দুঃখ ভোলার রাত দিতে পারবেন মাশরাফিরা?

শেষ ওভারে আট রান নিতে না পারার আফসোস নিয়ে মাশরাফি বিন মর্তুজা যখন সংবাদ মাধ্যমের সামনে এলেন, তার চোখে-মুখ তখন ছেয়ে ছিলো বিষন্নতায়। টেস্ট সিরিজ হারের পর বিপর্যস্ত একটা দলকে তিনি জাগিয়ে তুলেছিলেন ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই জয় পাইয়ে দিয়ে। যে জয় গড়ে দিয়েছিলো সিরিজ জয়ের ভিত। পরের ম্যাচে সিরিজটাও জিতে নিয়ে উৎসবের মঞ্চ সেজে উঠেছিলো গায়ানায়। কিন্তু তারপরই ওই অভিশপ্ত শেষ ওভার।

শেষ কাজটা সারতে তখন উইকেটে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। বর্তমান বাংলাদেশ দলে যার ব্যাটটাই সবচেয়ে বেশি ভরসা দেয়। কিন্তু প্রথম বলেই তিনে পা দেন ফুলটসের পাতা ফাঁদে। বাংলাদেশের উৎসবের মঞ্চও যেনো হেলে পড়ে তাতে।

গায়ানার ওই হারই অবশ্য ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের শেষ পরিণতি লিখে দিতে পারেনি। শনিবার সেন্ট কিটসে আরো একটা সুযোগ পাচ্ছেন মাশরাফিরা। সেন্ট কিটসে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের শেষ ম্যাচ। যেখানে জিততে পারলে হেলে পড়া উৎসবের মঞ্চটা আবার দাঁড়িয়ে যেতে পারে বুক টান করে!

সেন্ট কিটসে কী অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য- বলে দিবে সময়ই। তবে ইতিহাসের যা অবস্থা, তাতে সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নেয়ার খুব বেশি কিছু নেই মাশরাফিদের। সেন্ট কিটসে এখন পর্যন্ত দুটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। তাতে জয় পরাজয় সমান সমান।

বাংলাদেশ তাই অনুপ্রেরণা খুঁজতে পারে সিরিজের প্রথম ম্যাচ থেকে। যেখানে ২০০ রানের এক অনবদ্য জুটি গড়ে দলকে প্রতিপক্ষের চেয়ে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে গিয়েছিলেন তামিম ও সাকিব। যে ম্যাচে মুশফিক ১১ বলে ৩০ রান করে ক্যারিবীয়দের ছিটকে ফেলেছিলেন ম্যাচ থেকে।

অনুপ্রেরণার উৎস কিন্তু খোঁজা যায় দ্বিতীয় ম্যাচেও। ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হার দিয়ে শেষ হলেও তাতে বাংলাদেশের আধিপত্যই ছিলো বেশি। শেষ দুই ওভারের চার ফুলটস থেকে দুটি উইকেট না হারালে সেন্ট কিটসে বাংলাদেশের আগমন হতে পারতো কেবলই উদযাপনের মন্ত্র জপতে জপতে। কিন্তু তার বদলে এখন তাদের ভাবতে হচ্ছে উল্টো কিছু।

সিরিজ জয় ছাড়া আজ কিছু ভাবার কথা নয় বাংলাদেশের। এই ভাবাভাবির মধ্যে নতুন ভাবনার জন্ম দিয়েছে সাব্বির রহমানের পারফর্ম্যান্স। প্রথম ম্যাচে চার বলে তিন রান করা সাব্বির পরের ম্যাচে ১১ বলে ১২ রানের বেশি করতে পারেননি। তার চেয়ে বড় কথা হলো, দ্বিতীয় ম্যাচে দলকে জেতানোর দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যর্থ সাব্বির।

আটলান্টিকের কোলে ভেসে থাকা শহর সেন্ট কিটসে সাব্বির সম্ভবত ব্যর্থতার অতল থেকে মাথা জাগিয়ে তোলার আরো একটা সুযোগ পাচ্ছেন। আবার সুযোগটা তার হাতছাড়াও হয়ে যেতে পারে। টি-টোয়েন্টি খেলতে এরই মধ্যে দলে যোগ দিয়েছেন সৌম্য সরকার। টিম ম্যানেজমেন্ট নাকি টি-টোয়েন্টির আগেই তাকে মাঠে নামিয়ে দেয়ার একটা চিন্তা এরই মধ্যে করে ফেলেছে। যদিও তা চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নয়। ম্যাচের আগ মুহূর্তেই কেবল তা চূড়ান্ত হতে পারে।

অর্থাৎ বাংলাদেশ দলে সম্ভবত এই একটা পরিবর্তনই আসবে। সামান্য কথা ছিলো এনামুল হক বিজয়কে নিয়েও। কিন্তু ওয়ানডে অধিনায়ক তাকে আগেই সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সুযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন। সুতরাং সিরিজের শেষ ম্যাচে তামিমের ওপেনিং সঙ্গী তিনিই হচ্ছেন। দলে যে পরিবর্তনই আসুক না কেনো, বাংলাদেশ লক্ষ্য স্থির থাকছে ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ের উৎসব করার দিকেই।

চলচ্চিত্রে বা গল্পের বইয়ে মনোরম দৃশ্যের চিত্র দেখানো হয় বা বর্ণনা দেয়া হয়, সেন্ট কিটস নাকি সে রকমই একটা শহর। নাগরিক ব্যস্ততা ভুলে নির্মল ছুটি কাটানোর জন্য নাকি এই শহর অতুলনীয়। তা সেই শহরটা উৎসবের জন্য কতোটা উপযোগী? তা নিশ্চয় না বললেও হয়। সেই উৎসব মাশরাফিরা করার সুযোগ পেতে পারেন বাংলাদেশ সময় আজ রাতেই। সেন্ট কিটসে যদি মাশরাফিরা উৎসবের সময় নামিয়ে আনতে পারেন, তাহলে তা নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের ভোরের বাতাসকে করে দিবে দুঃখ ভোলানিয়া!