মার খেতে চেয়েছেন বলেই সফল মাহমুদুল্লাহ-সৌম্য

হ্যামিল্টনের সেডন পার্কের উইকেটে সুইং, বাউন্স খুব বেশি ছিল না। নতুন বলে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদির মতো বোলারকে ঝড় তুলতে দেখা যায়নি। কিন্তু তারপরও ব্যর্থতার মিছিলে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে পড়েন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। টেস্টের তৃতীয় দিন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে এক তামিম ইকবালই লড়েছেন।

বাকিরা নেমেছিলেন উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতায়! প্রথম ইনিংসে দেখা গেল সুইং করানোর দিকে মনোযোগ না দিয়ে নিউজিল্যান্ডের পেসার নিল ওয়াগনার বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের শরীর লক্ষ্য করে বোলিং করে যাচ্ছেন। শরীরে বাউন্সার, শট বল করে ব্যাটসম্যানদের খেপিয়ে তোলা বা অসহ্য করার একটা চেষ্টা। এই ফাঁদেই পাঁ দেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা।

ওয়াগনারকে পাঁচ উইকেট উপহার দিয়ে বাংলাদেশ অলআউট ২৩৪ রানেই, তামিম একই ১২৬ রান করার পরও! তামিম পারলেও মুমিনুল হক, মোহাম্মদ মিঠুনরা ব্যর্থ। দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়াগনারের মতো বোল্ট, সাউদিও শরীর লক্ষ্য করে বোলিং করেছেন। তাতেই কুপোকাত মুমিনুল-মিঠুনরা।

কিন্তু আজ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর সৌম্য সরকার দৃশ্যপট পুরো পরিবর্তন করে ছাড়েন। সাউদি-বোল্টদের অসহায় বানিয়ে দুজনেই দেড়শ’ ছুঁই রান করেছেন। সৌম্য করেছেন ১৪৯ রান, মাহমুদুল্লাহ ১৪৬। পঞ্চম উইকেটে দুজনের জুটি ছিল ২৩৫ রানের। কীভাবে সম্ভব হলো এতো শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানো? মাহমুদুল্লাহ বললেন, মার খেয়ে মনযোগ বিচ্ছিন্ন হননি বলেই তারা সাফল্য পেয়েছেন।

নিউজিল্যান্ডের বোলাররা শরীরে বল করে গেছেন। কিন্তু আঘাতে নুইয়ে পরেননি তারা, আঘাত সহ্য করে উইকেটে থাকতে চেয়েছেন। তাতেই সফল।

পুরোটা মাহমুদুল্লাহর মুখেই শুনুন, ‘লক্ষ্য ছিল ছাড় দেব না। দরকার হলে একটু বেশি সময় নেব, কষ্ট করব, গায়ে বল লাগলে লাগুক সমস্যা নেই। এই কষ্টটুকু করতে চেয়েছিলাম। মুশি (মুশফিকুর রহিম) সব সময় বলে, টেস্ট ক্রিকেটে যদি আপনি একটু নিজের গর্ব আর কলিজা নিয়ে খেলতে পারেন তাহলে কাজটা একটু সহজ হয়ে যায়। আপনার প্রথম দিকে একটু কষ্ট করা লাগতে পারে। কিন্তু সেই কষ্টের ফল আপনি একটু পরে পাওয়া শুরু করবেন।’

মাহমুদুল্লাহ ১৪৬ রান করেছিলেন ২২৯ বল খেলে। ২১ চার ৩ ছয়ে। সৌম্য সরকার ছিলেন বেশ আগ্রাসী। রেকর্ড ৯৪ বলে সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর ১৭১ বলে ১৪৯ রানে আউট হয়েছেন সৌম্য। তরুণ ক্রিকেটারের ইনিংসে চারের মার ছিল ২১টি, ছক্কা ৫টি। সৌম্য জানালেন, বোল্ট-সাউদিদের বিপক্ষে এমন রাজসিক সেঞ্চুরি করেও তার মন খারাপ! বাংলাদেশকে হারতে হলো যে।

সৌম্য বলেন, ‘সেঞ্চুরি করে ভালো লাগছে। এটা আমার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। কিন্তু ম্যাচটা তো হারতে হলো। এ জন্য আক্ষেপ থাকবেই। যদি জিততাম বা ড্র করতে পারতাম তাহলে অনুভূতিটা অন্যরকম হতে পারত।’ সৌম্যর ‘অন্যরকম অনুভূতি’টা ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখা যাক।