দল পর্যালোচনা: স্বপ্নের অভিষেকের অপেক্ষায় পানামা

মেক্সিকো, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং কোস্টারিকার মতো দেশগুলোর কারণে বহু বছর আড়ালে থাকতে হয়েছে পানামা ফুটবল দলকে। এসব দলকে টপকে কনকাকাফ অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপে ওঠাটা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে উঠেছিল দেশটির পক্ষে। গত বছর বহু বছরের সেই অসাধ্য সাধন করেছে পানামা। প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে।’

পানামা ফুটবলে স্বপ্নের দিনটি এলো ১০ অক্টোব, ২০১৭। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের টিকিট পাওয়ায় আনন্দের জন্য বয়ে যায় দেশটিতে। উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা পানামা প্রেসিডেন্ট হুয়ান কার্লোস তো এই সুখবরে দেশে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করে বসেন! দেশের ফুটবল আনন্দের জন্য এর চেয়ে বড় উপলক্ষ যে আর পায়নি পানামা!

ফিফার সদস্য পদ পাওয়ার পর ১৯৩৮ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে পা রাখে পানামা। অভিষেক ম্যাচে ল্যাটিন দল ভেনিজুয়েলাকে ৩-১ গোলে বিধ্বস্ত করে আগমনী বার্তা দিয়েছিল দেশটি। কিন্তু পানামা হারিয়ে গেল এরপরই। কনকাকাফ অঞ্চলের দেশটি ফিরল ১৯৭৮ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে।

কিন্তু প্রথমবারের মতো বাছাইপর্ব খেলতে আসার চাপটা সামলে নিতে পারেনি পানামা। মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দলগুলোর কাছে বিধ্বস্ত হতে হয় তাদের। এরপর নয়টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে একই ভাগ্য বরণ করতে হয় পানামাকে। স্বপ্নের সমাধী হয়ে যায় বাছাই পর্বেই। তবু হাল ছাড়েনি উত্তর আমেরিকার দেশটি। অবশেষে ধৈর্যের সুফল পেল পানামা। স্বপ্নপূরণ হলো ৪০ লাখ অধিবাসীর ক্ষুদ্র দেশটির।

স্বাধীনতা পাওয়ার আগে পানামা ছিল ল্যাটিন দেশ কলম্বিয়ার উপনিবেশ। কলম্বিয়ানদের কাছ থেকে মুক্তির পর প্রথমবার কোনো আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের দেখা যায় ১৯৫১ সালে। পানামা অংশ নেয় সেন্ট্রাল আমেরিকা অ্যান্ড ক্যারিবিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে। ওই টুর্নামেন্টে বেশিদূর এগুতে না পারলেও প্রথম ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছিল পানামা।

তবে বিশ্বকাপের মূলপর্বের টিকিট না পেলেও কনকাকাফ গোল্ডকাপ কাপ টুর্নামেন্টের নিয়মিত দলে হয়ে উঠেছিল পানামা। এই টুর্নামেন্টে আটবার অংশ নিয়েছে তারা। কিন্তু সাফল্যের বদলে আসরগুলো থেকে একরাশ হতাশা উপহার পেয়েছে দেশটি। অবশেষে একবিংশ শতাব্দীতে বদলে যায় পানামার ফুটবল।

২০০৫ সালে কনকাকাফ গোল্ড কাপে রূপকথার জন্ম দিয়েছিল তারা। কিন্তু সুন্দর সমাপ্তি দিতে পারেনি পানামা। এক যুগ পর আবারো এই টুর্নামেন্টে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছিল দ্য ক্যানাল মেনরা। কিন্তু এবারো তীরে এসে তরি ডুবল। ২০১৩ ফাইনালেও সেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মৃত্যু ঘটে পানামার শিরোপা স্বপ্নটার।

অবশ্য একটা স্বপ্নের সমাধী হলেও নতুন একটা স্বপ্নের বিভোর হয়ে উঠেছিল পানামা। ব্রাজিল বিশ্বকাপের টিকিটের আশায় বুঁদ হয়েছিল তারা। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে ড্রয়ে কপাল পুড়ে তাদের। অবশেষে গত বছর পানামা ফুটবল দল তাদের অপূর্ণতা ঘোচায় রোমান তোরেসের শেষ মুহূর্তের গোলে।

এই তোরেসই এখন রাশিয়া বিশ্বকাপে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন পানামাকে। প্রধান কোচ হার্নান দারিও গোমেজের তুরুপের তাস এই ডিফেন্ডারই। রক্ষণ থেকে উঠে গিয়ে মাঝে মাঝে ‘স্ট্রাইকার’ও হয়ে উঠেন তোরেস। তার নেতৃত্বেই অভিষেক বিশ্বকাপ খেলবে পানামা। উত্তর আমেরিকার দলটিতে আরো একজন তোরেস আছেন।

তিনি গ্যাব্রিয়েল তোরেস। মাত্র ১৬ বছর বয়সে জাতীয় দলে তাকে অভিষেক করান কলম্বিয়ান কোচ। এই ফরওয়ার্ডই এখন আশা দেখাচ্ছেন দেশকে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জ্বলে উঠেছিলেন দুই তোরেসই। পানামা কোচের বিশ্বাস রাশিয়ার মঞ্চেও জ্বলে উঠবেন এই মানিকজোড়।

নতুন দল হওয়ায় এবারের বিশ্বকাপটা আন্ডারডগ হিসেবে শুরু করবে পানামা। নতুন মঞ্চ, নতুন পরিবেশ। তাই হয়তো একটু আগে ভাগেই রাশিয়ায় পা রেখেছে পানামা। অংশগ্রহণকারী বাকি ৩০টি দলের মধ্যে তাদের আগে শুধু একটা দলই (ইরান) রাশিয়ায় পৌঁছেছে।

অভিষেক আসরে পানামা চমকে দিতে চায় সবাইকে। কাজটা বেশ কঠিন। কারণ গ্রুপপর্বেই অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে তাদের। ‘জি’ গ্রুপে তাদের লড়তে হবে বেলজিয়াম, ইংল্যান্ডের মতো দলের সঙ্গে। প্রথম রাউন্ডের অন্য ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ আফ্রিকান দল তিউনিশিয়া। ১৮ জুন সোচিতে পানামার অভিষেক ম্যাচ বেলজিয়ামের সঙ্গে।