বিশ্বকাপ যতই সামনে এগিয়েছে ততই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তা সত্ত্বেও প্রথম ১১টি বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয়েছে মাত্র ১৬টি দল নিয়ে। কম দলের টুর্নামেন্ট দেখতে দেখতে একটা পর্যায়ে বিরক্তি চলে এসেছিল ফুটবলপ্রেমীদের মনে। হতাশা ক্রমেই বাড়ছিল আসরের অংশ হতে চাওয়া দলগুলোর। অবশেষে ১৬ দলের বিশ্বকাপের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা।

italy celebrate their thir world cup trophy

১৯৮২ নতুন এক যাত্রা করে ফুটবল বিশ্বকাপ। প্রথমবারের মতো বাড়ানো হয় মূলপর্বের দলের টিকিট। দ্বাদশ বিশ্বকাপ দিয়েই আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ২৪ দলের টুর্নামেন্ট। সফল ওই বিশ্বকাপের আয়োজক ইউরোপের পরাশক্তি স্পেন। বহুল জনপ্রিয় সেই আসরটা ছাড়িয়ে গিয়েছিল অতীতের সব আয়োজনকে।

দ্বাদশ বিশ্বকাপের মূলপর্বের জন্য প্রাথমিকভাবে ১০৬টি দল আগ্রহ প্রকাশ করে। স্বাগতিক ও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দল বাদ দিয়ে এক শ’র বেশি দল থেকে ১৪ দল চূড়ান্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল ফিফার পক্ষে। তীব্র সমালোচনা ও দফায় দফায় বৈঠক শেষে অবশেষে নতুন চেহারায় হাজির হলো স্পেন বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টের মূলপর্বের জন্য জন্য আটটি দল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় ফিফা।

তবে বিশ্বকাপের পরিধি বাড়ানো হলেও বাছাইপর্বের রোমাঞ্চ কোনো অংশে কমতি ছিল না। মূলপর্বের টিকিটের জন্য ঘাম ছুটে যায় পরাশক্তি দলগুলোরও। টানটান উত্তেজনার বাছাইপর্বের শেষটা হলো বড় অঘটন দিয়ে। আগের দুই আসরের ফাইনালিস্ট নেদারল্যান্ডস ব্যর্থ হয় বাছাইপর্বের গণ্ডি পার হতে।

স্পেন বিশ্বকাপে জায়গা হয়নি উত্তর আমেরিকার পরাশক্তি মেক্সিকো এবং ল্যাটিন আমেরিকার পরাশক্তি তথা দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের-ও! এসব দলের ব্যর্থতা ছাপিয়ে পাদ প্রদীপে চলে আসে বেশ কয়েকটা ছোট দল। বাছাইপর্বে চমকে দেয় হন্ডুরাস, আলজেরিয়া, কুয়েত, নিউজিল্যান্ড ও ক্যামেরুনের মতো দলগুলো। পাঁচটি দলেরই অভিষেকের স্বপ্নটা পূরণ হয়ে যায় ১৯৮২ বিশ্বকাপে।

দ্বাদশ আসরের টিকিট প্রাপ্ত ২৪টি দল হলো- স্পেন, আর্জেন্টিনা, যুগোস্লাভিয়া, চেকোস্লাভাকিয়া, বেলজিয়াম, নিউজিল্যান্ড, পশ্চিম জার্মানি, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড, হন্ডুরাস, সোভিয়েত ইউনিয়ন, কুয়েত, ইংল্যান্ড, ক্যামেরুন, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, এল সালভাদর, ইতালি, স্কটল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড, আলজেরিয়া, পেরু, ব্রাজিল ও চিলি।

মূলপর্বে দলের সংখ্যা বাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই টুর্নামেন্ট শুরু হয় নতুন এক ফরেমেটে। ছয় গ্রুপে সমানভাবে ভাগ করা হয় অংশ নেওয়া ২৪টি দলকে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ ১২টি দল টিকিট পায় দ্বিতীয় রাউন্ডের। এই পর্বেও রবিন লিগ রাউন্ডের পদ্ধতি চালু করে ফিফা। দ্বিতীয় রাউন্ডে গ্রুপ করা হয় চারটি। এই পর্যায়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন চারটি দল উঠে যায় সেমিফাইনালে।

