অবিশ্বাস্য, অভাবনীয়, অভূতপূর্ব, অকল্পনীয়, অচিন্তনীয় কিংবা অতুলনীয়। গেল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে স্বাগতিক ব্রাজিল যেভাবে বিধ্বস্ত হয়েছিল সেটার বিশেষণ হতে পারে এ রকম অনেককিছুই। ৭-১ গোলের সেই দুঃস্বপ্নেরটা হারটা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা ব্রাজিলকে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে নক আউট পর্বে এর চেয়ে বড় হারের রেকর্ড নেই অন্য কোনো দলেরই।

brazil collapse in 2014 world cup

লজ্জাজনক এই হারে ব্রাজিল ছাপিয়ে গেছে ১৯৫০ মারাকানা ট্রাজেডিকেও। ৬৮ বছর আগের দগদগে ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার মোক্ষম সুযোগ পেয়েও সেটা হাতছাড়া করল সাম্বার নৃত্যের দেশটি। হেক্সা স্বপ্নপূরণের মিশনে লুইস ফিলিপ স্কলারির ব্রাজিল পেল নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য হার ৭-১। কুড়িতম বিশ্বকাপের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু হয়ে উঠেছিল বেলো হরিজন্তের ব্রাজিলিয়ানদের সেই ট্রাজেডিটা।

২০১৪ বিশ্বকাপটা ট্রাজেডি হয়ে থাকল ল্যাটিন আরেক পরাশক্তি আর্জেন্টিনার কাছেও। দুই যুগ পর ফাইনালে উঠেও স্বপ্নভঙ্গ হয় দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। ১৯৯০ সালে যেই জার্মানির কাছে ফাইনালে হেরেছিল আর্জেন্টিনা, সেই দলটার কাছেই আবারো হারল ল্যাটিন জায়ান্টরা। মারাকানার ঐতিহাসিক ফাইনালে মারিও গোটশের অতিরিক্ত সময়ের গোল ধূসর করে দেয় আর্জেন্টাইনদের স্বপ্ন।

ছিয়াশির ফাইনালের নির্মম প্রতিশোধ দুবার নিল জার্মানি। ম্যারাডোনার পর মেসির আর্জেন্টিনাও তীরে এসে তরি ডোবালো। প্রথমজন অবশ্য মেক্সিকো বিশ্বকাপ জিতে নিজেকে নিয়ে গেছেন সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের কাতারে। সেই এলিট ক্লাবের খুব কাছে গিয়ে তাকে ফিরতে হলো শূন্য হাতে। সোনালি ট্রফির পাশ দিয়ে মেসির হেঁটে যাওয়ার সেই দৃশ্যটা ব্রাজিল বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ছবি হয়ে থাকল।

এই একটিমাত্র শিরোপার জন্য তীর্থের কাকের মতো চেয়েছিলেন মেসি, সেটাকেই উঁচিয়ে সেদিন উৎসব করল জার্মানি। অথচ সোনালি এই ট্রফিটার জন্য ক্যারিয়ারের সব অর্জন বিসর্জনও দেওয়ার পক্ষে ছিলেন বার্সেলোনা সুপারস্টার। দেশের মানুষকে এই ট্রফিটা উপহার দেওয়ার স্বপ্নেই অবসর ভেঙে মেসি ফিরে এসেছেন আন্তর্জাতিক ফুটবলে।

দু-এক আসর পরপরই বিশ্বকাপ আয়োজন করে আসছিল আমেরিকা মহাদেশ। কিন্তু এবার লম্বা বিরতি দিয়েই বিশ্বকাপের আসর ফেরে আমেরিকায়। মহাদেশটির প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পায় ব্রাজিল। এর আগে সবশেষ ১৯৭৮ সালে আমেরিকা মহাদেশে বসেছিল ফুটবল মহাযজ্ঞ।

শুধু ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার দুঃস্বপ্নের আসর বলেই নয়, কুড়িতম বিশ্বকাপ ফুটবল দুনিয়ার মনে রাখার আরো কয়েকটা কারণ আছে। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া বদলে দেয় ফুটবল মহাযজ্ঞকে। আসরটা আলোচিত হয়ে আছে লুইস সুয়ারেজের কামড়কাণ্ডের জন্যও। বহুল আলোচিত এই বিশ্বকাপ দিয়েই রাজত্বে ফেরে জার্মানি। লাম-ক্লাসা-মুলাররা দেশের পক্ষে জিতে নেন চতুর্থ ট্রফি।

২০তম বিশ্বকাপ আমেরিকার মাটিতে হবে সেটা নির্ধারণ হয়েছে আগেই থেকেই। দ্বিতীয়বার স্বাগতিক হওয়ার জন্য জন্য ব্রাজিলকে অবশ্য বেগ পেতে হয়নি। কলম্বিয়াও আগ্রহ প্রকাশ করেছিল বিশ্বকাপ আয়োজনের। ভোটাভুটির প্রস্তুতি নিচ্ছিল ফিফা। কিন্তু সেটার আর দরকার পড়েনি। আয়োজক হওয়ার দৌড় থেকে সরে দাঁড়ায় কলম্বিয়ানরা।

