টেস্টেও কি দেখা যাবে ওয়ানডের বাংলাদেশকে?

যতো দিন যাচ্ছে, ওয়ানডের বাংলাদেশ হয়ে উঠছে ততোই ভীতিজাগানিয়া। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে যে কয়েকটি দল গত বিশ্বকাপের পর থেকে সবচেয়ে বেশি সফলতা দেখিয়েছে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে শীর্ষ দিকে। কিন্তু টেস্টে এই পরাক্রম অনুপস্থিত। টেস্ট খেলার বয়স সাবালকত্বের সীমা ছাড়িয়ে গেলেও, সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখনো দেখাতে পারছে না ওয়ানডের প্রতিপত্তি। তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে কি ওয়ানডডের বাংলাদেশকে দেখা যাবে? অত্যন্ত যৌক্তিকভাবেই উঠে যাচ্ছে এমন প্রশ্ন।

তিন নভেম্বর থেকে সিলেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের টেস্ট সিরিজ। সিরিজের প্রথম ম্যাচটি দিয়ে টেস্ট আঙিনায় পা রাখবে বিশ্বের অন্যতম দৃষ্টিগ্রাহী এই স্টেডিয়াম। দেশের একমাত্র গ্রিন গ্যালারির এই ভেন্যুতে এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি আয়োজিত হয়েছে, এবার হবে টেস্ট। বাকি থাকবে কেবল ওয়ানডে।

আসন্ন এই টেস্ট সিরিজের আগে তিন ম্যাচের ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে দাঁড়াতেই দেয়নি বাংলাদেশ। দলের পঞ্চপাণ্ডব বলে প্রতিষ্ঠিত যে তারকা, তাদের মধ্য থেকে দুজন এই সিরিজে ছিলেন না। বাকি যে তিনজন ছিলেন, তার পারফর্ম্যান্সও ছিলো গড়পড়তা। তারপরও বাংলাদেশ জিতেছে দারুণ দাপট দেখিয়ে। সেই দাপট এবার টেস্টে দেখার অপেক্ষায় আছে দর্শকরা। বিশেষ করে সিলেটের প্রথম টেস্ট বলে সেখানে বাড়তি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে ক্রিকেটপ্রেমিরা।

ওয়ানডের পারফর্ম্যান্স টেস্টে দেখা যাবে কি না, এ বিষয়ে মঙ্গলবার মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিলো সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানের কাছে। বিসিবির প্রভাবশালী এই পরিচালক উত্তরে বলেন, ‘ওয়ানডে সিরিজটা খুব ভালো গিয়েছে। প্রথমটাতে দল কিছুটা নড়বড়ে থাকলেও সিরিজটা আমরা জিতে গেছি। সিরিজের প্রথম ম্যাচগুলো জিতলে মানসিকভাবে দল এগিয়ে থাকে। বাংলাদেশ খুব প্রভাব দেখিয়ে খেলেছে। এটা সত্যি যে, আমরা ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি যেভাবে খেলি, টেস্টে আমাদের সে রকম পারফর্ম্যান্স নেই। তবে আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। আশা করি এই সিরিজেও দল ভালো করবে। যদিও আমাদের সেরা দুজন খেলোয়াড় এই মুহূর্তে নেই। তাদেরকে হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে পাবো। আমি মনে করি না তাদের না থাকা আমাদের তরুণদের জন্য দারুণ সুযোগ।’

তিনি আরো বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমরা জিম্বাবুয়ের চেয়ে ভালো দল। এটা মাথায় রাখতে হবে। টেস্টেও আমাদের ভালো করার সম্ভাবনা আছে। আমাদের মানসম্মত খেলোয়াড়ও বেশি। বাংলাদেশ যেভাবে খেলছে, সেভাবে খেলতে ভালো কিছু হবে বলেই বিশ্বাস করি।’

টেস্টে বাংলাদেশের ধারাবাহিক সফলতার অভাবের মূল কারণ বোলিং লাইনের দুর্বলতা। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ডাকসাইটে কোনো বোলিং আক্রমণ বাংলাদেশ কখনোই পায়নি। অথচ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বোলিং পৃথিবীর অন্যতম সেরা।

এ প্রসঙ্গে সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘সে জন্যেই (বোলিং ভালো নয় বলে) টেস্টে আমরা সেভাবে ভালো করছি না। এখনো কিছু জায়গা আছে, যেখানে আমাদের মানসম্মত খেলোয়াড়ের ঘাটতি পূরণ করত হবে। আপনারা দেখেছেন টেস্টে কিছু নতুন খেলোয়াড় আছে, তারা কেমন পারফর্ম করে সেটা দেখতে হবে। টেস্ট জিততে হলে ২০টি উইকেট নিতে হবে। অর্থাৎ ব্যাটসম্যানদের সাথে বোলারদেরও ভালো করতে হবে। তরুণদের জন্য এটা ভালো সুযোগ। তারা ভালো করলেই সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে।’

টেস্ট সিরিজের জন্য বাংলাদেশ যে ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে, তাতে নতুন মুখ চার জন। ঘরোয়া পর্যায়ে ভালো খেলেই জায়গা করে নিয়েছেন তারা। যদিও খালেদ আহমেদ নামে নতুন যে পেসার জায়গা পেয়েছেন, ঘরোয়া পর্যায়ে তার সাফল্য থাকলেও অভিজ্ঞতায় তিনি অন্য তিনজনের চেয়ে পিছিয়ে। তারপরও তার উপর ভরসা করেছে টিম ম্যানেজমেন্টে। দীর্ঘদেহী এই পেসারের মধ্যে বিশেষ সম্ভাবনা দেখেছেন দলের প্রধান স্টিভ রোডস।

সিলেটে প্রথম ম্যাচের পর দুই দল সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে মুখোমুখি হবে ঢাকায়। এর মাধ্যমে শেষ হবে সিরিজটি। জিম্বাবুয়ে ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার আগেই ঢাকায় পা রাখবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তারা দুই টেস্ট এবং তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হবে।