বাঁচা-মরার লড়াইয়ে কাদের কাঁধে ওপেনিংয়ের ভার?

যে স্বপ্ন নিয়ে এসে কাপ খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ, তা এখন অনেকটাই হুমকির মুখে। গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচের একটি জিতলেও, সুপার ফোরে এসে প্রথম ম্যাচেই হেরে বসেছে বাংলাদেশ। এবার দ্বিতীয় ম্যাচের পালা। যা আসলে পরিণত হয়েছে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে। যে লড়াইয়ে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। এই দলের কাছেই গ্রুপ পর্বে হারতে হয়েছিল মাশরাফি বিন মুর্তজাদের। বাঁচা-মরার এই ম্যাচে কাদের কাঁধে ওপেনিং এর দায়িত্ব দিবে বাংলাদেশ, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এখন পর্যন্ত খেলা তিন ম্যাচের প্রতিটিতে বাংলাদেশের ওপেনাররা ব্যর্থ হয়েছেন। সেই ব্যর্থতার ভার নিতে গিয়ে ভেঙে গেছে মিডল অর্ডারও। প্রথম ম্যাচে মুশফিকুর রহিম ১৪৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে ওপেনারদের ব্যর্থতা কিছুটা হলেও ঢেকে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে ওপেনারদের ব্যর্থতা বাংলাদেশের হারের শুরুটা লিখে দিয়েছে। এ কারণে অন্য যে কোন বিভাগের চেয়ে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়েই আফগানিস্তানের বিপক্ষে বেশি চিন্তা হচ্ছে।

হঠাৎ পড়া ইনজুরিতে তামিম ইকবাল এশিয়া কাপ ছেড়ে আসার পর লিটন দাসের সঙ্গে ওপেনিংয়ের দায়িত্ব সামলেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দুই ম্যাচে সুযোগ পেয়ে কোনটিতেই অন্তত দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি তিনি। লিটন দাসও ব্যর্থ। তামিম ইকবালের ওপেনিং সঙ্গী হওয়ার যে সম্ভাবনা তার মধ্যে দেখা হয়েছিলো, তিন ম্যাচে ব্যর্থ হয়ে সে সম্ভাবনার প্রায় মৃত্যু ঘটিয়েছেন তিনি। এ দুজনের ব্যর্থতা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে এক রকম বাধ্য করেছে ইমরুল কায়েস ও সরকারকে ডাকার জন্য। ইতোমধ্যেই তারা আরব আমিরাতে পৌঁছে গেছেন এবং আজকের ম্যাচে তাদের মাঠে নেমে পড়ার সম্ভাবনা আছে।

আসরের মাঝপথে দুজন ক্রিকেটারকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে নানা রকম বিতর্ক হচ্ছে। এ বিতর্কের মূল কারণ বাজে খেলার কারণেই জাতীয় দল থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন এ দুজন, তারপর তারা এমন বিশেষ কিছু করেননি যে কারণে তাদের দলে ডাকা যেতে পারে। কিন্তু অন্যদের ব্যর্থতার কারণে এ ছাড়া কিছু করারও ছিল না। নতুন দুই জনের অন্তর্ভুক্তি তাদের উপর যেমন চাপ সৃষ্টি করছে, একইভাবে দলের কম্বিনেশনেও সৃষ্টি করছে নতুন সমস্যা। এই সমস্যা সমাধান করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে যে চাপ আসবে, তা সামাল দেয়া কতটা সম্ভব তা নিয়ে সন্দেহ থাকছেই।

লিটন দাস আজকের ম্যাচে থাকবেন কি না তা নিয়ে কিছুটা সংশয় আছে। তবে তরুণ ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেনকে আজ বাইরে থাকতে হচ্ছে এটি প্রায় নিশ্চিত। নাজমুল হোসেনের জায়গায় লিটন দাসের সঙ্গে ওপেনিং করতে পারেন ইমরুল কায়েস। আর যদি টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করে যে লিটন দাসও সুবিধা করতে পারবেন না, তাহলে তাকেও বসিয়ে দেয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ইমরুল কায়েসের সঙ্গী হবেন সৌম্য সরকার। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আরব আমিরাতে গিয়েই মাঠে নেমে পড়তে হবে তাদের। এ বিষয়টি তাদের খেলার উপর রাখতে পারে নেতিবাচক প্রভাব। সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

যদিও এই দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার আগে বলে গেছেন যে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে যে কোন ধরনের আবহাওয়ার সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা তাদের আছে এবং আরব আমিরাতেও তারা সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে ভালো কিছু করার চেষ্টা করবেন। দুজনই সুযোগ পেলে নিজেদের সেরাটা দিয়ে দলের জন্য ভালো কিছু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

ওপেনিংয়ের ভার শেষ পর্যন্ত যাদের কাঁধেই পড়ুক না কেন, তাদেরকে যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে তা এক রকম নিশ্চিত। বিশেষ করে বিস্ময় স্পিনার মজিব উর রহমানের বিপক্ষে তাদের দেখাতে হবে অসাধারণ দক্ষতা। মুজিব টিনেজার হলেও তার বল খেলতে বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের পড়তে হয়েছে কঠিন পরীক্ষার মুখে।

আজকের ম্যাচ খেলতে নামার আগে কোন দল মানসিকভাবে এগিয়ে থাকবে, সেই ধারণা মোটামুটি সবারই আছে। গ্রুপ পর্বে যখন এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল, তখন বাংলাদেশ হেরেছে ১৩৬ রানে। যা নিশ্চিতভাবে আজকের ম্যাচে আফগানিস্তানকে মানসিকভাবে সাহস জোগাবে। যদিও সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুব কাছে গিয়েও তারা হেরে গেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের হারটা এমন ছিল, যার কারণে পাকিস্তানের চেয়ে বেশি প্রশংসিত হচ্ছে তারাই। শেষ ওভারেও তারা পাকিস্তানকে রেখেছিলো কঠিন চাপের মুখে। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান শোয়েব মালিকের কল্যাণে ম্যাচটা কোনমতে জিতেছে পাকিস্তান। একটু এদিক ওদিক হলেই বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার পর এই এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে হারানোর স্বাদ পেয়ে যেত আফগানিস্তান।

সব মিলিয়ে আজকের আবুধাবির ম্যাচ টি বাংলাদেশের জন্য খুবই কঠিন হওয়ার কথা। এই কঠিন কমে আসতে পারে, যদি ওপেনাররা দলকে নির্ভর করার মত একটি শুরু এনে দিতে পারেন। সেটা হলেই কেবল এসে কাপ থেকে ভালো কিছু করার স্বপ্নটা পূরণ হতে পারে। না হলে বাংলাদেশের এশিয়া কাপের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে যেতে পারে আজই। সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচটি হয়ে থাকবে কেবলই নিয়ম রক্ষার আয়োজন।