ক্যারিয়ারের বাজেতম ম্যাচটাই কী খেলে ফেললেন মেসি?

তর্ক সাপেক্ষে বর্তমান বিশ্বের সেরা ফুটবলার, সর্বকালের সেরা হওয়ার দাবিদার, পাঁচবারের বর্ষসেরা, ছয়শর বেশি গোলের মালিক। এসবে আসলে লিওনেল মেসির পুরো বিশেষণ বুঝানো যাবে না। মেসি কে সেটা সবারই জানা। দিয়েগো ম্যারাডোনাকে ছাপিয়ে তাকেই আর্জেন্টিনার সর্বকালের সর্বসেরা ফুটবলার মনে করেন অনেকে। সেরা মেসির কাঁধে দায়িত্ব ছিল খাদের কিনারা থেকে আর্জেন্টিনাকে টেনে তোলার।

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দুর্বল আইসল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে পারেনি আর্জেন্টিনা। ফলে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জিততেই হতো। কিন্তু জেতা তো দূরের কথা বৃহস্পতিবার রাতে লুকা মডরিচ, ইভান রাকিতিচদের সামনে রীতিমতো বিধ্বস্ত হলো মেসির দল। পুরো ম্যাচে দাঁড়াতেই না পেরে ৩-০ গোলে হেরেছে আর্জেন্টিনা। এই ‘দুঃখ’ হজম করতে অনেক সময় লাগবে আর্জেন্টাইনদের। মেসি ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে যেমন খেললেন সেই অভিজ্ঞতা হজম করতেও সময় লাগবে।

প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করে তিনিই দলকে ডুবিয়েছিলেন। কাল নিজের ছায়া হয়ে থেকে তার পুনরাবৃত্তি করলেন। মেসি ভালো খেলতে না পারলে আর্জেন্টিনা যে সাদামাটা দল সেটা বরাবর প্রমাণিত হয়েছে। অনেকে বলছেন, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মেসি খেলতে পারেননি বলেই আর্জেন্টিনা ওভাবে উড়ে গেল।

পুরো প্রধমার্ধ জুড়ে মেসি শুধু হাঁটলেন, কয়েকবার দৌড় দিলেন। কিন্তু বল পায়ে নয়। প্রথমার্ধে মেসির পায়ে বল দেখা গেল হাতে গোনা কয়েক বার। পুরো প্রথমার্ধে মেসিকে মাত্র দুবার পাস দিয়েছেন আর্জেন্টিনা খেলোয়াড়রা! বুঝুন এবার। তার পুরো ক্যারিয়ারে অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হয় না।

দ্বিতীয়ার্ধেও জ্বলে উঠতে পারেননি মেসি। জটলার মধ্যে ভালো একটা সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা কাজে লাগাতে পারেননি। ৯০ মিনিটে কোনো সময়েই দেখা গেল না মেসির সেই দৌড়, ডিফেন্ডারদের বোকা বানানো ড্রিবলিং, ডিফেন্সচেরা পাস। কাল হয়তো আরেকবার প্রমাণিত হলো আসলেই বেশি চাপ নিতে পারেন না তিনি।

গত বিশ্বকাপের ফাইনাল, গত দুই কোপা আমেরিকার ফাইনাল এবং বার্সেলোনার হয়ে অনেক বড় ম্যাচে মেসিকে দেখা গেছে চাপে ভেঙে পড়তে। কালও পড়লেন। আর্জেন্টিনার খুব করে দরকার ছিল কালকের ম্যাচটা জেতার। কিন্তু বাজেভাবে হেরে উল্টো গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেওয়ার বড় শঙ্কার সামনে দাঁড়িয়ে দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

মেসি বিশ্বকাপ এনে দিবে, এমন স্বপ্নে বিভোর ছিলেন আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। কে জানে, কদিন পর আবার তাদের ভাবতে হয় কি-না যে, মেসির কারণেই গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়তে হলো! আইসল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করাটাই এখন আর্জেন্টিনার জন্য বড় ক্ষত।