চিনে নিন মুস্তাফিজকে

বাংলাদেশ ক্রিকেটে মুস্তাফিজের আবির্ভাব রূপকথার গল্পকেও হার মানানোর মতো। দুই বছর আগেও মুস্তাফিজের কাছে জাতীয় দল ছিলো বহুদূরের কোনো বাতিঘর। যা কেবল দূর থেকেই যায়, কাছে ঘেসা যায় না কিছুতেই। অথচ দুই বছর জাতীয় দলের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় তারকাদের একজন তিনি। কী বিস্ময়কর ব্যাপার!

দুই বছর আগে ঢাকায় পেস বোলার খোঁজার এক কার্যক্রমে মুস্তাফিজের উপর চোখ পড়ে বিসিবির। তারপরই সুযোগ পেয়ে যান অনূর্ধ্ব-১৭ দলে। নেটে তার প্রকৃতিপ্রদত্ত বোলিং ক্ষমতা মুগ্ধতা ছড়ায় কোচের মনে। ধীরে ধীরে খুলে যেতে থাকে সম্ভাবনার দুয়ার। জায়গা মিলে যায় জাতীয় যুব দলে। এরপরের গল্পটা কেবলই সাফল্যের।

মুস্তাফিজের জন্ম সাতক্ষীরার অজপাড়াগাঁয়ে। যেখানে ক্রিকেটের অনুশীলনের কোনো ব্যবস্থাও নেই। অনুশীলন করতে হলে মুস্তাফিজকে যেতে হতো ৪০ কিলোমিটার দূরের শহরে। প্রতিদিন তাকে সেখানে নিয়ে যেতেন সেজো ভাই মোখলেছুর রহমান। ভারতকে গুড়িয়ে দেয়ার ম্যাচ শেষে সংবাদ মাধ্যমের কাছে নিজের বেড়ে উঠার গল্প বলেছেন মুস্তাফিজ। জানিয়েছেন ঠিক কীভাবে সাতক্ষীরার ধুলোমাখা মেঠোপথ থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উত্তপ্ত রাজপথে চলে এলেন তিনি।

মুস্তাফিজের ক্রিকেটার জীবনের শুরু নিজ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামে। ফাইফ স্টার বলের ব্যাটসম্যান ছিলেন আগে। তার দুরন্তপনার সবটুকুজুড়ে ছিলো কেবলই ক্রিকেট। ক্রিকেট নিয়ে তার পাগলামি পুরোপুরি প্রশ্রয় পেয়েছে পরিবারে। বড় ভাই তো বটেই, বাবা মার কাছ থেকেও পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমিরকে আদর্শ মানা এই তরুণ।

আমিরকে আদর্শ মানা? সে তো ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে কলঙ্কিত করেছে ক্রিকেটকেই। এই কথা মনে করিয়ে দিতেই, মুস্তাফিজ জানান, নাহ- আমিরকে তার পছন্দ কেবল বোলার হিসেবে।

বোলিংয়ের বিষে প্রতিপক্ষকে নীল করে দিলেও মাইক্রোফোনের সামনে মুস্তাফিজ এখনো লাজুক কিশোর। সামনে বসা দর্শকের কাছে কথা পৌঁছাতে মাইক্রোফোন দিয়েও। লজ্জায় বন্ধ হয়ে আসে যার গলার স্বর। 

ভারতের মতো দলের বিপক্ষে অভিষেকেই পাঁচ উইকেট। কতো যে বিশাল ব্যাপার সেটাই হয়তো এখনো উপলব্ধি করতে পারেন না মুস্তাফিজ! অনুভূতি জানাতে গিয়ে কেবল বললেন, ‘ভালো লাগছে।’

তার বিষাক্ত কাটারে কাটা পড়েছেন পাঁচ পাঁচজন ব্যাটসম্যান। এর মধ্যে আছেন রোহিত শর্মাও। ওয়ানডেতে দুইবার ডাবল সেঞ্চুরি করা ব্যাটসসম্যান তিনি। সেই তাকেও বশ করেছেন কাটারের বিষে। পাঁচ উইকেটের মধ্যে এটাই কি মুস্তাফিজের সবচেয়ে কাঙ্খিত উইকেট? মুস্তাফিজ জানালেন, না। পাঁচটি উইকেটই তার সমান প্রিয়। আলাদা করে প্রিয় বলে কিছু নেই।

এই কাটারটা কোত্থেকে শিখলেন তিনি? উত্তরে মুস্তাফিজের কণ্ঠে শিশুসূলভ সরলতা। বলেন, ‘নেটে বিজয় ভাইয়া (এনামুল হক বিজয়) একদিন কাটার করতে বললেন। আমি বেশ কয়েকটা কাটার করলাম তাকে। দেখলাম বিজয় ভাইয়াও তা খেলতে পারছে না।’ মানে কাটারে যে কী পরিমাণ বিষ আছে, তা মুস্তাফিজ শিখেছেন নেটেই। সেই বিষটাই কীভাবে ধ্বংস করে ছাড়লো ভারতকে!

চার পেসার নিয়ে গড়া বাংলাদেশ একাদশ যাদের মনে বিস্ময় ছড়িয়েছিলো, ম্যাচ শেষে মুস্তাফিজের কপালে মাশরাফির চুমু এঁকে দেয়ার দৃশ্য দেখে নিশ্চয় তারা বুঝে গেছেন, এই বাংলাদেশ দুর্নিবার। চার পেসার নিয়ে খেলার দুঃসাহসটা তাদেরকেই মানায়।

আপনি আরো পড়তে পারেন

হারের পর কিছু খান নি ধোনিরা!

বিতর্কের তুঙ্গে ধোনি

মিরপুরে এলো অবিস্মরণীয় জয়