সাত মাস আগের কথা। সৌম্য সরকারকে রাখা হয় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। মাত্র এক ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে বিশ্বকাপে কী করবেন এই তরুণ- এমন প্রশ্ন তখন ক্রিকেটাঙ্গনে। অনেকে আবার ভরসাও করেছিলেন সৌম্যর অতীত পারফর্মের ভরসা করে। সেই পারফর্ম অবশ্য জাতীয়ই দলের হয়ে নয়; বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নিজের নাম দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন সৌম্য নিজে। তার চেয়ে বেশি বিস্মিত হয়েছিলেন সমর্থকরা। তার ক্যারিয়ার জানতে ইন্টারনেটই ছিলো ভরসা। সেই সৌম্যই বিশ্বকাপে চমকে দিলেন। আহামরী কিছু না করলেও বুঝিয়ে দিলেন ব্যাট হাতে বহুদূরে যাবেন তিনি। পরে দেশের মাটিতে পাকিস্তান- ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সৌম্য সরকারের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটলো। যা এখন কেবলই আরো বিস্তৃত হওয়ার পালা। সম্প্রতি ভারতীয় একটি সংবাদ মাধ্যম সৌম্যর বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এখানে তা তুলে ধরা হলো। 

হতে চেয়েছিলেন শিক্ষক, হলেন ক্রিকেটার। গত এক বছরে বদলে গেছে জীবনের মোড়। নিজের এই উত্থানের গল্পটা বলুন।

আমার বাবা সরকারি স্কুলে বাংলার শিক্ষক ছিলেন। ক্রিকেটার না হলে আমি তাই শিক্ষকই হতাম। এটা ছিলো আমার ছোটবেলার ঝোঁক। তবে ক্রিকেটার হতে পেরে আমি খুশি এবং তৃপ্ত। নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারা আমার কাছে গৌরবের বিষয়। গত একটা বছর আমার কাছে স্বপ্নের মতো। অনেক কিছু বদলে গেছে। তবে এখন আমার সব মনোযোগ ভবিষ্যতের দিকে। আমি ক্রিকেটার হিসেবে আরো উন্নতি করতে চাই। একই সাথে মানুষ হিসেবেও হতে চাই পরিপূর্ণ। 

আপনি তো বয়স-ভিত্তিক ক্রিকেট থেকে উঠে এসেছেন।

হ্যা। আমি স্কুল ক্রিকেট এবং বয়স- ভিত্তিক ক্রিকেট খেলেছি। সৌভাগ্যবসত সেখানে আমার রেকর্ড খুব ভালো। ওয়ানডে স্কুল প্রতিযোগিতায় আমার ২৫০ রানের ইনিংস আছে। কাতারে অনুষ্ঠেয় অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে আমি ডাবল সেঞ্চুরিও করেছিলাম।

খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুর দিকে কাদেরকে নিজের আদর্শ মনে করতেন?

শুরুর দিকে আমি ডান হাতে ব্যাটিং করতাম। পরে সৌরভা গাঙ্গুলি ও ব্রায়ান লারার খেলা দেখে আমি বাঁ হাতে ব্যাটিং শুরু করি। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে আসার পর আমি যুবরাজ সিংয়ের ভক্ত হয়ে যাই। তার সহজাত ব্যাটিং আমাকে মুগ্ধ করতো। আমি সাকিব ভাইয়ের ব্যাটিংয়েও একজন ভক্ত।

বিশ্বকাপে মাত্র কিছুদিন আগে আপনার ওয়ানডে অভিষেক হয়। তারপর অস্ট্রেলিয়া- নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপ স্কোয়াডে আপনি জায়গা পেয়ে যান। বিষয়টি কি বিস্ময়কর ছিলো?

