার বাংলাদেশের শততম টেস্ট। কলম্বো টেস্টের চতুর্থ দিন পর্যন্ত দুই বন্ধু মিলে শিকার করেছেন ১৮টি লঙ্কান উইকেট! ব্যাট হাতে মিরাজ দেখিয়েছেন ক্রমেই পরিপক্ক হয়ে উঠা রূপ।

সব মিলিয়ে বন্ধুতার ধ্রুপদী শক্তির নবীনতর প্রতিনিধি হয়ে বাংলাদেশ দলে জায়গা পাক্কা করে ফেলেছেন মোস্তাফিজ- মিরাজ। এবার কেবল তাদের কীর্তিময় ভবিষ্যত হাত ভরে গ্রহণ করার পালা। তাদের প্রতিটি উদযাপন যেনো বাংলাদেশকে বলে দেয়— প্রস্তুত হও মাতৃভূমী, আমরা বেড়ে চলছি!

বন্ধুতার শক্তি নিয়ে মোস্তাফিজ- মিরাজ যখন দ্যুতি ছড়ান, উদযাপনে মাতেন, তখন কোথায় যেনো বাজতে থাকে অনুপমের গলাটা। কোথায় যেনো বাজতে থাকে— বন্ধু চল বলটা দে, রাখব হাত তোর কাঁধে!