শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ, শুরু হচ্ছে উন্মাদনা

আজ থেকে শুরু হচ্ছে ২১তম ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ। বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই ক্রীড়াযজ্ঞের এবারের আসর বসছে রাশিয়ায়। ইতোমধ্যেই অংশগ্রহণকারী ৩২ দল রাশিয়ায় নিজেদের আস্তানা গেড়েছে। প্রস্তুত হয়ে উঠেছে রাশিয়ার ১১ শহরের ১২টি ভেন্যু। আগামী ১৫ জুলাই মস্কোতে শেষ হবে এবারের বিশ্বকাপ। তার আগে, আগামী একটা মাস সারা বিশ্ব বুদ হয়ে থাকবে ফুটবলের নেশায়।

এবারই প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পেলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ ও বর্তমান বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়া। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার পর রাশানদের ক্ষমতার যে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছিলো, গত কয়েক দশকে তা থেকে উত্তরণ ঘটেছে বর্তমান রাশিয়ান ফেডারেশনের। ক্রমেই তারা হয়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। এবারের ফিফা বিশ্বকাপ দিয়ে নিজেদের সেই ক্ষমতার একটা প্রকাশও ঘটাতে চায় রাশিয়া।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশে বিশ্বকাপ— মানে এই বিশ্বকাপ দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞ ঢুকে যেতে পারে নতুন যুগে। এবারের বিশ্বকাপে সমাগম ঘটতে পারে সবচেয়ে বেশি দর্শকের। ইতোমধ্যেই রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ভিড় করেছেন অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর হাজার হাজার সমর্থক। বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায়নি, এমন দেশেরও হাজার হাজার সমর্থক পা ফেলেছেন বিশ্বকাপের দেশে। সব মিলিয়ে রাশিয়া যেনো হয়ে উঠেছে ছোট একটা পৃথিবী।

৩২টি দলের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা এবং হাজার হাজার পর্যটক; এদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য রীতিমত মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হচ্ছে রাশিয়াকে। শহরে শহরে স্থাপন করা হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই আয়োজন ঘিরে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালাতে পারে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠি। ফলে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশকে নিতে হচ্ছে স্মরণকালের সবচেয়ে সেরা নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ধারণা করা হচ্ছে এবার বিশ্বকাপের মোট ৬৪ ম্যাচে মাঠে থাকবেন অন্তত দেড় মিলিয়ন বা ১৫ লাখ দর্শক। অর্থাৎ ম্যাচ প্রতি দর্শক উপস্থিতি আশা করা হচ্ছে অন্তত ২৩ হাজার ৪৩৭ জন করে। এই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দর্শকই মাঠে উপস্থিত থাকার কথা। আর টিভিতে দর্শক সংখ্যা আশা করা হচ্ছে তিনশ কোটি!

প্রতিবার বিশ্বকাপ এলেই সম্ভাব্য বিজয়ী নিয়ে শুরু হয়ে যায় নানা কথা। নানা জন দিতে থাকেন নানা রকম মত। এবারও ব্যতিক্রম নয়। সম্ভাব্য বিজয়ী কে হতে পারে তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে খরচ হচ্ছে কোটি কোটি মিনিট, লেখা হচ্ছে বিলিয়ন বিলয়ন শব্দ।

প্রত্যেকবারের মতো এবারও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের দিকেই থাকবে সবার দৃষ্টি। সে হিসেবে বেশি দর্শকের চোখ থাকবে জার্মানির উপর। এ ছাড়া বিশ্বকাপটা যেহেতু ইউরোপের মাটিতে, সেহেতু তাদের ফেভারিট হওয়াটাও স্বাভাবিক।

জার্মানির পর নাম আসবে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেনের মতো দেশের। নাম আসছে বেলজিয়ামেরও। তাদেরকে এবারের আসরের ডার্ক হর্স মনে করা হচ্ছে। গত কয়েক বছরে বেলজিয়ামের পারফর্ম এতোটাই সমীহ জাগানিয়া যে, কেউ কেউ তো তাদের হাতেই বিশ্বকাপ দেখার স্বপ্ন দেখছেন।

স্বপ্নের সীমা প্রায় আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার নামে। বিশ্বকাপে সবচেয়ে সফল দল ব্রাজিল ছিলো গত বিশ্বকাপের আয়োজক। ঘরের মাঠে সেমিফাইনালে বেশি উঠতে পারেনি তারা। অথচ দলটা ছিলো তারকায় ঠাসা। সেই তারকারা গত চার বছরে হয়েছেন আরো বেশি পরিণত। ফলে এবার যদি ব্রাজিল বাজিমাত করে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

তাদের চেয়েও আশার বেলুন বেশি উড়ছে আর্জেন্টিনার আকাশী-সাদা জার্সির রঙে। গত বিশ্বকাপে শেষ সময়ে গিয়ে মারিও গোটশের হৃদয় ভাঙা গোলে বিশ্বকাপ বঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। সুদীর্ঘ ২৮ বছর পর ফাইনালে উঠে তাদের ফিরতে হয় খালি হাতে। সেই খালি হাতটা এবার ভরার প্রত্যয় নিয়ে রাশিয়া গেছেন মেসি-আগুয়েরো-হিগুইয়েইনরা।

বিশ্বকাপ শেষ পর্যন্ত যাদের হাতেই উঠুক, আগামী একটা মাস ক্রীড়ামোদি মানুষদের জন্য সত্যিকারের উৎসব। যে উৎসবের শুরুটা হচ্ছে স্বাগতিক রাশিয়া ও সৌদি আরবের ম্যাচ দিয়ে। সৌদি আরব বা গ্রিন ফ্যালকনরা মাঠে নামলেই হয়ে যাবে ইতিহাস। এই প্রথম কোনো বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ খেলছে কোনো এশীয় দেশ।

এ রকম ইতিহাস অবশ্য অনেকই হবে। বিশ্বকাপ মানেই যে বিশ্বের কাঁপাকাঁপি। সেই কাঁপাকাঁপিতে একটার পর একটা অসাধারণ ইতিহাস তো সৃষ্টি হবেই। যে ইতিহাসের সাক্ষী হবে পুরো বিশ্ব। বিশ্বকাপের উন্মাদনা এমনই শক্তিধর এক নাম!