নেইমার যেনো মেঘলা আকাশ, কোতিনহো তাতে রঙধনু!

তিন ম্যাচে দুই জয় ও এক ড্র। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে ব্রাজিলের আর কিছুই করার দরকার পড়েনি। সাম্বার দেশের দল, পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা সদাপটে উঠে গেছে বিশ্বকাপের পরের পর্বে। তাদের অপেক্ষা এখন ‘আসল বিশ্বকাপের’। যেখানে ব্রাজিলের প্রথম প্রতিপক্ষ মেক্সিকো।

‘আসল বিশ্বকাপ’ শুরুর অপেক্ষা ঠিক আছে, ব্রাজিল কি মনেপ্রাণে আরো একটা কিছুর অপেক্ষা করছে না? তাদের বিশ্বকাপ স্বপ্নের, তাদের ‘হেক্সা’ মিশন পূরণের সবচেয়ে বড় ভার যার কাঁধে, সেই নেইমার যে এখনো আলো ছড়াতে পারছেন না। একটা গোল তিনি করেছেন বটে, তবে মিস করেছেন তার চেয়ে ঢের বেশি। ইনজুরির ধকল কাটিয়ে তার পা জোড়ার পুরোনো গতিও ফিরছে। তা দেখে নিশ্চয় ঝলমল করে উঠছে ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের চোখমুখ। ফাউল পাওয়ার অতিচেষ্টায় নেইমারের পতনপ্রবণতা হাস্যরস সৃষ্টি করলেও তার ভয়ঙ্কর হয়ে উঠার শক্তিকে অগ্রাহ্য করা যাচ্ছে না কিছুতেই। আসল বিশ্বকাপের সাথে ব্রাজিল অপেক্ষা করছে নেইমারের সেই সত্তারও।

নেইমার জ্বলে উঠেননি, তাতেই গ্রুপসেরা ব্রাজিল। এই দলকে নিয়ে বিশ্বকাপের বাকি থাকা সময়ে স্বপ্নের উড়াউড়ি যে মাত্রা ছাড়াতে পারে, তাতে অস্বাভাবিকতা নেই কোনো। নেইমার যদি শেষ পর্যন্ত তার সেরা রূপে ফিরতে নাও পারেন, তারপরও ব্রাজিল আসর শেষ করতে পারে সবার উপরে থেকে। কারণ তাদের আছেন একজন কোতিনহো।

এখন পর্যন্ত ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্বপ্ন পূরণের জগতে নেইমার যদি হন মেঘলা আকাশ, কোতিনহো তাতে রঙধনুর সাতরঙ। কট্টর ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরা যতোই তাদের স্বপ্ন পূরণের ভার নেইমারের একক কাঁধে চাপিয়ে দিন না কেনো, নেইমারের একার পক্ষে যে তা সম্ভব, তার কোনো প্রমাণ এখনো অনুপস্থিত। সে তুলনায় কোতিনহোর উপস্থিতি দুর্দান্ত রকমের প্রভাববিস্তারি। গ্রুপ পর্ব উতরে যাওয়ার চেষ্টায় প্রতিপক্ষের জালে পাঁচবার হামলে পড়েছে ব্রাজিল। এই পাঁচ সফল হামলার তিনটিতেই আছে কোতিনহোর নাম। যার দুটি আবার তারই।

এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে দিচ্ছে, নেইমারের ধূসর হয়ে থাকার দিনেও ব্রাজিলের হাসি অমলিন থাকতে পারে। কোতিনহোর সঙ্গে সেই সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছেন পৌলিনহোও। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে, সার্বিয়ার বিপক্ষে একটা গোল করে স্কোরশিটে নাম উঠে গেছে তারও। যে গোলটা আসলে কোতিনহো ও পৌলিনহোর যৌথ প্রচেষ্টার ফল। এই প্রচেষ্টার দৃশ্য শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠতে পারে ব্রাজিলের ‘হেক্সা’ পূরণের প্রতীকী রূপ।

ব্রাজিলের ফুটবলে সাম্বার নাচন আর নেই। মোহনীয় সৌন্দর্য্যের হাতছানিও হয়ে গেছে অতীত। কিন্তু ব্রাজিল নাম ও ঐতিহ্যের সম্মোহন এখনো বর্তমান। সেই সাথে কোতিনহো-পৌলিনহোর মতো পরিশ্রমী খেলোয়াড়দের সম্মিলন এই ব্রাজিলকে সত্যিই করে দিতে পারে হেক্সার মালিক।

সেই স্বপ্ন পূরণের পথে নেইমার হয়তো অপরিহার্য নন, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। তার উপস্থিতিই ম্যাচের রঙে যোগ করতে পারে বাড়তি উজ্জ্বলতা। কোতিনহো রঙধনু হয়ে উঠুন আরো, ব্রাজিল চাইবে, সেই সাথে নেইমারও যাতে মেঘলা আকাশের রূপ বদলে হয়ে উঠেন নীলাকাশ। ব্রাজিলের স্বপ্ন পূরণের সত্যিকারের সারথী।