নীরব মাশরাফি, বসে নেই আ. লীগ

সবাইকে চমক দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তারকা ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা। ফরম কেনার ১৪ দিন পার হলেও এ বিষয়ে তিন মুখ খোলেননি, এমনকি তার সংসদীয় আসন নড়াইল-২ এ যাননি।

তবে মাশরাফি যে নৌকার টিকিট পাচ্ছেন তা গত ২০ নভেম্বর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার। তাইতো তার পক্ষে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতারা সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে একাট্টা হওয়ার ঘাষণা দিয়েছেন।

গতকাল শনিবার দিনব্যাপী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় নেতারা মাশরাফির সমর্থনে নড়াইল-২ আসন চষে বেড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

সপ্তাহ খানেক আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মুখে মাশরাফির মনোনয়ন নিশ্চিতের ইঙ্গিত পেয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করে দলটি। পাশাপাশি মাশরাফির পক্ষে প্রচারণাও শুরু করে দেয়া হেয়।

এরপর থেকেই চলছে নানা ধরণের প্রচার প্রচারণা। বিশেষ করে লোহাগাড়া ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম এবং ইউনিয়নে উঠান বৈঠক, মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগের নেতা কর্মীরা।

প্রচারণাকে আরও গতিশীল করতে গতকাল সদর ও লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ এই বর্ধিত সভার আয়োজন করে। সেখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেক লীগের নেতারা তাদের বক্তব্যে মাশরাফির পক্ষে সমর্থনের ঘোষণা দেন।

বৈঠকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সুশিল সমাজের কিছু প্রতিনিধিও ছিলেন। সবাই তাদের বক্তব্যে মাশরাফির পাশে থাকার ঘোষণা দেন।

সভায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিকদার আবদুল হান্নান বলেন, ‘দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে সবাইকে নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। মাশরাফি আমাদের চেতনা, একটি প্রেরণা। তার জন্য হলেও সব ভুলতে হবে।’

লোহাগড়া পৌর মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল আলম বলেন, ‘মাশরাফি খেলায় যেমন বিশ্ব রেকর্ড করেছে, ভোটেও বিশ্ব রেকর্ড করবে। এজন্য আমাদের কাজ করতে হবে।’

গত ১১ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর ধানমণ্ডির কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়ন ফরম কেনেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এদিন আর এক ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানেরও মনোনয়ন কেনার কথা জানিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি আগের রাতে ফরম কিনবেন না বলে গণমাধ্যমকে জানান।

মনোনয়ন কেনার বিষয়ে মাশরাফি কোনো কথা না বললেও ১০ নভেম্বর তার বাবা গোলাম মর্তুজা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে মাশরাফি নির্বাচন করবেন।

মাশরাফির প্রতিদ্বন্দ্বী:

এদিকে আওয়ামী লীগের এই হেভিওয়েট প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী কে হচ্ছেন তা নিয়ে নড়াইলব্যাপী ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।

মাশরাফির সঙ্গে লড়তে নড়াইল-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন কিনেছেন বিএনপির সাত নেতা। তাদের মধ্যে আছে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি তবিবুর রহমান মনু জমাদ্দার, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার রিজভী জর্জ, যুগ্ম-সম্পাদক খন্দকার ইজাজুল হাসান বাবু ও শাহরিয়ার আলম, সাবেক এমপি মরহুম শরীফ খসরুজ্জামানের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক শরীফ কাসাফুদ্দোজা কাফী, ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. সেখ মোহাম্মাদ আখতার-উজ-জামান।

এই সাত জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে এগিয়ে আছেন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম।

বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম বলেন, এবারের নির্বাচনে জোট থেকে মনোনয়ন না দিয়ে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়ার প্রত্যাশা করছি। নড়াইলে বিএনপি শক্তিশালী অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও ২০০১ সালে জোট থেকে মনোনয়ন দেয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ’

মনোনয়ন পেলে মাশরাফির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতার বিষয়টি কীভাবে দেখবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখুন মাশরাফি ভালো ক্রিকেটার, আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দিলে তাকে মাশরাফি হিসেবে না নৌকার প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করবো।’