‘অনেক কষ্ট করে রান করতে হয়েছে’

তার নামের সাথে অনেক দিন ধরেই জুড়ে আছে ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ তকমা। মুমিনুল হকের ক্যারিয়ার শুরুটা এমনভাবে হয়েছিলো যে, এই তকমা নিয়ে আপত্তি তারও ছিলো না। একের পর এক টেস্টে সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি করে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য উচ্চতায়।

কিন্তু দুর্ভাগ্য মুমিনুল হকের। নানা কারণে নিজের অবিশ্বাস্য ফর্মটা ধরে রাখতে পারেননি তিনি। সর্বশেষ চার টেস্টের আট ইনিংসেই যেমন, একবারও ৫০ ছুঁতে পারেননি মুমিনুল। এই ফর্মহীনতার সঙ্গে যোগ হয়েছিলো অহেতুক শট খেলতে গিয়ে আউট হওয়ার ঘটনাগুলো। যাতে ‘মুমিনুল এখন টেস্টেও চলেন না’ ধরনের কথাবার্তা শুরু হয়েছিলো।

কিন্তু মুমিনুলের চরিত্র যে যোদ্ধা লুকিয়ে আছে, সেই যোদ্ধা মুমিনুলকে ‘অচল’ করে দিতে পারে না। মুমিনুল তাই প্রবল চাপ ও বিতর্কের বিপরীতে দাঁড়িয়ে তিনি খেলে ফেলতে পারেন ১৬১ রানের বিশাল ইনিংস। যদিও তা করতে মুমিনুলকে সহ্য করতে হয় নানামাত্রিক কষ্ট।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ১৬১ রান করেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তার এই ইনিংসে ভর করে প্রথম দিন শেষে পাঁচ উইকেটে ৩০৩ রানের পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ। দিনের খেলা শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মুমিনুল বলেছেন, ইনিংসটা খেলতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে তার।

বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান বলেন, ‘আমি এই সেঞ্চুরিতে অনেক শিখতে পেরেছি। আমার যতগুলো সেঞ্চুরি আছে, এর মধ্যে এটা আমার জন্য চমকপ্রদ। কারণ অনেক কষ্ট করে ব্যাটিং করেছি। অন্যান্য সেঞ্চুরির চেয়ে এই সেঞ্চুরিটা আমার জন্য কঠিন ছিলো।’

কষ্টটা কি শুধু ২৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলার পর চেপে বসা পরিস্থিতির কারণে, নাকি অন্য কোনো কারণও ছিলো, তা অবশ্য পরিষ্কার করেননি মুমিনুল। তাতেও অবশ্য তার কষ্টটা অপ্রকাশিত থাকেনি।

টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই তিনি প্রায় নিয়মিত। কিন্তু সীমিত ওভারে তার সেভাবে সুযোগ হয় না। তারপরও তিন বছর পর সর্বশেষ এশিয়া কাপে দুটি ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন তিনি। কিন্তু কোনোটিতেই দুই অংকের ঘরে যেতে পারেননি। এরপর সিলেট টেস্টেও ভরসার মান রাখতে পারেননি তিনি। এ ছাড়া সর্বশেষ আট টেস্ট ইনিংসের ব্যর্থতা তো আছেই। সব মিলিয়ে মুমিনুলের জগত হয়ে উঠছিলো বিভীষিকাময়। সে জগতে আলোর ফল্গুধারা বইয়ে দেয়ার জন্য বড় ইনিংস খেলা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না মুমিনুলের সামনে।

যা করা ছাড়া উপায় নেই, মুমিনুল করলেন ঠিক তাই। ২৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে আরো একবার ব্যাটিং বিপর্যয়ের শঙ্কা যখন বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে হঠাৎ নেমে আসা শীতের মতো অস্বস্তি ছড়াতে শুরু করেছিলো, তখনই তিনি দাঁড়িয়ে যান বুকটান করে। খেলেন ১৬১ রানের অসাধারণ ইনিংস।

এই ইনিংস খেলার পথে মুশফিকুর রহিমের সাথে ২৬৬ রানের জুটি গড়েন মুমিনুল। যা বাংলাদেশকে বসিয়ে দেয় ম্যাচ নিয়ন্ত্রকের আসনে। ১৬১ রানের ইনিংস খেলার পথে ১৯টি চার মারেন এই ব্যাটসম্যান।

আপাতত অন্ধকারের গল্প শেষে মুমিনুলের জগতে নতুন রকম আলোর ঝলকানি। এই সময়টাকে নিশ্চিতভাবেই দীর্ঘ করতে চাইবেন তিনি। এতে যদি আরো কষ্টের বন্ধুর পথ পারি দিতে হয়, মুমিনুল নিশ্চয় পেছনে তাকাবেন না!