শেরে বাংলায় আবার ফিরলো ফাইনাল-বেদনা

শেরে বাংলার ‘শের’ হয়ে উঠা হলো না মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। শেরে বাংলায় খেলা আগের তিন ফাইনালের দুঃসহ স্মৃতি ফিরে এলো এবার। দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে ফাইনালে উঠা বাংলাদেশ লঙ্কানদের কাছে হেরে গেলো ৭৯ রানে। বাংলাদেশও যেনো হয়ে উঠলো নতুন চোকার্স!

লক্ষ্যটা ছিলো ২২২ রান। ওয়ানডেতে এই ধরনের তাড়া করা তেমন কোনো ঘটনাই না। কিন্তু বাংলাদেশ দেখালো এই রানও আসলে কখনো কখনো পাহাড়ের মতো বিশাল এবং দুর্গম্য।

বাংলাদেশ ধাক্কা খায় ২২২ রানের জবাব দিতে মাঠে নামার আগেই। শ্রীলঙ্কার ইনিংসের ৪২তম ওভারের সময় হাতে মারাত্মক চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন সাকিব আল হাসান। তার যে এই ম্যাচে ব্যাটিং করা হবে না, তা নিশ্চিত হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই। মানে বাংলাদেশকে লড়াইটা শুরু করতে হয় নয় উইকেট নিয়ে।

এনামুল হক বিজয়ের পরিবর্তে ওপেনিংয়ে সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ মিঠুন এই ম্যাচে ছিলেন তামিম ইকবালের সঙ্গী। কিন্তু বিরক্তির উদ্রেক ছাড়া তিনি করতে পারেননি কিছুই। দলীয় ১৭ রানে আউট হন তিনি। তার আগেই অবশ্য বিদায় নেন তামিম ইকবাল। প্রথম তিন ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা তামিম পরের দুই ম্যাচে ছুঁতে পারলেন না দুই অংকের ঘরই।

২২ রানে গিয়ে ব্যাটিং পজিশনে উপরে উঠে আসা সাব্বিরকে হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইনিংসে আরো একটা ধসকে তখন মনে হচ্ছিলো অবশ্যম্ভাবী। সেই ধস সামাল দেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। তারা চতুর্থ উইকেটে গড়েন ৫৮ রানের জুটি।

এতে বাংলাদেশ প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠে ঠিকই। কিন্তু চূড়ান্ত স্বস্তির জন্য এই জুটি মোটেই যথেষ্ট ছিলো না। জুটিটি ভাঙে মুশফিকের অকারণ বিলাসী শট খেলার প্রবণতায়। আকিলা ধনঞ্জয়ার যে বলে সুইপ করতে গিয়ে ফাইন লেগে ধরা পড়েন তিনি, তার আগের বলেই করতে গিয়েছিলেন রিভার্স সুইপ। মুশফিকের ওই সময়ের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে, আউট হওয়ার জন্য যেনো তর সইছিলো না তার। অথচ দল পড়ে ছিলো ঘোর বিপদে।

মুশফিকের বিদায় বাংলাদেশের জন্য কতোটা বড় আঘাত ছিলো, তা বোঝা যাচ্ছিলো ননস্ট্রাইকে থাকা মাহমুদুল্লাহর ব্যাটে ভর দিয়ে নুয়ে পড়া দেখেই।

মুশফিকের আউটের পর মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে জুটি গড়েন মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু এই জুটিতে ১০ রানের বেশি আসেনি। দলীয় ৯০ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। তখনও জেতার জন্য দরকার ১৩২ রান। যে রান ততক্ষণে পাহাড়ে পরিণত হয়েছে।

মাহমুদুল্লাহ-মিরাজ জুটি স্থায়ী হয় মাত্র ৩৩ বল। যোগ হয় ১০ রান। পাঁচ রানে মিরাজের দৃষ্টিকটু আউটে ভাঙে এই জুটি। এরপর আশাজাগানিয়া জুটিতে মাহমুদুল্লাহকে দারুণ সঙ্গ দেন সাইফুদ্দিন। কিন্তু ৩৭ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি তারা। এই জুটি ভাঙার পর বাংলাদেশের আর আশা ছিলো না।

শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৪২ রানে। গুটিয়ে যায় বলাটা ঠিক হলো না মনে হয়, কারণ উইকেট যে গেছে নয়টি! কিন্তু বাকি থাকা উইকেট— মানে সাকিব আল হাসান তো আসলে থেকেও ছিলেন না। সুতরাং গুটিয়ে যাওয়া কথাটাকে অশুদ্ধ বলারও সুযোগ নেই।

বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনের লেজটা ছেঁটে দেন অভিষিক্ত শেহান মাদুসানকা। পরপর তিন বলে মাশরাফি, রুবেল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ফেরান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তার নাম উঠে যায় অভিষেক ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করা বোলারদের বিরল তালিকায়।

শ্রীলঙ্কা ত্রিদেশীয় সিরিজটা শুরু করেছিলো বড় বড় দুই হারে। কিন্তু পরে তারা যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে শিরোপা জিতে নিলো, তাতে তাদেরকে কৃতিত্ব দিতেই হয়। আরো স্পষ্ট করে বললে কৃতিত্বটার দাবিদার আসলে চান্দিকা হাথুরুসিংহে। বাংলাদেশের কাছে ‘গণশত্রু’ হয়ে যিনি শুরু করেছিলেন এই সিরিজ!