ক্রেমারের ঘূর্ণির পর সানজামুল-মোস্তাফিজের চমক

আগের দুই ম্যাচে যে রকম দাপুটে জয় পেয়েছিলো বাংলাদেশ, তাতে ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে ছিলো আরো দাপট দেখানোর প্রত্যাশা। কিন্তু প্রথম ইনিংসে উল্টো হোঁচট খেলেন মাশরাফিরা। গ্রায়েম ক্রেমারের স্পিনে এ দিন এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন। তবে লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের ভালো পুঁজিই পায়। 

টপ অর্ডারের দুই স্তম্ভ— তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে মিডল অর্ডারের মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও আউট হন ক্রেমারের বলে। তার চতুর্থ শিকার হন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ক্রেমারের এই তাণ্ডবের আগে বাংলাদেশের প্রথম উইকেটটা নেন কাইল জার্ভিস। এনামুল হক বিজয় এ দিন এক রানের বেশি করতে পারেননি।

দলীয় ছয় রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর শতরানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। সাকিব তিন নম্বরে ব্যাটিং শুরু করার পর এই প্রথম দ্বিতীয় উইকেটে শতরান পেলো বাংলাদেশ। এর আগের ম্যাচে তারা করেছিলেন ৯৯ রান।

এই জুটিতে দুটি মাইলফলক স্পর্শ করেন তামিম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ছয় হাজার ওয়ানডে রান করার পাশাপাশি একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে একটি নির্দিষ্ট ভেন্যুতে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে রান করার বিশ্বরেকর্ডটটাও এখন তার।

এ দিন তামিম সিরিজে তার টানা তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি করেন। যা সেঞ্চুরিতে পরিণত করার যথেষ্ট সময় ও সুযোগ ছিলো তার সামনে। কিন্তু তামিম তা পারেননি। হাফ সেঞ্চুরিতে পরিণত করার বিষয়ে তার যে দুর্বলতা, তিনি আজ তা বাড়িয়ে নিয়েছেন আরো একটু।

তামিমের দুই মাইলফলক ছোঁয়ার কীর্তি ও সেঞ্চুরি ছুঁতে না পারার আরো একটি আক্ষেপের দিনে টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি পান সাকিব আল হাসান। তিন নম্বরে নেমে এটি তার দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে তিন নম্বরে চার ইনিংস খেলে দুটি হাফ সেঞ্চুরি করেন সাকিব।

তামিম-সাকিবের শতরানের জুটির পরই শুরু হয় ধস। নিজে আউট হওয়ার আগে, তামিম আরেক প্রান্ত দিয়ে মাত্র ১৮ ও দুই রান করে বিদায় নেতে দেখেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। দলীয় ১৬৩ রানে আউট হন তামিম। এরপর জুটি গড়ার দায়িত্ব পড়ে সাব্বির রহমান ও নাসির হোসেনের কাঁধে। কিন্তু দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হন তারা।

নাসিরের আউটটা স্কুল-ক্রিকেটীয় হলেও, সাব্বিরের আউটটা ছিলো স্রেফ দুর্ভাগ্য। কাইল জার্ভিসের নিরীহদর্শন অফস্টাম্পের বাইরের বল মিড উইকেটের দিকে সজোরে খেলেন সাব্বির। বল যাচ্ছিলো ক্রেইগ আরভিনের বাঁ দিক দিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে পড়ে এক হাতের বিস্ময়কর এক ক্যাচ নেন তিনি। ক্যাচটা যে নিতে পারবেন, আরভিন নিজেও হয়তো তা মনে করেননি!

সাব্বির-নাসিরের হতাশার পর মাশরাফির দিকে তাকিয়ে ছিলো মিরপুর উপস্থিত হওয়া হাজার পাঁচেক দর্শক। কিন্তু দিনটা তার ছিলো না। আট বলে কোনো রান না করেই ফেরত যেতে হয় তাকে। ক্রেমারের চতুর্থ শিকার হন মাশরাফি।

দলীয় ১৭০ রানে আট উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ২০০ রান নিয়ে সংশয় জেগে উঠে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে। কিন্তু সিরিজের আগে লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে খালেদ মাহমুদ সুজন যে কাজ করেছিলেন, তার সুফলের কিছুটা আজ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ তিন ব্যাটসম্যান যোগ করেন ৪৬ রান।

তাদের এই দৃঢ়তায় বাংলাদেশের ইনিংস পৌঁছে যায় ২১৬ রানে। সানজামুল ১৯ রান করে চমকে দেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পাঁচ হাফ সেঞ্চুরির মালিক সানজামুলের এই ইনিংসের চেয়ে বেশি চমক জাগানিয়া ছিলো মোস্তাফিজের ১৮ রান। এ ছাড়া চার বলে রুবেলের আট রানও মিরপুরের গ্যালারি মনে রাখবে অনেক দিন। বিশেষ করে কাইল জার্ভিসকে স্ট্রেইট দিয়ে মারা ছয়টি যেনো একেবারে চোখে লেগে থাকার মতো দৃশ্য!

২১৬ রানের পুঁজি নিয়ে খুব বেশি আশা হয়তো করা যায় না, কিন্তু বাঁহাতি স্পিনে জিম্বাবুয়ের যে চিরন্তন দুর্বলতা এবং বাংলাদেশ দলে সাকিব ও সানজামুলের উপস্থিতি; সব মিলিয়ে বাংলাদেশের আশার বাতিটা যথেষ্টই প্রজ্জ্বল।