শ্রীলঙ্কার মাটিতে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ‘পুনর্জন্ম’

শ্রীলঙ্কার মাটিতে এতোদিন জিম্বাবুয়ের কোনো জয়ই ছিলো না। অথচ এবার, ১৬ বছর পর শ্রীলঙ্কায় সিরিজ খেলতে এসে কী বিস্ময়ই না উপহার দিলো তারা। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে আজ হাম্বানতোতায় তৃতীয় জয় পেয়েছে তারা। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাদেরই বিপক্ষে অবিস্মরণীয় সিরিজ জিতেছে জিম্বাবুয়ে। এই সিরিজ জয়কে চোখ বন্ধ করে জিম্বাবুয়ান ক্রিকেটের পুনর্জন্ম বলে স্বীকৃতি দিয়ে দেয়া যায়।

আজ হাম্বানতোতায় আগে ব্যাটিং করে ৫০ ওভারে মাত্র ২০৩ রান করেছে শ্রীলঙ্কা। আট উইকেট হারিয়ে। এই ২০১৭ সালে এসে শ্রীলঙ্কা যেনো ব্যাটিং করলো প্রস্তরযুগের মতো করে। আধুনিক ক্রিকেটে ৫০ ওভারে ২০৩ রান করা তো আসলে চরমতম ব্যর্থতার উপাখ্যানই।

এতো কম রানে শ্রীলঙ্কাকে আটকে ফেলেই সিরিজ জয়ের মঞ্চটা প্রস্তুত করে রেখেছিলো জিম্বাবুয়ে। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ১৪ ওভার দুই বলে ৯২ রানের ওপেনিং জুটি গড়ে উল্লাসের প্রথম আয়োজনটাও করে ফেলেন মাসাকাদজা ও সলোমোন মায়ার।

কিন্তু পরের কাজটা সহজ ছিলো না। নিয়মিত উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ের বাড়া ভাতে ছাই ছিটিয়েই দিচ্ছিলো শ্রীলঙ্কা। ১৪৮ রানে তিন উইকেট থেকে ১৭২ রান পর্যন্ত আসতে জিম্বাবুয়ে হারায় আরো চার উইকেট। এই পর্যায়ে এনে মনে হয়েছিলো সিংহের ডেরা থেকে দুই জয়ের সুখস্মৃতি নিয়েই ফিরতে হবে হিথ স্ট্রিকের শিষ্যদের।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। হ্যামিল্টন মাসাকাদজার অভিজ্ঞতা জিম্বাবুয়েকে দিয়েছে ৭৩ রানের নির্ভরতা। এরপর সিকান্দার রাজা ২৭ বলে ২৭ রানের দৃঢ়তাপূর্ণ এক ইনিংস খেলে জিম্বাবুয়েকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান। যাকে আসলে জিম্বাবুয়ে
ক্রিকেটের নবজাগরণের শুরুও বলা যায়।

নব্বইয়ের দশকেও বিশ্বের বড় বড় দলের সঙ্গে হাড্ডা লড়াই করেছে জিম্বাবুয়ে। নতুন শতাব্দিতে এসেও তাদের ক্রিকেটে ছিলো এগিয়ে যাওয়ার চিহ্ন। কিন্তু দেশীয় রাজনীতির কালো ছায়া জিম্বাবুয়েকে এগোতে দেয়নি। সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গদের প্রতিদের সরকারের বিরুপ মনোভাবের কারণে হোঁচট খেয়েছে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট। সেই হোঁচটে তারা যতোটা পিছিয়েছি, ততোটা পিছন থেকে আর এগোতে পারেনি তারা।

এই পরিস্থিতিতে জিম্বাবুয়ে ক্রমেই হয়ে উঠেছে ক্ষয়িষ্ণু শক্তির দল। যতো দিন দিন গেছে, তারা ততোই হারিয়েছে স্বর্ণসময়ের অতীত, ততোই তারা পড়ে গেছে ব্যর্থতার চোরাবালিতে। যার প্রভাব পড়েছে আইসিসির র্যাঙ্কিংয়েও— জিম্বাবুয়ে এখন আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডেরও নিচে!

এই রকম বন্ধুর সময়ে তাদের দরকার ছিলো প্রেরণা পাওয়ার মতো এক কীর্তি। যা তাদেরকে আবার নতুন করে ক্রিকেটে ভালো করার তাড়না যুগাতে পারে। জিম্বাবুয়ে সেই জয়টাই পেলো শ্রীলঙ্কা সফরে এসে।

হতে পারে বর্তমান শ্রীলঙ্কা দলটা তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ দলগুলোর একটি। তারপরও নিজেদের হারিয়ে খুঁজতে থাকা জিম্বাবুয়ের চেয়ে খারাপ তাদেরকে বলা যাবে না। সুতরাং জিম্বাবুয়ের এই সিরিজ জয়ের কীর্তিটাকে ‘আপসেট’ বলার কোনো সুযোগই নেই।