দ্বিতীয় ম্যাচেই নায়ক সাইফুদ্দিন

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপিএল শুরু হয়েছিলো হতাশার হার দিয়ে। দলের হারের দিনে সুবিধা করতে পারেননি কুমিল্লার ঘরের ছেলে অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনও। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে, চিটাগংয়ের বিপক্ষে জ্বলে উঠলো কুমিল্লা এবং সেটা সাইফুদ্দিনের হাত ধরেই। মানে বিপিএলে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই নায়ক হয়ে গেলেন এই তরুণ।

একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে অনন্ত হাহাকার, সেই হাহাকার ঘুচানোর স্বপ্নে জ্বালানি দিয়ে চলা সাইফুদ্দিন কদিন আগেই সফর করে এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানে দুই টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট হাতে দারুণ দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। কিন্তু হতাশ করেছিলেন বল হাতে। যেখানে তাকে ডেভিড মিলারের হাতে এক ওভারে সহ্য করতে হয়েছে পাঁচটি ছয় হজম করার কষ্ট।

তবে সেই কষ্টটা আর মনে নেই তার। বরং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নিয়ে আসা অভিজ্ঞতাকে তিনি মনে করছেন তার পাথেয়। মঙ্গলবার চিটাগংয়ের বিপক্ষে চার ওভারে ২৪ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাইফুদ্দিন বলেন, ‘আগের বিপিএলে আমি কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। তবে এবারের বিপিএলটা উপভোগ করছি।’

উপভোগের মন্ত্র যে কোনো পরিস্থিতিতে শক্ত থাকা এবং সেটা যে তিনি শিখে এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে, তা বলতেও দ্বিধা করেননি সাইফুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সফরটা আমার জন্য অনেক কিছু শেখার উপলক্ষ্য ছিলো। সেখান থেকে যে অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছি, তা ভবিষ্যতে আমার খুব কাজে লাগবে বলেই বিশ্বাস করি।’

ভবিষ্যতে কী হবে— তা আসলে বলে দিবে ভবিষ্যতই। তবে আপাতত সাইফুদ্দিনকে মনে হচ্ছে তার সময়ের যে কারো চেয়ে বেশি দৃঢ়তাপূর্ণ। মঙ্গলবার চিটাগং তাদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসের আট ওভারেই করে ফেলে ৮০-এর বেশি। যা নিশ্চিতভাবেই চিন্তিত করে দিচ্ছিলো কুমিল্লাকে। কিন্তু সাইফুদ্দিন বললেন, কোনো চিন্তাই ছোঁয়নি তাকে।

তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট খেলাটাই এমন। কখনো প্রচুর রান হবে, কখনো আবার ভালো হবে বোলিং। ওরা (চিটাগং) আট ওভারে ৮০ রান করে ফেলার পরও আমাদের বিশ্বাস ছিলো যে একটা ব্রেক থ্রো পেলেই আমরা ওদের ১৫০-এর নিচে আটকাতে পারবো এবং সেটা আমরা পেরেছি।’ ক্রিকেটার সাইফুদ্দিনের মানসিক দৃঢ়তার অনেক প্রমাণই পাওয়া যাচ্ছে তার এই মন্তব্য থেকে।

চিটাগংকে ১৫০-এর নিচে আটকানোর ইনিংসে সাইফুদ্দিন উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনটি। এর মধ্যে দুটি আবার একই ওভারে— সৌম্য সরকার ও এনামুল বিজয়ের উইকেট। যা চিটাগংয়ের আরো বেশি রান তোলার পথটা সংকুচিত করে দেয়।

ম্যাচ শেষে ওই দুই উইকেটের মধ্যে সৌম্যরটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো বলে মন্তব্য করেন সাইফুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘উনি (সৌম্য) তখন সেট হয়ে গিয়েছিলেন। তার উইকেট নেয়াটা তাই খুব দরকার ছিলো।’

দরকারের সময় এভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়াটাকে প্রায় অভ্যাস বানিয়ে ফেলছেন সাইফুদ্দিন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই যেমন, দুই টি-টোয়েন্টিতে ওই একটা ওভারের কথা বাদ দিলে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। বিশেষ করে ব্যাট হাতে পরপর দুই ম্যাচে তার করা ৩৯* ও ২৩ রানের ইনিংস দুটি ছিলো এক কথায় অনবদ্য। তখনও তাকে বিশেষভাবে দরকার ছিলো বাংলাদেশের। বিপিএলে যদি এভাবে আরো নায়ক হয়ে উঠতে পারেন সাইফুদ্দিন, তাহলে জাতীয় দলের প্রয়োজনেও নিশ্চয় আরো দৃঢ়তা দেখাতে পারবেন এই তরুণ।