হঠাৎই উত্তাল বিশ্বরাজনীতি। হিংসার আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা ইউরোপে। সেটার আঁচ লাগতে শুরু করে অন্য মহাদেশগুলোতেও। গোলা-বারুদ সঞ্চারণ আর শক্তির মহড়ায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল ইউরোপের পরাশক্তি কয়েকটি দেশ। পরিস্থিতি এমন যে, যে কোনো সময় বেঁধে যাবে যুদ্ধের দামামা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে হবে এর মধ্যেই তৃতীয় বিশ্বকাপ আয়োজনে মরিয়া হয়ে ওঠে ফুটবলের সবচেয়ে বড় অভিভাবক সংস্থা ফিফা।

1938 football world cup champion italy

গোটা বিশ্ব যখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার স্নায়ুচাপে ভুগছে তখনই শুরু হয়ে গেল সবুজ ময়দানের ফুটবলযুদ্ধ। এই যুদ্ধের আয়োজক ছবি ও কবিতার দেশ ফ্রান্স। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ১৬ দল নিয়ে শুরু হয় বিশ্বকাপ। মূল লড়াই শুরুর আগে বাছাইপর্বের প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়। স্বাগতিক দেশের বাছাইপর্ব না খেলার প্রচলনও শুরু হলো সেখান থেকেই।

উরুগুয়ে এবং ইতালি ঘুরে ১৯৩৮ সালে বিশ্বকাপের আসর বসে ফ্রান্সে। তবু অভিমান ভাঙেনি প্রথম বিশ্বজয়ী দল উরুগুয়ের। যুদ্ধের ময়দান ইউরোপ বলেই এবারো বিশ্বকাপ বয়কট করেছে ল্যাটিন পরাশক্তি উরুগুয়ে। তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ফ্রান্সের আসরে না খেলার সিদ্ধান্ত নেয় ম্যারাডোনা-মেসি-বাতিস্তুতাদের দেশ আর্জেন্টিনা। ওই বিশ্বকাপে খেলেনি ইউরোপের জায়ান্ট দল স্পেনও। কারণ ততক্ষণে দেশটিতে শুরু হয়ে গেছে গৃহযুদ্ধ।

আগের দুই আসরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ধারাটা অব্যাহত থাকল ফ্রান্স বিশ্বকাপেও। বিশ্বমঞ্চের টিকিট পেয়েও প্রথম দল হিসেবে ফুটবলযজ্ঞে অংশ নিতে পারেনি অস্ট্রিয়া। ইতালির স্বৈরশাসক বেনিতো মুসোলিনির জায়গায় তৃতীয় বিশ্বকাপের দৃশ্যপটে চলে এলেন একনায়কতন্ত্রের আরেক ধারক-বাহক অ্যাডলফ হিটলার।

বিশ্বকাপ শুরুর আগেই অস্ট্রিয়ার দখল নিয়ে নেয় হিটলারের জার্মানি। তবে অস্ট্রিয়ানদের বিশ্বকাপে খেলার একটা দরজা খুলে দেয়া হয়। অস্ট্রিয়াকে কঠিন একটা শর্ত ছুড়ে দেন হিটলার। অস্ট্রিয়ানদের জার্মানির জার্সিতে বিশ্বকাপে খেলার আহ্ববান জানান তিনি। কিন্তু সেটা প্রত্যাখ্যান করেন অস্ট্রিয়ানরা।

স্বদেশপ্রীতির কারণে বিশ্বমঞ্চে অংশ নেওয়ার স্বপ্নটা জলাঞ্জলি দেন তারা। ওই বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া বাকি ১৫টি দল হচ্ছে- ফ্রান্স (স্বাগতিক), কিউবা, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, ইতালি, জার্মানি, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, রোমানিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল ও ডাচ ইস্ট-উইন্ডিজ।

