৬ সেপ্টেম্বর, যে দিনটা ছিলো আশরাফুলের

গতকাল ছিলো ৬ সেপ্টেম্বর। ১৪ বছর আগের ৬ সেপ্টেম্বরের কথা মনে আছে আপনার? ক্রিকেটের মনোযোগী দর্শক এবং গুনমুগ্ধ সমর্থক হয়ে থাকলে, ওই দিনটির কথা আপনার ভোলার কথা নয়। ১৪ বছর আগের এই দিনে ক্রিকেট বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের এক কিশোর। চামিন্দা ভাস ও মুরালিধরনের মতো বিশ্বসেরা বোলারদের খেলে কলম্বোতে সেদিন বাংলাদেশের পতাকা পতপত করে উড়িয়েছিলেন ১৭ বছরের আশরাফুল।

সবচেয়ে কম বয়সে তার করা সেই সেঞ্চুরির রেকর্ড আজও কেউ ভাঙতে পারেনি। এর মধ্যেই কেটে গেছে প্রায় দেড় দশক। আশরাফুল অবশ্য এখন আর আলোতে নেই। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের বিষে আক্রান্ত হয়ে তিনি দিন গুনছেন ক্রিকেটে ফেরার। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময় পার করছেন তিনি। তাতে অবশ্য ১৪ বছর আগে তার গড়া কীর্তি ফিকে হয়ে যায়নি একটুও।

ওই টেস্টের প্রথম ইনিংসে আশরাফুলের ব্যাট থেকে এসেছিলো ২৬ রান। খুব কম হলেও দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রানের ইনিংস ছিলো সেটিই। দ্বিতীয় ইনিংসে ২১২ বলে ১৬ টি চার ১১৪ রান করেন আশরাফুল। এবারও ইনিংসের সর্বোচ্চ রান আসে তার ব্যাট থেকে। বিশ্ব ক্রিকেটে হৈচৈ পড়ে যায় আশরাফুলের নামে। ক্রিকেটের নতুন বিস্ময় বালক হিসেবে উচ্চারিত হতে থাকে তার নাম।

কিন্তু প্রত্যাশার সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ হন আশরাফুল। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করা আশরাফুল হাফ সেঞ্চুরিও করতে পারেননি পরের ১১ ইনিংসে। এক বছর পর ১২তম ইনিংসে এসে করেন ৭৫ রান। এবারও প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। ভেন্যু সেই কলম্বো! পরের হাফ সেঞ্চুরির জন্য আবার ১২ ইনিংসের অপেক্ষা। ১৩তম ইনিংসে এসে পাকিস্তানের বিপক্ষে পেশোয়ারে করেন ৭৭ রান।

আশরাফুলের পুরো ক্যারিয়ারই এভাবে উত্থান- পতনের প্রামাণ্যচিত্র হয়ে কেটেছে। ৬১ ম্যাচের ১১৯ ইনিংসে তিনি করেছেন ২৭৩৭ রান। এর মধ্যে সেঞ্চুরি আছে ছয়টি। হাফ সেঞ্চুরি মাত্র আটটি। ছয় সেঞ্চুরির পাঁচটিই তিনি করেছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করার সেই আত্মবিশ্বাস সব সময়ই নিজের ব্যাটে বহন করেছেন আশরাফুল। শ্রীলঙ্কাকে কাছে পেলেই তার ব্যাট হয়ে উঠেছে তরবারির মতো ধারালো।

যে তুমুল সম্ভাবনা নিয়ে আশরাফুলের আবির্ভাব হয়েছিলো, তার তিন ভাগের এক ভাগও পূরণ করতে পারেননি তিনি। অথচ একটা সময় পুরো জাতি তাকিয়ে থাকতো তার ব্যাটের দিকে। আশরাফুল এই ভরসার প্রতিদান দিয়েছেন কালেভদ্রে। চাহিদার তুলনায় যা ছিলো একেবারেই অপ্রতুল। তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস ১৯০ রানের। এটিও এসেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই। দেশে হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়েও তিনি পারেননি। একই ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেলেন মুশফিক।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে আশরাফুল এক হাহাকারের নাম। সেই হাহাকার এক রকম আর্তনাদে পরিণত হয় ২০১৩ সালে। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কলঙ্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। নায়ক থেকে মুহূর্তেই পরিণত হন জাতীয় খল নায়কে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় আসরে ম্যাচ ফিক্সিং করে বসেন তিনি। পরে তা স্বীকারও করেন। আট বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যান আশরাফুল। এর মধ্যে আপিল করায় তার তিন বছরের শাস্তি কমানো হয়। ভালো আচরণ এবং বিসিবি ও আইসিসির নিয়ম মানার শর্তে আরো দুই বছর কমিয়ে তিন বছরের শাস্তি ভোগ করছেন তিনি। আগামী বছরের আগস্টে শেষ হবে আশরাফুলে শাস্তির মেয়াদ। তারপর হয়তো আবার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরবেন তিনি। কে জানে, আবার হয়তো আশরাফুলকে দেখা যাবে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে।

আপনি আরো পড়তে পারেন

বাংলাদেশে আসছেন না ওয়ার্নার

ক্রিকেটার শাহাদাতকে খুঁজছে পুলিশ

অবশেষে বকেয়া পেলেন ক্রিকেটাররা