দল পর্যালোচনা: বৃত্ত ভাঙার চ্যালেঞ্জ অস্ট্রেলিয়ার

বিশ্ব ক্রিকেটে যে কটি পরাশক্তি আছে তাদের মধ্যে অন্যতম অস্ট্রেলিয়া। বাইশ গজে ব্যাট-বলের খেলাটি অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। দেশটির মানুষের পছন্দের তালিকায় এরপরই অবস্থান করছে রাগবি। জনপ্রিয়তায় ফুটবল অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় প্রধান খেলা। অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলও ধীরে ধীরে অনেকটা এগিয়েছে।

দেশ হিসেবে পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু সাতটি মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে ছোট আবার এটিই। এশিয়ার দক্ষিণ পূর্বের দেশটি মূলত ওশেনিয়ান অঞ্চলের মধ্যে পড়েছে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাবে এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সদস্য পদ নিয়েছে তারা। গত কয়েক বছর ধরে এশিয়ান দল হিসেবেই বিশ্বকাপে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে ক্যাঙ্গারুর দেশ। এক যুগ আগে ওশেনিয়া ফুটবল কনফেডারেশনের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি নেয় অস্ট্রেলিয়া।

একটা সময় অস্ট্রেলিয়া ছিল ব্রিটিশদের উপনিবেশ। ব্রিটিশদের হাত ধরেই ফুটবলে আসে অস্ট্রেলিয়ানরা। অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলপাঠ পরবর্তী আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হয়েছে অনেক বছর হবে। ১৯২২ সালে প্রতিবেশী দেশ নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে তিন ম্যাচের একটি সিরিজ খেলে তারা। তার দুটো ম্যাচেই হারে অসিরা।

বিশ্বকাপ ফুটবলে অবশ্য এখনো সেভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। তবে কনফেডারেশন কাপগুলোতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে তারা। ওশেনিয়ান নেশন্স কাপে ছয়বার অংশ নিয়ে চারবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়ানরা। শেষবার ২০০৪ সালে শিরোপা জয়ের গৌরব নিয়ে ওশেনিয়ান ফুটবল ফেডারেশন থেকে বেরিয়ে আসে তারা।

এশিয়ান ফুটবলে ফেরার সময় সঙ্গে করে ছন্দটাও নিয়ে এসেছে ক্যাঙ্গারুর দেশটি। এশিয়ান কাপে ২০০৭ সালে অভিষেকের পর এই টুর্নামেন্টে দুবার খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। 'এশিয়ার বিশ্বকাপে' তারাই বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। জাপান, কোরিয়ার মতো পরাশক্তি দেশকে পেছনে ফেলে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের শিরোপা জিতে নেয় ক্রিকেট ও রাগবির দেশটি।

তবে আন্তর্জাতিক ফুটবলের বড় মঞ্চে তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য রানার্সআপ হওয়া। ১৯৯৭ সালে কনফেডারেশনস কাপে অভিষেক আসরেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। শিরোপার খুব কাছেও চলে এসেছিল তারা। কিন্তু ব্রাজিলের কাছে স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের। হারতে হয় ফাইনালে।

বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার অভিষেকটা সুখের হয়নি। ১৯৭৪ পশ্চিম জার্মানির বিশ্বকাপে তাদের বিদায় নিতে হয় গ্রুপপর্ব থেকেই। অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলের জন্য সবচেয়ে অস্বস্তির তথ্যটা হচ্ছে- বিশ্বকাপে অভিষেকের পর ছয়টি আসরে দর্শক সারিতে থাকতে হয়েছে তাদের।

ওশেনিয়ান ফুটবল ছাড়াটাই যেন অস্ট্রেলিয়ার শাপেবর হয়ে এসেছিল। এশিয়ান ফুটবল দল হিসেবে নাম লেখানোর পরই ২০০৬ বিশ্বকাপ দিয়ে ফিরে আসে সকারুসরা। এর পরের প্রতিটি বিশ্বকাপেই এশিয়ান প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়ে আসছে অস্ট্রেলিয়ানরা।

কিন্তু প্রতিবারই তাদের বিদায় নিতে হয়েছে গ্রুপপর্ব থেকে। কিন্তু এবার বিশ্বকাপ রাঙাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। এবার তারা ভাঙতে চায় ব্যর্থতার বৃত্ত।

অস্ট্রেলিয়াকে এবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে তাদের ভারসম্যপূর্ণ দলটাই। কারণ বিশ্বকাপের ইতিহাসে তাদের বর্তমান দলটাকেই ভাবা হচ্ছে সেরা দল। দলটাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন প্রধান কোচ বার্ট ফন মারউইক। আসন্ন টুর্নামেন্টে ভালো করতে বেশ কিছু অভিজ্ঞ ফুটবলারকে পাচ্ছেন ডাচ কোচ।

তার বিশ্বকাপ দলে আছেন টিম কাহিল। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা এ নিয়ে চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। তবে ৩৮ বছর বয়সী এই ফরওয়ার্ড নয়, অস্ট্রেলিয়াকে পুরো আসরে নেতৃত্ব দেবেন মিলে জেডিনাক। ভরসা করার মতো যে কজন দলে আছেন তাদের মধ্যে একজন জেমি ম্যাকলারেন।

আগামী ১৪ জুন শুরু হবে রাশিয়া বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়ার জন্য টুর্নামেন্ট শুরু হবে একদিন পর। যেখানে ‘সি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সাবেক চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া। গ্রুপে তাদের অন্য দুই প্রতিপক্ষ পেরু ও ডেনমার্ক।