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের একটি ম্যাচে মিরপুরে আমার অভিষেক হয়। আমি তিন নম্বরে ব্যাটিং করে ২০ রান করেছিলাম। ওই পারফর্মে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা হবে কিনা- তা নিয়ে সংশয় ছিলো আমার। পরে স্কোয়াডে নিজের নাম দেখে কিছুটা বিস্মিত হয়েছিলাম। এটা আমার জন্য অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত। 

আপনার কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে আপনার সক্ষমতায় খুব ভরসা করেন এবং আপনার মতো একজন নতুনকে অস্ট্রেলিয়ার মতো কন্ডিশনে তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ের সুযোগ দিয়েছেন। কাজটা আপনার জন্য কতোটা কঠিন ছিলো?

আমার ভরসা করার জন্য আমি তার উপর কৃতজ্ঞ। ঢাকায় একটি অনুশীলন ম্যাচে কোচ আমাকে প্রথম দেখেছিলেন। আমি জানি না কেনো, তিনি আমার প্রতি খুব মুগ্ধ হয়েছিলেন। পরে আমি জিম্বাবুয়ে সিরিজে সুযোগ পেয়ে যাই। পরে অস্ট্রেলিয়াতে তিনি আমাকে তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ের জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি জানতেন, বয়স- ভিত্তিক ক্রিকেটে আমি ওপেনিং করতাম। ফলে নতুন বল খেলায় আমি অভিজ্ঞ ছিলাম। এ ছাড়া যুব দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়াতে খেলার অভিজ্ঞতাও আমার কাজে লেগেছে। বিশ্বকাপে উইকেটগুলো দারুণ ছিলো। বল সহজেই ব্যাটে আসতো। দলের সিনিয়ররাও আমাকে খুব সাহায্য করেছে।

২০১৫ বিশ্বকাপটা বাংলাদেশ দারুণ কাটিয়েছে। উত্থান ও পতনের ভিতর দিয়ে সময় গেছে আপনাদের। দলের সবার জন্য ওই আবেগ সামাল দেয়া কতোটা কঠিন ছিলো?

আপনি ঠিকই বলেছেন, বিশ্বকাপটা আমাদের জন্য খুবই স্মৃতিময়। দল হিসেবে আমরা দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছি। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠার পর আমরা যেনো চাঁদে উঠে গিয়েছিলাম! আপনি নিশ্চয় টিভিতে আমাদের উদ্যাপন দেখেছেন। দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলার পর ভারতের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে হারটা খুব হতাশাজনক ছিলো। দলে হিসেবে আমরা আরো ভালো খেলতে পারতাম বলে মনে হয়েছিলো। তারপরও জয়- পরাজয় খেলারই অংশ। ভারতের বিপক্ষে ওই হার আমাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছিলো।

পেস না স্পিন, কোন বোলারদের আপনি বেশি স্বস্তিতে খেলেন?

আমার পেস সহজ মনে হয়।

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আপনাকে দ্রুতই প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হতে দেখা যায়। তাও আবার প্রতিপক্ষের সেরা বোলারের উপর। এটা কি আপনার ব্যক্তিগত পরিকল্পনা নাকি দলের পরিকল্পনা?

এটা আমার নিজের পরিকল্পনা। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে আমাদের একটাই পরিকল্পনা দেয়া হয়- সেটা হলো নিজস্ব খেলাটা খেলা। আমি সব সময় প্রতিপক্ষের সেরা বোলারকে আক্রমণ করতে চাই। এটাই আমার খেলার ধরন।

টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে দলের নিশ্চিত সদস্য আপনি। কিন্তু কোচের মতে টেস্টের জন্য এখনো প্রস্তুত নন। বিষয়টির সাথে কি আপনি একমত?

কোচ যদি এটা বলে থাকেন। তবে টেস্টের জন্য আমি আরো পরিশ্রম করবো। কোচকে ভুল প্রমাণিত করবো। পাকিস্তানের সাথে অভিষেকে আমি মিডল অর্ডারে খেলেছি। তবে আমি বেশি স্বস্তি বোধ করি টপঅর্ডারে। দেখা যাক কখন সুযোগ আসে। 

আপনার পরিচয় একজন অলরাউন্ডার হিসেবে। ঢাকা টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওপেনিং বোলিং করা ছাড়া আপনার অলরাউন্ডার পরিচয় খুব একটা দেখা যায়নি। এ বিষয়ে কিছু বলুন।

হ্যা। বোলিংয়ে আমার আরো উন্নতি করতে হবে। গতির সাথে সঠিক লাইনও ধরে রাখতে হবে।

এখন পর্যন্ত ছোট্ট ক্যারিয়ারে আপনি বেশ কিছু স্মরণীয় ইনিংস খেলেছেন। কোনটিকে এগিয়ে রাখবেন?

বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫১ রানের ইনিংসটির কথা মনে পড়ছে। নিউজিল্যান্ডের বোলাররা, বিশেষ করে ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদি খুব ভালো বোলিং করছিলো। উইকেট থেকে সহায়তাও পাচ্ছিলো তারা। ২৭ রানে আমাদের দুই উইকেট পড়ে গিয়েছিলো। ওই অবস্থায় আমি ও রিয়াদ ভাই মিলে বড় একটা জুটি গড়ি। ওই ইনিংসটা আমাকে খুব প্রশান্তি দেয়। আমার উচিত ছিলো ইনিংসটি আরো বড় করা। 

আপনাদের পরের সিরিজ অস্ট্রেলিয়ার সাথে। মিচেল জনসন ও মিচেল স্টার্কদের বিপক্ষে বিশেষ কোনো প্রস্তুতি আছে?

বিশেষ কোনো কিছু নেই, তবে প্রস্তুতি ঠিকই আছে। যেভাবে ডেল স্টেইনের বিপক্ষে ছিলো।

আপনি কি অ্যাশেজ ২০১৫ ফলো করছেন? আপনার ধারণা কী- কারা জিতবে?

হ্যা, আমি খু মনোযোগ দিয়েই ফলো করছি। আমার মনে হয় ইংল্যান্ডের এই সিরিজ জেতা উচিত। অ্যাশেজের এই পর্বে অস্ট্রেলিয়া ১০ জন নিয়ে খেলছে বলে যে মন্তব্য করেছেন মাইকেল ক্লার্ক, আমি তার সাথে একমত।

আবার আপনার দল নিয়ে কথা বলি, আপনি তো মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে খেলেছেন। তাদের নেতৃত্বের পার্থক্য কী?

প্রত্যেক মানুষই একজনের চেয়ে আরেকজন আলাদা। তাদের নিজস্ব দক্ষতা, নিজ্স্ব চিন্তা ভাবনা আছে। তারা সেভাবেই খেলে।

আপনি কি মনে করেন সৌরভ গাঙ্গুলি ভারতের জন্য যা করেছেন মাশরাফিও তা করেছেন বাংলাদেশের জন্য?

এই দুজনকে তুলনা করার মতো নই আমি। অধিনায়ক হিসেবে দুজনই নিজেদেরকে প্রমাণ করেছে। সৌরভ গাঙ্গুলির দলে শচিন ছিলেন, দ্রাবিড় ও লক্ষ্মন ছিলেন। মাশরাফির দলে তরুণ ও অভিজ্ঞদের মিশ্রণ আছে। এই দলকে নেতৃত্ব দেয়া এবং ভালো ফলাফল নিয়ে আসা সহজ কাজ নয়।

আপনি কি মনে করেন সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন অনেক বেশি শক্তিশালী?

এটা আমার বিশ্বাস করা না করার কিছু নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো লোকে কি বলে- সেটা। আমাদের সাম্প্রতিক ফর্মের পর মনে হয় না এ বিষয়ে কারো সন্দেহ আছে। 

দেশের বাইরের পারফর্ম নিয়ে কী বলবেন?

সব কিছু তো অস্ট্রেলিয়া- নিউজিল্যান্ডের মতো কন্ডিশন থেকেই শুরু হয়েছে। সেখানে আমাদের পারফর্মই অনেক কিছু বলে দেয়। 

 

আপনি আরো পড়তে পারেন

সৌম্য ও মুস্তাফিজকে নিয়ে বিজ্ঞাপনে মাশরাফি

সৌম্য ও পেরিস্কোপের কথা

সৌম্যকে মনে ধরেছে আইসিসির

সৌম্যর অসাধারণ ৫৬ মিনিট

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.