অবশ্য অস্ট্রিয়া দলের গুটিকয়েক ফুটবলার জার্মানির হয়ে অংশ নিয়েছিলেন বিশ্বকাপে। কিন্তু অস্ট্রিয়া জাতীয় দলের আর বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া হয়নি। অস্ট্রিয়া না থাকায় সরাসরি বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট পেয়ে যায় সুইডেন। কারণ এবারো যে বিশ্বমঞ্চ সেজেছিল নক আউট পর্ব নিয়ে! নক আউট পর্বের বলি হয়ে দুইদিন প্রাণপণে লড়াই করে বিদায় নেয় রোমানিয়া এবং জার্মানি। শেষ আটে ওঠে কিউবা এবং সুইজারল্যান্ড।

তবে অস্ট্রিয়া না খেললেও অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যাটা ১৬-ই দেখিয়েছে ফিফা। টানা দ্বিতীয়বার ইউরোপ থেকেই সর্বোচ্চ ১২টি দল অংশ নেয়। একমাত্র দল হিসেবে পরপর তিনটি বিশ্বকাপেই অংশ নেয় ব্রাজিল। ফ্রান্স বিশ্বকাপেই অভিষেক ঘটে এশিয়ান কোনো দলের। সেই দলটার নাম ‘ডাচ ইস্ট-ইন্ডিজ’। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া নামে চিনে থাকে বিশ্ব।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল টানা তৃতীয় আসরেও ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়। তবে সেমিফাইনালে যাওয়ার পথে দুর্দান্ত কিছু ম্যাচ উপহার দিয়েছে সেলেকাওরা। প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে পোল্যান্ডকে ৬-৫ গোলে হারিয়েছিল ল্যাটিন জায়ান্টরা। স্ট্রসবার্গের ওই থ্রিলার লড়াইটা বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যাচ হিসেবে এখনো স্বীকৃতি পাচ্ছে।

তবে শেষ চারে বিদায় নিলেও শিরোপার দাবিদার ছিল ব্রাজিল। সোনালি ট্রফিটা তারা পায়নি নিজেদের ভুলেই। পুরো আসরে দুর্দান্ত খেলা দলের সেরা খেলোয়াড় লাওনিডাসকে সেমিফাইনালে মাঠেই নামাননি ব্রাজিল কোচ! ফাইনালের জন্য তাকে জমিয়ে রেখেছিলেন সেলেকাও কোচ। সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত ব্রাজিল করেছে ইতালির কাছে ২-১ গোলে হেরে! যাকে নিয়ে এত আলোচনা সেই লাওনিডাস (সাত গোল) পেয়েছিলেন ফ্রান্স বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট।

প্রথম দুটি বিশ্বকাপেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্বাগতিক দল। কিন্তু সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসে তৃতীয় বিশ্বকাপ। প্যারিসের কোয়ার্টার ফাইনালে ইতালির হাত ধরে বিদায় নেয় স্বাগতিক ফ্রান্স। ফাইনালে হাঙ্গেরিকে ৪-২ গোলে হারিয়ে শিরোপা অক্ষুণ্ন রাখে ইতালি। এবং আজ্জুরাই ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় শিরোপা ধরে রাখার গৌরব অর্জন করেছিল। টানা ১২ বছর।

কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে এক যুগের জন্য নির্বাসনে চলে গিয়েছিল বিশ্বকাপ। চতুর্থ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫০ সালে, ব্রাজিলে। এর মধ্যেই পৃথিবীর বুকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। লুটপাটের যুদ্ধে বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটা সুরক্ষিত রাখটাই কঠিন হয়ে পড়েছিল। শিরোপা শেষ পর্যন্ত অক্ষত থাকার মজার একটা ঘটনা আছে। তৎকালীন ফিফা সহ-সভাপতি ড. আত্তরিনো বারাসি নাকি জুতার বাক্সের মধ্যে স্বপ্নের ট্রফি ঢুকিয়ে সেটা খাটের নিচে লুকিয়ে রেখেছিলেন!

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.