ধরুন একটা কাপড় দিয়ে আপনার চোখ বেঁধে দেয়া হয়েছে। বাজী হলো, রাস্তা দিয়ে বাধাহীনভাবে আপনি হেঁটে যাবেন। কিন্তু কিভাবে! রাস্তায় রয়েছে পথচারী, যানবাহন, ইলেকট্রিক খাম্বা, দোকানপাট, পথকুকুরসহ অযাচিত বহু প্রতিবন্ধকতা। স্বাভাবিকভাবে এ সময় একমাত্র অবলম্বন হবে আপনার সকল ইন্দ্রীয়ের সক্রিয়তা। কিছু কিছু মানুষ ঠিক এভাবেই দৃষ্টিশক্তি না থাকা সত্ত্বেও দেখার সামর্থ্য অর্জন করেন, মিলিনা কানিং এমনই একজন নারী।

blindsight

স্কটল্যান্ডের মিলিনা কানিং তার ২০ বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং তারপরই তিনি অনুভব করতে পারেন যে, দৃষ্টিশক্তি না থাকা সত্ত্বেও সচেতন মস্তিষ্ক তার পারিপার্শ্বিকতার স্পষ্ট জানান দেয়। মস্তিষ্কের এই কর্মপ্রক্রিয়াটা কেমন, তা জানতে গবেষকরা দীর্ঘদিন তাকে পর্যবেক্ষণে রাখেন।

বিজ্ঞানী জডি কুলহাম মিলিনার মস্তিষ্কের ক্রিয়া পাঠ করেছেন। তিনি বলেন, 'আমি যদি মিলিনার মাথাকে লক্ষ্য করে একটি চোট বল ছুঁড়ে দেই, তবে মিলিনা এই বিষয়টি সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত না হয়েও তাৎক্ষণাৎ এটাকে প্রতিহত করতে পারে।'

মিলিনা বলেন, 'শারীরিক বহু জটিলতার কারণে দীর্ঘ ৫২ দিন আমি হাসপাতালের বিছানায় সম্পূর্ণ অচেতনাবস্থায় পড়ে ছিলাম। অচেতন হওয়ার আগে আমার দৃষ্টিশক্তি ছিল। কিন্তু ৫২ দিন পর যখন জ্ঞান ফিরলো, আমার সামনে শুধুই অন্ধকার ছিল। আমি কিছুই দেখতে পারছিলাম না। ডাক্তার বলেছিলেন, অচেতন থাকাকালীন আমার একটি ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছিল যার ফলে আমি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছি।'

তিনি বলেন, 'মাসখানেকের মধ্যেই সবকিছু বদলাতে থাকলো। ছয় মাস পর আমার মনে হচ্ছিল, আমি ঝাপসাভাবে কিছু রঙ দেখতে পাচ্ছি কিন্তু কেউ এই কথা বিশ্বাস করছিল না। তাই আমি স্নায়ুবিক বিশেষজ্ঞ গর্ডন ডুটনের শরণাপন্ন হই। তিনিই আমাকে নিশ্চিত করেন যে, আমি আসলে চোখে দেখি না কিন্তু প্রবলভাবে সবকিছুর অস্তিত্ব অনুভব করতে পারি যা আমার দ্বিতীয় দৃষ্টিশক্তি হিসেবে কাজ করে।'

ডা গর্ডন ডুটন তার এই ক্ষমতার সীমা জানতে কিছু পরীক্ষা করেন। তিনি একটি বড় ঘরে অনেকগুলো চেয়ার রেখে মিলিনাকে বলেন ওগুলোর উপর দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে যেতে। মিলিনা সফলভাবেই তা অতিক্রম করেন। এরপর প্রতিবার গতি তুলনামূলক বাড়িয়ে মিলিনাকে ঠিক একই কাজ করতে বলা হয়। প্রতিবারই মিলিনা কোন চেয়ারের সঙ্গে ধাক্কা না লেগে বা আঘাত না পেয়ে ঘরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হেঁটে যান।

এরপর ডা গর্ডন তাকে বলেন, 'এটা নিয়ে অতিরিক্ত ভাবার প্রয়োজন নেই। শুধু নিজের কাজ করে যাও। তোমার অবচেতন মস্তিষ্কই তোমাকে সচেতন রাখছে এবং তুমি কোন কিছু না দেখেও সেটাকে দেখতে পারছো।'

মিলিনা বলেন, 'আমি যে কোন বাঁধা উপেক্ষা করতে পারি বা চাইলে কোন কিছু না হাতড়ে তুলে নিতে পারি। আমি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবো এবং জানবো যে আপনি ঠিক কোথায় অবস্থান করছেন কিন্তু আমি আপনাকে দেখতে পারবো না। এটি খুবই আশ্চর্য বিষয় যে আমি সব দেখতে পারি, যদিও আমি কিছুই দেখি না।'

Discover extraordinary stories from around the world with our exceptional news coverage. From uplifting human interest stories to groundbreaking scientific discoveries, we bring you the best of the best. Stay informed about the latest breakthroughs in technology, medicine, and beyond, and explore the world's most fascinating cultures and communities. Get inspired and informed with our exceptional news coverage.