আহ মোস্তাফিজ!

রোহিত শর্মা কি শিখে ফেললেন মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে কখন বল তুলে দিতে হবে? হতেও পারে! এবং রোহিতের এই শিখে যাওয়া ‘বিদ্যা’ কী দারুণভাবেই কাজে লাগলো। মোস্তাফিজের চক্ষু ছানাবড়া করে দেয়া বোলিংয়ের পরও অবশ্য মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ছাড়লো হারা দল হয়েই। তাতেও অবশ্য মোস্তাফিজকে নিয়ে কিছুটা আহ্লাদে গদগদ হতে সমস্যা নেই!

সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে রোহিত শর্মা যখন মোস্তাফিজের হতে বল তুলে দেন, ততক্ষণে ইনিংসের হয়ে গেছে সাত ওভার। মানে রোহিত বোধহয় সাহসটা হারিয়ে ফেলেছিলেন। কারণ প্রথম ম্যচে মোস্তাফিজকে দ্বিতীয় ওভারে এনে কিছুটা বিপদেই পড়েছিলেন তিনি। ওই ম্যাচের শেষ ওভারে সাত রান ঠেকাতে গিয়েও দলকে হারিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন মোস্তাফিজ। সুতরাং রোহিত যদি সত্যিই কিছুটা সাহস হারিয়েও থাকেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

কিন্তু রোহিত বোধহয় জানতেন না যে, বলটা একটু পুরোনো হয়ে এলেই তা বেশি ধারালো হয়ে উঠে মোস্তাফিজের হাতে। প্রথম ওভারে দশটা রান দিয়ে ফেললেও মোস্তাফিজ তুলে নেন কেন উইলিয়ামসনের উইকেট। উইলিয়ামসন টিকে থাকলে যে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত যেতো না, সেটাই বা কে না জানে!

সে যাই হোক, মোস্তাফিজ হতাশ করেন দ্বিতীয় ওভারে। খরচ করে বসেন আবার ১০ রান। দুই ওভার শেষে তার খরচ ২০ রান এবং প্রাপ্তি বলতে একটা উইকেট। তাহলে কি আরো এক ম্যাচে মোস্তাফিজ হয়ে থাকবেন সাধারণ এক বোলার?

এমন প্রশ্ন যখন বাংলাদেশি দর্শকদের মনে, তখনই ইনিংসের ১৬ তম ওভারে আবার তার হাতে বল তুলে দিলেন রোহিত। এবার মাত্র তিন রান দিলেন মোস্তাফিজ। আগের দুই ওভারে ২০ এবং তৃতীয় ওভারে তিন, মানে প্রথম তিন ওভার শেষে মোস্তাফিজের ইকোনমি রেট দাঁড়িয়ে গেলো ৭.৬৬। টি-টোয়েন্টিতে এমন বোলিং খারাপ নয়।

ওইটুকু স্বস্তি নিয়ে যাতে মোস্তাফিজ বোলিং শেষ করতে পারেন, বাংলাদেশের দর্শকরা সবাই যখন এই প্রার্থনা করছেন, তখন হায়দরাবাদ চলে গেছে একদম জয়ের কাছে। তাদের তখন লাগে মাত্র ১২ রান। বলও আছে ১২টি। তখনই অবিশ্বাস্য এক রূপ নিয়ে হাজির মোস্তাফিজ।

১৯তম ওভারে নিশ্চিতভাবেই দুরু দুরু বুকে তার হাতে বল তুলে দেন রোহিত। এ ধরনের পরিস্থিতি বোলিং করা দলের আসলে করার কিছু থাকে না। কিন্তু মোস্তাফিজ ছয় বলে মাত্র এক রান দিয়ে তুলে নিলেন দুটি উইকেট।

প্রথমে বিভ্রান্তিকর কাটারে সিদ্ধার্থ কাউলকে বাধ্য করলেন ফিরতি ক্যাচ দিতে। এরপর সন্দিপ শর্মার জন্য ছুড়লেন আরো বিভ্রান্তিকর স্লোয়ার। সুইপ করতে গিয়ে সন্দিপ তুলে দিলেন ক্যাচ। ঘটে গেলে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা— ইনিংসের ১৯তম ওভারে এক রান দিয়ে দুই উইকেট! ভাবা যায়! এমন সময়ে তো বেশির ভাগ বোলার পা কাঁপাকাঁপিই থামাতে পারেন না। 

শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজের বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড়ায় চার ওভারে ২৪ রান দিয়ে তিন উইকেট! অথচ তিনিই প্রথম দুই ওভারে দিয়ে ফেলেছিলেন ২০ রান! পৃথিবীর যে কোনো বোলারই এমন পারফর্ম দেখে হিংসায় জ্বলবেন!

এমন অবিশ্বাস্য পারফর্ম অবশ্য উদযাপন করা হলো না বাংলাদেশি পেসারের। কারণ তার দল যে হেরে গেছে একেবারে শেষ বলে গিয়ে। ম্যাচ শেষে তাই একটা কথাই বেশি উপযুক্ত মনে হচ্ছে— আহ মোস্তাফিজ!