চান্দিমালের প্রশংসায় পঞ্চমুখ পূর্বসূরী সাঙ্গাকারা

কুমার সাঙ্গাকারা আর মাহেলা জয়াবর্ধনের বিদায়ের পর লঙ্কান ক্রিকেট হয়ে উঠেছিলো একটা সম্ভাব্য ধ্বংসস্তুপ। এই দুজনের শূন্যতা পূরণে কতো দিন লাগবে লঙ্কানদের, তা নিয়ে ভীত ছিলেন স্বয়ং সাঙ্গাকারা ও জয়াবর্ধনেও। কিন্তু তাদের ভয়টা হয়তো এখন আর আগের মতো নেই। কারণ তাদেরই গড়ে যাওয়া দিনেশ চান্দিমাল যে শিখে গেছেন কিভাবে সংক্ষুব্ধ ঝড়ের মধ্যেও প্রায় ডুবতে বসা জাহাজকে নোঙর করে ফেলা যায়। উত্তরসূরী এই অধিনায়কের প্রশংসায় তাই মঞ্চমুখ হতে দেখা গেলো পূর্বসূরী কুমার সাঙ্গাকারাকে।

দুদিন আগেই পাকিস্তানকে পরপর দুই ম্যাচে হারিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতেছে শ্রীলঙ্কা। তাও পাকিস্তানের ‘ঘর’ আরব আমিরাতে। ২০১০ সালে আরব আমিরাতকে নিজেদের ঘর হিসেবেই ব্যবহার করছে পাকিস্তান। গত সাত বছরে সেখানে টেস্ট হারের কোনো ইতিহাস নেই তাদের। না থাকা ইতিহাসটাই রচনা করেছে শ্রীলঙ্কা।

হোক পাকিস্তানে বা আরব আমিরাতে, ২০০৭ সালের পর আর কোনো হোম সিরিজ হারেনি পাকিস্তান। বরং ঘরের মাঠে দিনকে দিন তারা হয়ে উঠছিলো অপরাজেয়। এই অহমের প্রাচীরটা ভেঙে পড়লো মিসবাহ উল হক ও ইউনিস খানের বিদায়ের পর প্রথম সিরিজেই।

ইতিহাস গড়া এই সিরিজ জয়ের প্রথম ম্যাচে ১৫৫ রানের অধিনায়কোচিত এক ইনিংস খেলেন চান্দিমাল। পরের ম্যাচেও তার ব্যাট থেকে আসে মহামূল্যবান এক হাফ সেঞ্চুরি। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া তো একেই বলে। যেখানে কঠিন বিপদেও অধিনায়ক থাকবেন পাহাড়ের মতো দৃঢ়, যেখানে টলায়মান আত্মবিশ্বাস নিয়ে দলের প্রায় নুইয়ে পড়ার ক্ষণে অধিনায়ক শোনাবেন প্রতিরোধের বাণী।

চান্দিমালের এমন পারফর্ম এবং অধিনায়কত্বের প্রশংসায় সাঙ্গাকারা বলেন, ‘চান্দিমাল যেভাবে অধিনায়কত্ব করছে, চাপ সামাল দিচ্ছে, তা এক কথায় অসাধারণ। দেখতেই ভালো লাগছে যে, সে চাপের সময় দায়িত্ব নিচ্ছে, দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছে অসাধারণ দক্ষতায়।’

২০১১ সালে, যখন চান্দিমালের টেস্ট অভিষেক হয়, তখনকার লঙ্কান কোচ দারুণ এক কাজ করেছিলেন। দলের তরুণ সদস্যদের জুটি বেধে দিয়েছিলেন জ্যেষ্ঠ একজনের সঙ্গে। যা আসলে তরুণ ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারের মোড়ই ঘুরিয়ে দিয়েছে। জানা যায়, সে সময় চান্দিমালকে কোচ দিয়েছিলেন সাঙ্গাকারার সঙ্গে। খেলার বাইরে চান্দিমাল খুব কাছ থেকে পেয়েছেন সাঙ্গাকারার সান্নিধ্য। তাকে নিয়ে ডিনারে যেতেন সাঙ্গাকারা। নিয়মিত চান্দিমালকে তিনি নিয়ে যেতেন কফিশপেও।

ওই সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে সাঙ্গাকারা বলেন, ‘চান্দিমাল এমনিতেই খুব মেধাবী। তাকে খুব বেশি কিছু বুঝিয়ে দিতে হয়নি। আমি শুধু তাকে বলতাম, কিভাবে লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করে যেতে হবে। কখন ধীরে খেলতে হবে, কখন দ্রুত খেলতে হবে; কিংবা কিভাবে ৪০ করে ফেললে ১০০ পর্যন্ত যেতে হবে।’

সাঙ্গাকারার কাছ থেকে অধিনায়কত্বের দীক্ষাও পেয়েছেন চান্দিমাল। ক্যারিয়ারের শুরুর এই বিষয়গুলো গড়ে দিয়েছে লঙ্কানদের দীর্ঘ মেয়াদের অধিনায়ককে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কিছুদিন আগে ঘরের মাঠে বিপর্যয়ের পর অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। তারপর থেকেই অধিনায়কত্বের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন চান্দিমাল।

এই তরুণ বাজিমাত করলেন অধিনায়ক হিসেবে তার প্রথম বিদেশ সফরেই। এই সাফল্য নিশ্চিতভাবেই তাকে গিয়ে দিলো আরো বড় সাফল্যের জন্য। এর মধ্যে আবার পেলেন পূর্বসূরীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। যা তার আত্মবিশ্বাসের পারে জোর হাওয়া বইয়ে না দিয়ে পারেই না! চান্দিমালের ভবিষ্যৎটা যেনো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এখনই।