বাছাইপর্বের মতো স্পেন বিশ্বকাপের শুরুটাও অনেকের কাছে বিস্ময়রূপে হাজির হয়। প্রথমবারের মতো ফুটবল মহাযজ্ঞ তকমা পায় ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ হিসেবে। ১৩ জুন দ্বাদশ আসরের পর্দা ওঠার দিন গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে সুরে-সংগীতে স্প্যানিশরা যেভাবে বিশ্বকে স্বাগত জানিয়েছিল সেটার বিশেষণ এক কথায় হতে পারে অসাধারণ। বার্সেলোনায় ৪০ মিনিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়োজক স্পেন অবাক করে দেয় গোটা দুনিয়াকে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো আসরের প্রথম ম্যাচেও ছিল বিস্ময়। প্রাক্তন চ্যাম্পিয়ন পশ্চিম জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় অভিষেক বিশ্বকাপ খেলতে আসা আলজেরিয়া। ওই হারের শোকটাকে অবশ্য শক্তিতে রূপান্তর করে ফেলেছিল জার্মানরা, উঠে গিয়েছিল ফাইনালে। আর শুরুতে চমকে দেওয়া আফ্রিকান দলটি বিদায় নিয়েছিল গ্রুপপর্ব থেকেই।

আলজেরিয়া বিদায়টা অবশ্য স্বাভাবিক ছিল না। উদ্বোধনী ম্যাচে হারের প্রতিশোধটা জার্মানি নিয়েছিল গ্রপপর্বের শেষ ম্যাচে। ওই ম্যাচে অস্ট্রিয়াকে গোলবন্যায় ভাসানোর সুযোগ ছিল জার্মানদের। কিন্তু বিস্ময়কর হচ্ছে, ইচ্ছে করেই গোলমিসের মহড়া দিয়েছিল তারা। তুমুল বিতর্কিত সেই ম্যাচটায় অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে জেতে জার্মানরা। তবে হারলেও জার্মানির কাঁধে হাত রেখে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে যায় প্রতিবেশী অস্ট্রিয়া। জার্মানি তিন গোলের ব্যবধানে জিতলে অবশ্য দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে পারতো আলজেরিয়া।

দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও ইতালিকে নিয়ে তৈরি করা হয় মৃত্যুকূপ। যেখান থেকে দুই দলের বিদায় নিশ্চিত ছিল। এই রাউন্ড থেকে ছিটকে যায় ল্যাটিন দুই পরশক্তিই। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে বিদায় করে সেমিফাইনালে উঠে যায় আজ্জুরিরা। বলা হয়ে থাকে ওই বিশ্বকাপের ব্রাজিল দলই ছিল সর্বকালের সেরা। সেলেকাওদের স্বপ্নের সেই দলের সদস্য ছিলেন জিকো, সক্রেটিসের মতো কিংবদন্তিরা।

ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ইতালির সামনে দাঁড়াতেই পারেনি পোল্যান্ড। কিন্তু ‘থ্রিলার’ উপহার দিয়েছিল দ্বিতীয় সেমিফাইনালটা। দুরন্ত ফর্মে থাকা মিশেল প্লাতিনির ফ্রান্স গোল খেয়ে বসে শুরুতেই। ম্যাচের বয়স আধ ঘণ্টা হওয়ার আগেই জার্মানিকে গোলটা ফিরিয়ে দেন ফ্রেঞ্চ কিংবদন্তি প্লাতিনি। কিন্তু দেড় ঘণ্টার স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচটা অমীমাংসিত থাকল ১-১ গোলে।

অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটে স্নায়ুচাপের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে হলো ফুটবলপ্রেমীদের। তুমুল নাটকীয় ওই ত্রিশ মিনিটেই হয়েছে চারটি গোল। ম্যাচ ড্র ৩-৩ গোলে। ইতিহাসের সূচনা হলো এরপরই। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করতে আশ্রয় নেওয়া হয় টাইব্রেকারের। ইতিহাসের প্রথম সেই পেনাল্টি লড়াইয়ে ৫-৪ গোলে বাজিমাত করে পশ্চিম জার্মানি। বিদায় নেয় ফ্রান্স।

ফাইনালের আগেই ফাইনালটা দেখে ফেলেছিল ফুটবল দুনিয়া। কারণ শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটা যে বড্ড এক তরফা বানিয়ে ফেলেছিল ঝড়ের বেগে ছুটে আসা ইতালি। মাদ্রিদের ফাইনালে জার্মানদের ৩-১ গোলে বিধ্বস্ত করে তৃতীয়বার বিশ্বসেরার মুকুট ছিনিয়ে নেয় আজ্জুরিরা। ইতালিয়ানদের এই স্বপ্নযাত্রার প্রধান সারথি ছিলেন পাওলো রসি। সর্বোচ্চ ছয় গোল করে তিনি পেয়েছিলেন স্পেন বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুটের স্বীকৃতি।

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.