শিল্প-সাহিত্যের দেশ হিসেবে বিখ্যাত ফ্রান্স। পশ্চিম ইউরোপের এই দেশটি বিশ্বের অনেক কবি, সাহ্যিতিক, ভাস্কর, চিত্রকর, জন্মভূমি। শিল্প-সংস্কৃতির বাইরে আরো একটা পরিচয় আছে ফ্রান্সের। দেশটি গত কয়েক দশকেরও বেশি সময় ধরে হয়ে উঠেছে ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি।

france football team 2018

এই মাটিতেই জন্ম নিয়েছেন মিশেল প্লাতিনি, জিনেদিন জিদান, জাস্ট ফন্টেইন, লরেন্ট ব্লাঙ্ক, লিলিয়ান থুরাম, দিদিয়ের দেশম, এরিক ক্যান্টেনা, থিয়েরি অঁরির মতো কিংবদন্তি ফুটবলাররা। তাদের উত্তরসূরি গ্রিজম্যান-এমবাপ্পে-পগবারা এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন।

এনিয়ে ১৫ বারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নেবে ফ্রান্স। ২১তম বিশ্বকাপের টিকেট পেতে ফরাসিদের টপকাতে হয়েছে ইউরোপ বাছাইপর্বের কঠিন বাধা। ‘এ’ গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল টোটাল ফুটবলের জনক দেশ নেদারল্যান্ডস, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ফুটবল পরাশক্তি সুইডেন, বেলারুশ, বুলগেরিয়া এবং লুক্সেমবার্গ।

ফ্রান্সের ফুটবল ঐতিহ্য ও ইতিহাস অনেক পুরনো। ফিফা গঠনের ক্ষেত্রেও অবদান আছে দেশটির। বর্তমানে ফিফার সদরদপ্তরের অবস্থান ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। ফিফার দায়িত্বে প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয় ১৯৩০ সালে। অভিষেক আসরে অবশ্য তারা তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেনি। ঘরে ফেরে প্রথম রাউন্ডে। পরের দুই আসরেও বলার মতো কিছু করতে পারেনি তারা।

পঞ্চাশ দশকে ফ্রান্স পায় তাদের ফুটবল ইতিহাসের সেরা দলকে। ফন্টেইন, জঁ ভিনসেন্ট, বেয়মন্ড কোপা, রবার্ট জঁকেতদের নিয়ে গঠিত দলটিকে বলা হয় ফ্রান্সের সোনালি প্রজন্ম। অথচ সেই দলটাই ১৯৫০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে।

১৯৫৮ বিশ্বকাপে ফিরেই নিজেদের আগমনী বার্তা দেয় ফ্রান্স। সেবার সেমিফাইনালে দলটির কপাল পুড়ে ব্রাজিলের হাতে। ওই আসরে পশ্চিম জার্মানিকে ৬-৩ গোলে বিধ্বস্ত করে তৃতীয় সেরা দল হয় ফ্রান্স। ওই ম্যাচে একাই চার গোল করেছিলেন ফন্টেইন। প্রজন্মটির বিদায়ের পর ফ্রান্সের ফুটবলে শুরু হয় কালো অধ্যায়।

পরের চারটি আসরের মধ্যে তিনটিতে দর্শকের ভূমিকায় ছিল ফরাসিরা। ১৯৬৬ বিশ্বকাপ খেললেও বাদ পড়ে গ্রুপপর্ব থেকে। এরপর দলটি ফিরে আসে ১৯৭৮ আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে। তবে পরের দুই আসরে বাজিমাত করে ফ্রান্স। ১৯৮২ বিশ্বকাপের শেষ চারে ওঠা দলটি মেক্সিকো বিশ্বকাপেও থেমেছে ফাইনালের আগে। কিন্তু চোরাবালিতে আবারো হারিয়ে যায় ফ্রান্স ফুটবল। বিশ্বমঞ্চ থেকে আট বছরের জন্য ‘উধাও’ হয়ে যায় যায় দেশটি।

পেলে-ম্যারাডোনা যেভাবে একক নৈপুণ্যে নিজের দেশকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন, ফ্রান্সের সেই শিরোপা ক্ষুধা মেটাতে জন্য দরকার ছিল একজন মহানায়কের। অবশেষে ১৯৯৮ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে কাঙ্খিত মহানায়কের দেখা পায় ফ্রান্স। নায়কের নাম জিদান। প্যারিসের ফাইনালে জিজুর জোড়া গোলে ৩-০ গোলে ব্রাজিলকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় ফ্রান্স।

ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পরের টুর্নামেন্টে এসেছিল ফ্রান্স। কিন্তু ২০০২ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে বড় অঘটনের শিকার হয় তারা। নবাগত সেনেগালের বিপক্ষে জিজুবিহীন ফরাসীরা হেরে যায় ১-০ গোলে। এই হারের ধাক্কাটা তারা আর সামলাতে পারেনি। বাদ পড়ে গ্রুপপর্বেই। ২০০৬ বিশ্বকাপে দলের টালমাটাল অবস্থায় অবসর ভেঙে দলের হাল ধরেন জিদান।

এবারও একক নৈপুণ্যে দলকে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে তুলেন জিজু। তবে এদিন যেন ফুটবল বিধাতা অন্যকিছু লিখে রেখেছিল তার ভাগ্যে। ফাইনালে ইতালিয়ান ডিফেন্ডার মাতেরাজ্জিকে ঢুঁস মেরে জন্ম দেন বিতর্কের। লাল কার্ড দেখেই শেষ হয়ে যায় জিদানের খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার। টাইব্রেকারে চ্যাম্পিয়ন হয় ইতালি।

বিশ্বকাপজয়ী দলটি দুবার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপও জিতেছিল। দুটি সংখ্যাই এবার সামন করার স্বপ্ন দেখছেন ফরাসিরা। দেশটিকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রধান কোচ দিদিয়ের দেশম। সবশেষ যে আসরে বিশ্বকাপ জিতেছিল ফরাসিরা সেই দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পর এবার কোচ হিসেবে নিজেকে প্রমাণের চ্যালেঞ্জ এখন দেশমের সামনে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একঝাঁক তারকা ফুটবলারকে পাচ্ছেন দেশম। এসব প্রতিভাবান তারকাদের নেতৃত্ব দেবেন গোলরক্ষক হুগো লরিস।

ফ্রান্সের বিশ্বকাপ দলের সব ফুটবলার খেলেন ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় লিগগুলোতে। আসন্ন বিশ্বকাপে এই দলের সবচেয়ে বড় নাম অ্যান্তনিও গ্রিজম্যান। দুবই বছর আগে ইউরোর সেরা ফুটবলার হয়েছিলেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের এই ফরওয়ার্ড। কিন্তু সুন্দর সমাপ্তি টানতে পারেননি তিনি। ফাইনাল পর্তুগালের কাছে হেরে যায় গ্রিজম্যানের ফ্রান্স।

এবার বিশ্বকাপ জিতে সেই দুঃস্মৃতি ভোলার স্বপ্ন দেখছেন ফরাসিরা। উসমান ডেম্বেলে, অলিভার জিরার্ড, পল পগবা, কিলিয়ান এমবাপ্পে, স্যামুয়েল উমতিতি, রাফায়েল ভারানের মতো তারকাদের বিশ্বকাপ দলে উপস্থিতি ফ্রান্সের স্বপ্নের পালে দিচ্ছে ঝড়ো হাওয়া। এসব তরুণদের ভীড়ে ফ্রান্স দলে জায়গা হয়নি রিয়াল মাদ্রিদের তারকা স্ট্রাইকার করিম বেনজেমার।

মৌসুমজুড়ে নিষ্প্রভ থাকা বেনজেমার দলে না থাকাটা অনেকের কাছেই স্বাভাবিক মনে হয়েছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে ফ্রান্স সুযোগ পাননি আর্সেনাল তারকা লাকাজেত্তে। ঠাঁই হয়নি কিংসলে কোম্যানেরও। তবে বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলে ছিলেন দিমিত্রি পায়েত। চোট শেষ করে দিয়েছে মার্শেই সেনসেশনের বিশ্বকাপ স্বপ্ন।

আগামী ১৬ জুন শিরোপা পুনরুদ্ধারের লড়াই শুরু করবে ফ্রান্স। ‘সি’ গ্রুপে ফরাসিরা প্রথম ম্যাচ খেলবে কাজান অ্যারেনায়, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। গ্রুপে তাদের অন্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বী পেরু ও ডেনমার্ক।

ফুটবল পণ্ডিতদের বিশ্বাস গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই নকআউট পর্বে উঠবে ফ্রান্স। আসলে এই দলটাকে নিয়ে সবার ভাবনা আরো বেশি। এবাররে আসরের সবচেয়ে শক্তিশালী দলটা তাদেরই। কেউ কেউ তো রাশিয়া বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটা এখন থেকেই ফ্রান্সের হাতে দেখছেন!

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.