২০৮ দলের বাছাই থেকে ৩১টি দল মূলপর্বের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। যেখানে পাঁচটি ল্যাটিন আমেরিকার দল নিশ্চিত করে বিশ্বকাপের টিকিট। সঙ্গে ব্রাজিল তো আছেই। এই আসর দিয়েই রেকর্ড সর্বোচ্চ ল্যাটিন জায়ান্ট দল অংশ নেয় বিশ্বকাপে।

বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলো হলো- ব্রাজিল (স্বাগতিক), আর্জেন্টিনা, চিলি, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, উরুগুয়ে, আস্ট্রেলিয়া, ইরান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, আলজেরিয়া, ক্যামেরুন, ঘানা, আইভরি কোস্ট, নাইজেরিয়া, কোস্টারিকা, হন্ডুরাস, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, বসনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, রাশিয়া, স্পেন ও সুইজারল্যান্ড।

ফুটবলের দেশটিতে ১২টি ভেন্যুতে গড়ায় বিশ্বকাপের সর্বমোট ৬৪টি ম্যাচ। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় অঘটনগুলো ঘটেছিল গ্রুপপর্বে। গত আসরে ফাইনালে মধুর একটা প্রতিশোধ নেয় নেদারল্যান্ডস। পিছিয়ে পড়েও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে ৫-১ গোলে গুঁড়িয়ে দেয় ডাচ শিবির। পরের ম্যাচে চিলির কাছে ২-০ গোলে হার। দুটি হারই চ্যাম্পিয়নদের ছিটকে দেয় গ্রুপপর্ব থেকে।

আসরের শুরু থেকেই হট ফেভারিট ছিল স্বাগতিক ব্রাজিল। তারুণ্যে ঠাসা দলটি অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে উঠেছিল সেমিফাইনালে। কিন্তু শেষ চারের টিকিট কাটার সময় সেলেকাওদের হারাতে হয়েছে প্রাণভোমরা নেইমারকে। কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার শারীরী ফুটবল মনোভাবের বলি হন ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন।

কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার জুনিগার সঙ্গে বল দখলের লড়াই করতে গিয়ে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায় নেইমারের। এই ইনজুরি নিয়েই চেনা মঞ্চের মহাযজ্ঞ থেকে ছিটকে যান তিনি। ওই ম্যাচেই আবার চোটের শিকার হন ব্রাজিল অধিনায়ক ও বিশ্বসেরা ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা। রক্ষণ ও আক্রমণভাগের সেরা দুই তারকার শূন্যতা আর পুষিয়ে নিতে পারেনি ব্রাজিল।

সেমিফাইনালে অস্কার-লুইজরা জার্মানির কাছে উড়ে যান খড়কুটোর মতোই। গোটা বিশ্বই যেন বিভ্রান্তিতে পড়ে গিয়েছিল জার্মানদের গোলবন্যা দেখে। ফুটবলপ্রেমীদের চোখে খেলা করে অবিশ্বাস। গোলের হাইলাইটস হচ্ছে না তো! বিপর্যস্ত, হতবিহ্ববল, চূর্ণ ব্রাজিল তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচে আবার নেদারল্যান্ডসের কাছে বিধ্বস্ত হলো ৩-০ গোলে।

বেলো হরিজন্তের ভুতুড়ে সেই ম্যাচে গোল করলেন মিরোস্লাভ ক্লোসাও। আর তাতেই ব্রাজিল কিংবদন্তি রোনালদোর (১৫) করা বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটা ভেঙে ফেলেন জার্মান তারকা (১৬)। তবে সর্বোচ্চ ছয় গোল করে গোল্ডেন বুট জিতে নেন কলম্বিয়ার ফুটবল বিস্ময় হ্যামেস রদ্রিগেজ। আসরজুড়ে দ্যুতি ছড়ানোর পুরস্কার হিসেবে মেসির হাতে ওঠে ওঠে শান্ত্বনার সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতিস্বরূপ গোল্ডেন বল।

শুধু মেসি, নেইমার নন, আসরা দুঃস্মৃতি উপহার দিল সুয়ারেজকেও। গোল করতে না পারার হতাশায় ইতালিয়ান ডিফেন্ডার জর্জিও কিয়েলিনের কাঁধে কামড় দিয়ে বসেন উরুগুয়ান স্ট্রাইকার। লাল কার্ড তো বটেই, পরবর্তী শাস্তি হিসেবে সুয়ারেজ চার মাস ও আন্তর্জাতিক নয় ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান।

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.