ক্রিকেট কি জুয়ায় পরিণত হচ্ছে?

প্রশ্নটা এখন খুবই যৌক্তিক। ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সামনে রেখে, পাকিস্তান ক্রিকেটের বাইরে যে খেলাটা খেললো, তাতে প্রশ্নটা না করাই এখন বোকামি। রেসলিংয়ের মতো ক্রিকেটেও কি ধীরে ধীরে শুধুমাত্র দর্শকদের সাথে ধোকাবাজিতে পরিণত হচ্ছে?

আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আট দল খেলবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। বিশ্বকাপে এবং তারপর বাংলাদেশের দুর্দান্ত ওয়ানডে পারফর্ম শেষ তিন দলের লড়াই দারুণভাবে জমিয়ে দেয়। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজ হারিয়ে র‍্যাঙ্কিংয়ে সাত নম্বর জায়গাটা পাকা করে ফেলে বাংলাদেশ। শীর্ষ আট দল থেকে ছিটকে পড়ে পাকিস্তান। 

এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগে জিম্বাবুয়ের সাথে সিরিজ খেলার পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সাথে নিয়ে ত্রিদেশীয় একটি সিরিজের পরিকল্পনাও করে তারা। তার আগে অবশ্য তাদের সিরিজ চলছে শ্রীলঙ্কার সাথে। বাজে পারফর্মের কারণে, শ্রীলঙ্কার সাথে জেতা যাবে কিনা- তা নিয়ে সংশয় ছিলো পাকিস্তান বোর্ডের। এ কারণেই তারা হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক সূচির বাইরে গিয়ে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের আয়োজন করে। যাতে সেখানে খেলে প্রয়োজনীয় রেটিং বাড়িয়ে নেয়া যায়।

আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগতে থাকা পাকিস্তান নাটকীয়ভাবে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বসে। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ এক ম্যাচ হাতে রেখেই জিতে যায় তারা। ফলে আবার শীর্ষ আটে উঠে যায় পাকিস্তান। কপাল পুড়ে ক্যারিবীয়দের। সেপ্টেম্বরের মধ্যে শীর্ষ আটে থাকার জন্য এখন তাদের আরো ম্যাচ খেলতে হবে এবং জিততে হবে। কিন্তু ক্যারিবীয়দের কোনো খেলা নেই। ফলে আট নম্বর জায়গাটা নিশ্চিত হয়েছে পাকিস্তানের।

হঠাৎ পাওয়া এমন সাফল্যের কারণে এখন প্রস্তাবিত ত্রিদেশীয় সিরিজটি খেলছে না পাকিস্তান। এমন কি জিম্বাবুয়েতে পূর্ব নির্ধারিত সিরিজও আপাতত খেলছে না তারা। এর কারণ, জিম্বাবুয়ের সাথে পুর্ব নির্ধারিত সিরিজে অথবা ত্রিদেশীয় সিরিজে তারা যা দুটি ম্যাচ হেরে যায়, তবে র‍্যাঙ্কিং থেকে পতন হবে, ফলে বাদ পড়তে হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে। অর্থাৎ সমঝোতার ভিত্তিতে সিরিজ আয়োজনের যে সুবিধা রয়েছে, তার অপব্যবহার করছে পাকিস্তান। ক্রিকেট জুয়ায় পরিণত হচ্ছে কিনা- এই প্রশ্ন উদয় হচ্ছে এ কারণেই।

পাকিস্তান যে কাজ করলো, সেটা করতে পারে যে কোনো দল। এমনকি যদি দুদলেরই স্বার্থ জড়িত থাকে, তবে পাতানো খেলাও আয়োজিত হয়ে যেতে পারে উৎসাহের সাথেই। বিষয়টি পরিস্কার হতে পারে একটি উদাহরণের মাধ্যমে। ধরুন, দুটি দল এমন, যাদের দুটি করে জয় দরকার কোনো বিশ্ব আসরে প্রবেশের জন্য। তো তারা নিজের আলোচনা করে চারটি ম্যাচ আয়োজন করলো এবং আগেই চিত্রনাট্য ঠিক করে নিলো যে, একেক দল দুটি করে ম্যাচ জিতবে!

২০১৯ বিশ্বকাপে সামনে রেখেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। ওই আসরে সেরা আট দল সরাসরি খেলবে। র‍্যাঙ্কিংয়ে সেরা আটে থাকার জন্য আগামী দুই বছরে কতো কী যে হতে পারে, তা কেবল সৃষ্টিকর্তাই জানেন! আইসিসি যদি এখনই কোনো পদক্ষেপ না নেয়, বা কোনো নিয়ম ঠিক না করে, তবে ক্রিকেটের জুয়ায় পরিণত হওয়া এখন কেবলই সময়ের ব্যাপার।

আপনি আরো পড়তে পারেন

বছরে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড

র‍্যাঙ্কিংয়ে তামিম-লিটনদের উন্নতি

মুস্তাফিজে মুগ্ধ মুশফিক- আমলা