কী ঘটেছিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়?

এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যুর জের ধরে উত্তাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর। ইতোমধ্যেই ওই ছাত্রের নিহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে আগামিকাল সারাদেশে হরতাল ডাকা হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যায় জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যোগ দিলে সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এরপর কান্দিপাড়া এলাকাবাসী মাদ্রাসা ছাত্রদের পক্ষে সংঘর্ষে যোগ দেয়। সংঘর্ষের সময় মাদ্রাসার সামনে শতাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় ছাত্রলীগের কর্মীরা।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মাদ্রাসাছাত্র এবং ব্যবসায়ী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের পর আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রেল স্টেশন, বাস স্টেশন ও শহরের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়াসহ অন্যান্য মাদ্রাসার ছাত্ররা। এরই মধ্যে ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

সংঘর্ষের পিছনের কারণ

ঠিক কী কারণে মাদ্রাসা ছাত্রদের সাথে ব্যবসায়ী-ছাত্রলীগের এই সংঘর্ষ তা নিয়ে বেশ কানাঘুষা রয়েছে। দেশের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রচার করছে একেক রকম সংবাদ। আবার স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে পাওয়া গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য। কথা কাটাকাটি কিংবা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করাকে সংঘর্ষের পিছনের কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন অনেকে।

দেশের প্রথম সারির দৈনিক প্রথম আলো তাঁদের অনলাইন সংস্করণে এই সংঘর্ষের পিছনে একজন বৃদ্ধ ইজিবাইক চালকের সাথে মাদ্রাসাছাত্রদের বাগবিতণ্ডাকে দায়ী করেছে। পত্রিকাটি লিখেছে, “প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের ভাষ্যমতে, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শহরের জেলা পরিষদ মার্কেট এলাকায় একজন বয়স্ক ইজিবাইকচালকের সঙ্গে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার এক ছাত্রের বাগবিতণ্ডা হয়। মার্কেটের বিজয় টেলিকমের মালিক রনি আহমেদ বিষয়টি সমাধান করতে আসেন। এ সময় ওই ছাত্রের সঙ্গে রনির কথা-কাটাকাটি হয়। ঘটনার জের ধরে মাদ্রাসার একদল ছাত্র সন্ধ্যা সাতটার দিকে মার্কেটে এসে হামলা চালান। তাঁরা বিজয় টেলিকমসহ একাধিক দোকান ভাঙচুর করেন। হামলায় ব্যবসায়ী রনি গুরুতর আহত হন। এরপর ব্যবসায়ীরা এক জোট হয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদের ধাওয়া দেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগ দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ব্যবসায়ী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মাদ্রাসায় আক্রমণ চালান।”

এদিকে দেশের অন্যতম অনলাইন পত্রিকা দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম এবং বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম স্থানীয় লোকজনের সূত্র দিয়ে ইজিবাইক চালক নয়, বরং বিজয় টেলিকমের মালিক ব্যবসায়ী রনি আহমেদকেই সংঘর্ষের জন্য দায়ী করেছে।

দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, “সোমবার বিকেলে শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার এক ছাত্র মোবাইল ফোন কেনার জন্য জেলা পরিষদ মার্কেটের বিজয় টেলিকমে যান। এ সময় মোবাইল ফোনের দাম নিয়ে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে দোকানদার ওই ছাত্রকে থাপ্পড় দেন। এ ঘটনার পর জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসা থেকে অর্ধশত ছাত্র বিজয় টেলিকমে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও মাদ্রাসা ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।”

এদিকে স্থানীয় একটি পত্রিকা ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে পাওয়া গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কারণ। জানা যায়, নাসিরনগর উপজেলায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এডভোকেট ছায়েদুল হকের নির্দেশে দুটি কওমি মাদ্রাসা ও মসজিদ বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে মাদ্রাসার ছাত্ররা গতকাল ও আজ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করেছে। সমাবেশে মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবী করা হলে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ইন্ধনে এই হামলা করা হয়। এখন প্রশাসন, মিডিয়া ও ক্ষমতাশালীদের সাহায্যে এর মোড় অন্যদিকে ঘুরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন প্রধানমন্ত্রী

বিশ্বে আশাবাদী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শীর্ষে

মাদ্রাসাছাত্র নিহতের ঘটনায় আগামিকাল সারাদেশে হরতালের ডাক