১০ পেরিয়ে আরো সামনে চোখ মাহমুদুল্লাহর

২০০৭ সালে ২৫ জুলাই, শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে রঙিন জার্সিতে বাংলাদেশের পক্ষে মাঠে নেমে গেলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বল হাতে পাঁচ ওভারে ২৮ রান দিয়ে দুই উইকেট এবং ব্যাট হাতে ৫৪ বলে ৩৬ রান দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেন তিনি। এরপর নানা উত্থান-পতনের গল্পের ভিতর দিয়ে আজই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ১০ বছর পার করলেন মাহমুদুল্লাহ। বর্তমান বাংলাদেশের দলের পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন তিনি।

১০ বছর পূর্তির দিনে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন এই অলরাউন্ডার। কথা বলেছেন নানা বিষয় নিয়ে। জানিয়েছেন, ১০ বছর ধরে জমানো অভিজ্ঞতা ঢেলে দিয়ে তিনি এখন তাকাতে চান আরো সামনের দিকে। যেতে চান আরো বহুদূর। মাহমুদুল্লাহর কথাগুলো তুলে ধরা হলো টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের পাঠকদের জন্য।

দুদিন আগে হঠাৎ ইনজুরিতে পড়লেন, এখন কী অবস্থা?
আজকে ফিজিও দেখলেন, পরীক্ষা করলেন; আশা করি কাল থেকে সাইক্লিং শুরু করবো। গত দুদিনের চেয়ে এখন অবস্থা ভালো।

আজই তো ক্যারিয়ারের ১০ বছর পূর্তি হলো। এতো লম্বা পথ পারি দিয়ে এসে কেমন লাগছে?
ভালো লাগছে। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ১০টা বছর পার করলাম। চেষ্টা করবো আরো বেশ কয়েক বছর যাতে পারফর্ম করে যেতে পারি।

আপনার আগে বর্তমান দলের আরো চারজন ১০ বছর পূরণ করেছেন। এতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় থাকায় দল কতোটা কী করবে ভবিষ্যতে?
আমার কাছে মনে হয়ে, মাশরাফি ভাই, সাকিব-তামিম-মুশফিকও ১০ বছর পার করেছে; এটা একটা ইতিবাচক দিক। এখন দায়িত্বও কিন্তু বেড়ে গেছে। যে কয় বছর আরো খেলবো, এই দায়িত্ব যাতে পালন করতে পারি। ওরাও আশা করি অনেক দিন আরো খেলবে। এই কয়েকজনের অভিজ্ঞতা এবং তরুণদের নিয়ে গড়া আমাদের দলের কম্বিনেশনটা এখন চমৎকার।

আপনার যখন অভিষেক হয়, তখন বোলিং করতেন নিয়মিত, ব্যাটিং করতেন নিচের দিকে। আপনার খেলার জায়গাটা ঠিক নির্দিষ্ট ছিলো না। এতোদিন পরে এসে খেলোয়াড় হিসেবে আপনার মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে?
আমার কাছে মনে হয়, মানসিকভাবে এখন আমি আগের চেয়ে গোছালো, ইতিবাচক এবং আক্রমণাত্মক। এই বিষয়গুলো আমাকে পারফর্ম করতে সাহায্য করে। আর ফিটনেস এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। তবে এটা ধরে রাখাও একটা গুরুত্বপূর্ণ।

এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারে কোনো অপূর্ণতা আছে?
আলহামদুলিল্লাহ। আসলে যতো বছর ধরে খেলছি এতে তো অনেক উত্থান-পতন আছে, অপূর্ণতার কথা বললে অনেক কিছুই বলা যায়। কিন্তু তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এখন আমরা যেভাবে পারফর্ম করছি, এটা আরো কয়েক বছর করতে পারাটা। আমরা যখন শুরু করি, তখন ১০ নম্বরে ছিলাম। এখন চাই সেরা তিন বা চারে থাকতে। এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা খেলতে চাই।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব নিয়ে কোনো স্বপ্ন দেখেন?
এখন খেলোয়াড় হিসেবে আছি। সেটা নিয়েই চিন্তা করছি। খেলোয়াড় হিসেবে দলকে কতোটা ভালোভাবে সহায়তা করা যায়, সেটা নিয়েই ভাবছি ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা আসলে সময়ই বলে দিবে।

দলে পাঁচজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার এবং তরুণদের দারুণ কম্বিনেশন; বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন আছে?
এটা অনেক সময়ের ব্যাপার। আমি যেটা আমি মনে করি, ২০১৮ সালটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই বছর আমাদেরকে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাস দিবে। সুতরাং বিশ্বকাপের আগের বছরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৮ সালে আমরা যতো ভালো খেলবো বিশ্বকাপের মঞ্চে আমরা ততোই আত্মবিশ্বাসী থাকবো।

ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার আগে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
এভাবে চিন্তা করি না। আমি আসলে লম্বা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পছন্দ করি না। ছোট ছোট লক্ষ্য নিয়ে এগোতে পছন্দ করি।

আপনার ক্যারিয়ারে তো অনেক কিছুই স্বরণীয়। তারপরও বিশ্বকাপে পরপর দুটি সেঞ্চুরি এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি; কোন উপলক্ষ্যটা বেশি স্মরণীয়?
সবগুলোই স্মরণীয়। আমার বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ দলের হয়ে যখন যেখানে যেভাবে অবদান রাখি না কেনো, সবই সমানভাবে স্মরণীয়।

ক্যারিয়ারের শুরুতে আপনাকে নিয়ে নানা কথা হয়েছে। এখনো অনেক কথা হয়। ১০ বছর ক্রিকেট খেলার পর ক্রিকেটার হিসিবে নিজেকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
প্রতিটি দিনই আসলে চ্যালেঞ্জিং। আপনি কখনোই স্থির হতে পারবেন না। যতো দিন যাবে, আপনাকে নিয়ে প্রতিটি টিম ততোই কাজ করবে। আমি মানসিকভাবে এখন অনেক গোছালো। এটা তাই বুঝতে পারি যে, আমার কোথায় শক্তি আছে। এগুলো নিয়ে সব সময় কাজ করি। প্রতিনিয়তই কাজ করতে হবে। আমি জানি কষ্টের কোনো বিকল্প নেই। এটা ধরে রাখাই জরুরি।

ক্রিকেট ছেড়ে দিলে জীবন কেমন হবে, সেটা নিয়ে ভাবেন?
আসলে ওইভাবে চিন্তা করিনি এখনো। আমার মনে হয় ফিটনেসটা গুরুত্বপূর্ণ। ইচ্ছা আছে, নিজেকে ফিট রাখার; ফিজিক্যালি এবং মানসিকভাবে। নানা রকম বাধা থাকবে তা কাটিয়ে উঠা জরুরি। আর গত ১০ বছরে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে, তা জাতীয় দলের হয়ে ঢেলে দেয়াই আমার ভাবনার মূল বিষয়।