ম্যানেজমেন্টের নয়, মুশফিকের দোষ দেখছেন পাপন

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে শোচনীয়ভাবে হেরেছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচেই প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়েছে মুশফিকের অধিনায়কত্ব। এ নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবস্থা এখন টালমাটাল। এর মধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বললেন যে, মুশফিক গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ক্ষতি করছে। তিনি দেখছেন মুশফিকের দোষ। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ চলার সময় ‘মুশফিকের সমস্যা আছে’ বলে যে মন্তব্য তিনি নিজে করেছিলেন, সে বিষয়ে কোনো কিছু বলেননি বোর্ড প্রধান।

ব্লুমফন্টেইন টেস্টের প্রথম দিন শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মুশফিক বলেন যে, টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তের কারণেই তিনি বৃত্তের বাইরে ফিল্ডিং করেছেন। যেখানে সাধারণত অধিনায়কদের ফিল্ডিং করতে দেখা যায় না। এ ছাড়া, টস নিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন তিনি।

মুশফিকের ও বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আজ বিসিবিতে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নাজমুল বলেন, ‘মুশফিক যে মন্তব্য করেছে, তা দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। কোনো অধিনায়ক টস নিয়ে এমন মন্তব্য করতে পারে না। এটা দেশের ক্রিকেটের ক্ষতি করছে।’

এর আগে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট চলার সময় মুশফিকের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে বিতর্ক ওঠে। তখন মুশফিক বলেন যে, তিনি কোথায় ব্যাটিং করবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। সে সময় নাজমুল দাবি করেছিলেন যে, বোর্ড থেকে মুশফিককে চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামার কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু মুশফিক তা শোনেননি।

নাজমুল তখন মুশফিকের অধিনায়কত্বের সমালোচনা করেন বলেন, ‘ওর সমস্যা আছে। মাশরাফিও তো অধিনায়কত্ব করে। তার তো সমস্যা হয় না। সামনে সাকিব অধিনায়কত্ব করবে। তারও কোনো সমস্যা হবে না।’ এমন মন্তব্য করার এক দিন পরই অবশ্য নাজমুল দাবি করেন যে, তিনি এ রকম কিছু বলেননি।

এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে মুশফিক সবচেয়ে বেশি সমালোচনার জন্ম দেন পরপর দুই ম্যাচে টস জিতে বোলিং নিয়ে। যদিও এ কথা বাংলাদেশ ক্রিকেটে গোপন নয় যে, টস জিতলে কী করতে হবে, সে সিদ্ধান্ত নানা কারণেই মুশফিক নিতে পারেন না। দিনে দিনে তাকে যে ‘টিম ম্যানেজমেন্ট’ কোণঠাসা করে রেখেছে, সে কথাও জানেন ক্রিকেটাঙ্গনের প্রায় সবাই।

এরই মধ্যে মুশফিককে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবি উঠেছে। সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে নিজের মত জানাতে গিয়ে বলেছেন যে, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ক্ষতি করবে।

নাজমুল হাসান পাপনও এ বিষয়ে ‘ধীরে চলো’ নীতির ইঙ্গিত দিলেন। তিনি বলেন, ‘অধিনায়ক বদলে ফেলার কোনো সিদ্ধান্ত বোর্ড নেয়নি। মুশফিক দেশে ফিরলে এ বিষয়ে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

সব মিলিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মুশফিক হয়তো অধিনায়কত্ব হারাতে যাচ্ছেন। কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৭ থেকে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে মুশফিক গত দুই তিন বছরে কিভাবে প্রায় ‘ব্যক্তিত্বহীন’ অধিনায়ক হয়ে উঠলেন, তার কারণ খুঁজতে যাওয়ার পথে হাঁটছে না কেউ। মুশফিকের এই পরিণতি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভিতরের রুগ্ন রূপটাই বোধহয় বের করে দিচ্ছে।