প্রতিরোধ গড়তেও অক্ষম এই জিম্বাবুয়ে!

লেখাটা শুরু হতে পারতো বাংলাদেশের টানা তৃতীয় জয়ের গল্প দিয়ে। শুরু হতে পারতো প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তামিম ইকবালের ছয় হাজার রান করা নিয়েও। কিন্তু এই দুই ব্যাপার ছাপিয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ার বিষয় হয়ে উঠলো মাত্র ২১৭ রানের লক্ষ্য পেয়েও জিম্বাবুয়ের সামান্য প্রতিরোধ গড়তে না পারার অক্ষমতা।

২১৬ বা এর চেয়ে কম রান করে বাংলাদেশের জয় মাত্র তিনটি ম্যাচে। মানে এই রান করে জেতার আশা বাংলাদেশেরও হয়তো খুব বেশি ছিলো না। কিন্তু জিম্বাবুয়ের কাছে ২১৬ রানই হয়ে উঠলো দুর্গম্য প্রাচীর, অনতিক্রম্য সীমানা।

জিম্বাবুয়ের অক্ষমতা প্রকাশের ইনিংসটির আগে, বাংলাদেশের পরিস্থিতিও ছিলো কম্পমান। দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান একশর বেশি রান যোগ করে দিলেও, বাংলাদেশ তুলে মোটে ২১৬ রান। টপ অর্ডারে এনামুল হক বিজয় এক রানে বেশি করতে পারেননি। আগের ম্যাচে দুইটা লাইফ পেয়ে ৩৫ রান করেছিলেন তিনি। কিন্তু এবার আর ওই সৌভাগ্য হয়নি তার।

তবে তার বিদায় তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি বাংলাদেশের দারুণ শুরুর পথে। তামিমের টানা তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি ও ওয়ানডে ক্রিকেটে ছয় হাজার রান করার মাইলফলক স্পর্শ করার পথে সাকিব আল হাসান তিন নম্বরে তুলে নেন তার টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। এ দুজনের ব্যাটে চড়ে বড় রানের ভিত পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

কিন্তু গ্রায়েম ক্রেমার দ্রুত মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহকে বিদায় করে দিলে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। তামিমের এক প্রান্ত ধরে রাখার প্রচেষ্টা থামে দলীয় ১৬৩ রানে। এর মাধ্যমে টানা তৃতীয় ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করেন তামিম এবং টানা তৃতীয়বার হাফ সেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে ব্যর্থ হন তিনি।

তারপরও বাংলাদেশ বড় রানের আশা করেছিলো সাব্বির ও নাসিরের ব্যাটে। কিন্তু এ দুজন করতে পারেননি কিছুই। সাব্বির ক্রেইগ আরভিনের দুর্দান্ত এক ক্যাচের শিকার হলেও নাসির আউট হন অত্যন্ত দৃষ্টিকটু শট খেলে। জাতীয় দলে তার জায়গাটা নিয়ে আমার জাগিয়ে তুললো প্রশ্ন।

বাংলাদেশের ইনিংসে তামিম-সাকিব জুটির পর সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত আসে লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায়। সানাজমুল-মোস্তাফিজ ও রুবেল মিলে যোগ করেন ৪৬ রান। এর মধ্যে ১৯ রান আসে সানজামুলের ব্যাট থেকে। ১৮ রান করেন মোস্তাফিজ আর রুবেল চার বলে করেন আট রান।

লোয়ার অর্ডারের দৃঢ়তায়ই মূলত দুইশ ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে এই রানই স্বস্তির কারণ হলেও, প্রথম ইনিংস শেষে তা নিশ্চয়ই ছিলো না। কিন্তু বোলারদের দৃঢ়তায় এই রানই শেষ পর্যন্ত হয়ে থাকলো যথেষ্ট। ২১৬ বা এর চেয়ে কম রানের পুঁজি নিয়েও বাংলাদেশ পেলে রানের হিসেবে চতুর্দশতম বড় জয়।

জিম্বাবুয়ের ইনিংসে প্রথম আঘাত হানেন মাশরাফি। স্লিপে দাঁড়ানো সাব্বির দৃষ্টি কেড়ে নেয়া এক ক্যাচে ফেরান হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে ১৪ রানে প্রথম উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে স্কোরবোর্ডে ৫০ তোলার আগে হারায় আরো তিন উইকেট। ম্যাচ থেকে তাদের বিদায় তখন হয়ে দাঁড়ায় কেবলই সময়ের ব্যাপার।

বাঁহাতি স্পিনের মতো এ দিন বাংলাদেশের পেসাররাও এদিন জিম্বাবুয়ের সামনে দেখা দেন দুর্বোধ্য রূপে। শেষ পর্যন্ত ১২৫ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। সাকিব আল হাসান টানা তৃতীয় ম্যাচে তুলে নেন তিন উইকেট। দুটি করে উইকেট নেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোস্তাফিজুর রহমান।

মোস্তাফিজুর রহমানের বোলিংয়ের দাপট অবশ্য কেবল দুই উইকেট দিয়ে বিচার করা যাচ্ছে না। তার দাপটটা বোঝাতে এই তথ্যাটা এখানে যোগ করা জরুরি যে, তার প্রথম স্পেলের চার ওভার থেকে মাত্র একটা রান নিতে পেরেছে জিম্বাবুয়ে! তার ওই স্পেলটাই হয়ে থাকতে পারে ২১৭ রানের লক্ষ্য পেয়েও ৯১ রানে হারার পথে জিম্বাবুয়ের অক্ষমতার প্রামাণ্য দলিল।