আমরা দুঃখিত, বললেন বিষণ্ন মাহমুদুল্লাহ

ওয়ানডে সিরিজে উড়িয়ে দলের বিপক্ষে টেস্টে উড়ে যাওয়ার পর খুব বেশি কিছু থাকে না ব্যাখ্যা করার মতো। মাহমুদুল্লাহরও হলো সেই দশা। সিলেট টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে ১৫১ রানের অবিশ্বাস্য হারের পর তিনি বললেন, আমরা দুঃখিত!

একদমই যে ব্যাখ্যা হয় না, তা অবশ্য নয়। অধিনায়ক হিসেবে এমন হৃদয়পোড়া হারের পর কিছু ব্যাখ্যা তো দিতেই হয়। মাহমুদুল্লাহও তাই ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে কিছু কথা বলেছেন। তার কথায় কথায় মূল কথা ছিলো দলের ‘ডিসিপ্লিন’।

‘এমন ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা দেয়া আসলে খুবই কঠিন। একটা জিনিস বলতে পারি, টেস্ট ক্রিকেট খেলতে যেই ধরনের ডিসিপ্লিন থাকা উচিত, আমার মনে হয় না আমরা সেই ডিসিপ্লিন দেখাতে পেরেছি। কারণ উইকেট বেশ ভাল ছিলো, এমন কি আজও উইকেট ভালো ছিলো। একটা বা দুইটা বল হয়তো টার্ন করেছে, কিন্তু আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে।’

এবার নিয়ে টানা আটটি টেস্ট ইনিংসে বাংলাদেশ ২০০ রানও করতে পারেনি। এটা শুধুই টেস্ট ক্রিকেটের ‘প্রয়োজনীয়’ ডিসিপ্লিনের সমস্যা? নাকি টেস্ট মেজাজ তৈরি করতে না পারার ব্যর্থতাও সাদা পোশাকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশকে এমন হাস্যকর করে তুলছে?

অবশ্যম্ভাবী এমন প্রশ্নের মুখে পড়ার আগেই মাহমুদুল্লাহ বলে যান যে, ডিসিপ্লিন নিয়ে ভাবতে হবে, সমস্যা সমাধানের উপায় বের করতে হবে ইত্যাদি; বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে কান পাতলেই যে কথা শোনা যায়।

শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক মনে করছেন যে সিলেটে বাংলাদেশের হারের মূল কারণ ব্যাটসম্যানদের নিদারুণ ব্যর্থতা। অপ্রয়োজনীয় শট খেলতে চাওয়ার অভিলাষও ডোবার কারণ বলে মনে করেন তিনি।

মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা অনেকগুলো বলে খুব তুচ্ছভাবে আউট হয়েছি। আউটগুলো দৃষ্টিকটুও। ওই জিনিসগুলো ঠিক না, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে। এখানে ডিসিপ্লিন, মনোযোগের ব্যাপারও আছে। আমাদের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের সাথে কথা বলতে হবে, তারা কী চিন্তা করছিলো, এসব ভাবতে হবে। যদি ব্যক্তিগতভাবে বলি, আমি আজ বেশ পজেটিভ ছিলাম। ভেবেছিলাম আমি ভালো খেলে বড় জুটি গড়লে টার্গেটের কাছাকাছি যেতে পারব, আমরা ওই বড় পার্টনারশিপই করতে পারিনি। আপনি বড় জুটি না গড়তে পারলে ম্যাচ জিতবেন না।’

মাহমুদুল্লাহ যা বলেছেন, তার সবই জানা কথা। কিন্তু বাস্তবতা এটাই। টেস্ট ক্রিকেটে জানা কাজগুলোই করতে পারছেন না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ওয়ানডেতে যে ছন্দ দেখিয়ে বিশ্ব মাতিয়ে রেখেছেন মাহমুদুল্লাহ-মুশফিকরা, তার কিছুই নেই টেস্ট ক্রিকেটে। টেস্ট ক্রিকেটে কম মনোযোগের অভিযোগও আছে। যদিও মাহমুদুল্লাহ তা স্বীকার করেননি।

‘আমরা অবশ্যই টেস্ট ক্রিকেটকে গুরুত্ব দেই। কিন্তু আমাদের ব্যাটিংটা হচ্ছে না। ওয়ানডের ছন্দ আমরা টেস্টে আনতে পারছি না। এভাবে খেলতে থাকলে টেস্টে আমাদের কোনো অবস্থানই থাকবে না। আমাদের অবশ্যই শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। না হলে এভাবে টেস্ট খেলার কোনো মানে হয় না।’

এস বলতে বলতে মাহমুদুল্লাহ যেনো ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। টেস্ট ক্রিকেটে এই ধৈর্যটারই তো দরকার সবচেয়ে বেশি। এমন হারের পর অধিনায়কের মনোজগতে যে বিষণ্নতার অন্ধকার ভর করে, তা আড়াল করে ধৈর্য বজায় রাখা মনে হয় না খুব একটা সহজ কাজ!